শৈশব। কৈশোর। যৌবন। বার্ধক্য। শৈশব থেকে বার্ধক্য–মাঠ মাঠ সময়। সত্তর থেকে, দশ-কুড়ি-ত্রিশ এমনকি চল্লিশ বছর পরমায়ু ফুরিয়ে যাওয়া কিছুই নয়। এই ফুরিয়ে যাওয়া শেষেও অনেক সময় সামনে পড়ে থাকে। তাই বিচলিত হওয়ার কোন কারণ থাকে না।
এমনকি জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় ফুরিয়ে গেলেও অনুভব হয় না–পরমায়ু। হয় না পঞ্চাশেও। মনে হয় অনেক সময় সামনে পড়ে আছে। ততদিনে তারুণ্যের ঝোঁক গেলেও, অস্তমিত যৌবনের আকাশে ছিটেফোঁটা যৌবনের রেশ লেগে থাকে। তখনও ইচ্ছে হয় কাম, ইচ্ছে হয় ভরা যৌবনের কিছু কিছু উন্মাদনা। মনে হয় অনেক সময় সামনে পড়ে আছে। পঞ্চাশেও লোভ-লালসা, চাহিদা, দায়িত্বের ভারে ভুলে যাই মৃত্যু হবে। আমাদের মৃত্যু হবে। মনে হয় আমরা মৃত্যুঞ্জয়ী। মাঠ-মাঠ সময় আছে, মনে হয়। আমরা হয়ে উঠি–আরো লোভী। বাড়াই বোঝ। জড়িয়ে পড়ি অধিক দায়িত্বে। দাম্পত্য, মধ্য বয়স, শরীর ততদিনে হয় বাধাগ্রস্ত। আমরা সেসব এড়িয়ে চলি। মাঠ মাঠ সময় আছে।
বার্ধক্য আসেনি? মধ্য বয়সে, নাকের দু’পাশের মাংসে ঠোন বরাবর গভীর ভজ, এ কিসের আলামত! বার্ধক্য আসেনি? গালের দু’পাশ ভারি। শরীর তার হাল ছেড়ে দিয়েছে। নাইকুণ্ডলীর চারপাশে বালিশের মতো ফুলে ওঠা তলপেট, বার্ধক্য আসেনি এখনও? বয়স পঞ্চাশ তখন। মধ্য বয়স।
বার্ধক্য! ষাটের পর? সত্তর হতে কত বাকি? সত্তরই যদি পরমায়ু হয় তবে মৃত্যুর ক’বছর বাকি? চল্লিশ, পঞ্চাশ! যেমন ছিল কৈশোর! ছিল যৌবনে? যখন দশ, বিশ, ত্রিশ বছর চলে যাওয়ার পরেও মনে হয়েছে, মাঠ মাঠ সময় আছে!
ষাটের পর? সত্তর যদি পরমায়ু হয় তবে মৃত্যুর ক’বছর বাকি? পাটিগণিতের সোজা অঙ্ক তবে ৭০-৬০=১০। সেতো কৈশোরের ঠিক উল্টো। অর্থাৎ ৭০-১০=৬০।
সুতরাং কৈশোরে ত্রিশ বছর চলে গেলে কিছু নয়। কিন্তু ষাটের পর প্রতিটি বছর। মৃত্যুর ঘড়ি আরেকটু স্পষ্ট বাজে। ষাটের পর, মৃত্যুঞ্জয়ী এবার মৃত্যুর ডাক শোনে। ষাটের পর। একেবারেই সময় নেই। মৃত্যু দুয়ারে। মৃত্যু বলছে, ওঠো, ওঠো তৈরি হয়ে নাও। আমেজ, একটা বছর, ষাটের শেষে, অতীতের দশ বছরের সমান। তবুও শোনে না।
এইটুকু জীবন। কোথাও শান্তি নেই। জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ শেষে, মধ্য বয়সে এসে মানুষ যখন শান্তি পাবে, তখনই জ্বলে ওঠে আগুন। পরমায়ু ফুরিয়ে যেতে থাকে। আমাদের তাতে ক্ৰক্ষেপ নেই। আমরা আগুনে জ্বলি জীবনের গলিত লাভায়।
মরে যাই, পরমায়ু শেষে। ক্রাইসিস, মৃত্যুই যার একমাত্র উত্তর।
০৯. মেয়েদের যৌনজীবন
