নারীর জন্মই হয় পরীক্ষা দিতে। কঠিন কঠিন সব পরীক্ষা। পরীক্ষা বলতে, ধৈর্য, সংযম, ধর্ম, সতীত্ব, জরায়ু, মাতৃত্ব। বৈধব্যে নারীর পরীক্ষা, বাকি জীবন তার যোনিকে বিশুদ্ধ রাখা। মজার ব্যাপার পুরুষের বেলায় কিন্তু বেঁধে দেয়া বলতে তেমন জোরালোভাবে কিছুই নেই। এমনকি প্রযোজ্যও নয়। অত্যন্ত স্পষ্ট এমন কিছু বৈষম্য নারীর বেলায় রয়েছে, যা তার মধ্য বয়সের ক্রাইসিসকে আরও ত্বরান্বিত করে। কিছু বাতিল সামাজিক নিয়মকানুন ও প্রথা যা নারীর জীবনকে করে তোলে স্রেফ, ‘নারী ও নরক’।
বংশ রক্ষা করতে বন্ধ্যা নারীর স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অবধারিত। কিন্তু বন্ধ্যা পুরুষের স্ত্রী! বৈজ্ঞানিক সমাজভিত্তিক আধুনিক পাশ্চাত্য নারীদের কথা ভিন্ন। তারা যা করে আমাদের কূপমণ্ডুক সমাজে সম্ভব নয়। তাদের সামাজিক নিয়মকানুনের মধ্যে ধর্ম ও শ্লীলতার ভণ্ডামো নেই বিধায়, সেই সমাজের নারীরা এত উন্নত, স্বাবলম্বী এবং স্বাধীন। বাধ্য এবং অর্পিত বলে তাদের জীবনে কিছু নেই।
আমাদের নারীদের জীবনে সবচেয়ে বড় সঙ্কট সামাজিক সংস্কার। সব রকমের অনুশাসনের মধ্যে থেকে তাদের প্রমাণ করতে হয় যে তারা যে-কোনও অবস্থাতেই ঘুণে ধরা দাম্পত্য, বৈধব্য, সমাজের সকল বাতিল নিয়মের গণ্ডিতে থেকেও নিজের সতীত্ব বজায় রেখেছে। সুতরাং তার কন্যার ভালো বিয়ে হবে। কারণ সে অকাল বিধবা হয়েও দ্বিতীয়বার বিয়ে করেনি, পরকীয়া করেনি। পেট ফোলেনি তার। কেউ তাকে ন’মাসের জন্যে চোখের আড়াল হতে দেখেনি। আমাদের অকাল বিধবাদের রক্ষা করতে হয় স্বামীর বংশের সুনাম। পুরুষের বেলায় অনেক কিছুই ভিন্ন। মাস না যেতেই বিপত্নীক পুরুষের বিয়ে হবে। হ-বে-ই। তার ছেলেমেয়েদের বিয়ে, সমাজের প্রশ্ন নয়। দ্বিতীয় স্ত্রী