মেয়েদের যৌনজীবন সম্পর্কে এখনো আমাদের অনেক ভুল ধারণা আছে। আমরা ভাবি, সংসারের অন্য অনেক দায়িত্বের মতোই নারীর যৌনজীবনটাও যেন সন্তান উৎপাদন যন্ত্র আর স্বামীর সুখের গর্ত। আবার এও বিশ্বাস করতে হয় যে মেয়েদের যৌনজীবন সাময়িক। যেমন বিয়ের প্রথম কয়েক বছর কিংবা গুটি কতক সন্তান সৃষ্টি। এবং এই পর্ব শেষ হতে না হতেই দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে। শুরু হয় দাম্পত্যে। অরুচি। কেন? মেয়েরা অনেকে নিজেরাও জানে তাদের এই সীমিত জীবনের কথা।
আজ এই আধুনিকতার যুগেও, আমাদের মা-মাসিরা তাদের জীবন গুটিয়ে ফেলে, সন্তান-সন্ততি প্রসব শেষ হতে না হতেই। পঁয়ত্রিশ, চল্লিশ বা তার কিছু কম বয়সেই আমাদের মা-মাসিরা, স্বামীর বিছানা ছেড়ে স্বেচ্ছায় আলাদা বিছানায় ঘুমোতে শুরু করে। তাদের ধারণা, একটা সময়ের পরে সঙ্গম আর করতে নেই। ওতে স্বামীর পৌরুষই নয় আয়ুও নষ্ট হয়। নারী নিজেও নিজেকে গুটিয়ে নেয় ভেবে যে ওসব আর নয়। এখন সময় মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন।
কিন্তু বাস্তব মেনে নিলে, মেয়েদের যৌনজীবন আসলেই সেরকম নয়। শিক্ষার অভাব, কুশিক্ষা এবং অপসংস্কারে অভ্যস্ত মেয়েরা জানে না বা জানতে চায়ও না যে, তাদের শরীরের চাহিদা এবং কামনা-বাসনা অনুশীলন –প্রয়োজনীয় এবং উচিতও। নারীর শরীর অনেকটা বেস্ট সেলার বইয়ের মতো। বেস্ট সেলার। বিয়ের পরপরই প্রথম প্রথম স্বামীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দু’এক বছর গেলেই রুচি চলে যায়। তখন দিশেহারা মেয়েগুলো বুঝে উঠতে পারে না কাজের মেয়ের মশারির তলায় যাকে দেখলো বা গেস্ট হাউজ থেকে ফিরে আসা এই অতি সুখী স্বামীকে নিয়ে ওরা কি করবে!
সেকচুয়ালি উজ্জীবন, সঙ্গম, প্রেম বা প্রেমের চিন্তা একটি মানুষকে প্রস্ফুটিত করে তুলতে পারে উজ্জীবিত রাখার সঙ্গে সঙ্গে। স্বীকার করি আর নাই করি যৌন বিষয়ক চিন্তা, অন্যান্য সুস্থ চিন্তার মতোই, বদ্ধ জলাশয়ে ঝরনার নতুন জলের মতো। প্রাণের সঞ্চরণ হয়, উজ্জীবিত হয়। চেহারায় আসে কমনীয়তা। ঝিমোনের বদলে ঝিকিয়ে ওঠে চোখের তারা। যখন জানে তার জন্য রয়েছে কারো ভালোবাসা। কেউ তাকে ভালোবাসে। দূরে বা কাছে। মেয়েদের মন ও চেহারায় দ্রুত বার্ধক্যের আরেক কারণ আর হারিয়ে যাওয়া হীরে সমেত–যৌন অনুভূতি। যে অনুভূতিমালা উপভোগের চেয়েও মূল্যবান। মানসিক অনুপ্রেরণাও। অনুভবের মাধ্যমে অনুভূতিকে ধরে রাখাও একটি বিরাট কাজ। একটি শিল্প। শিল্পচর্চা। শিল্পবোধ। শিল্পীর অলঙ্করণ। সাধারণ জীবনের প্রতি আগ্রহের বিকাশ ঘটে এভাবেই। প্রেম ও শরীর বিষয়ক ভাবনা, অস্বীকারের উপায় নেই যে, এক ধরনের প্রেম তাড়না, চাঞ্চল্য জাগায়। আগ্রহ ফিরিয়ে আনে। জীবন জাগায়। সুস্থ প্রেম বা কামনা, এসব চিন্তার কোনও বিকল্প নেই।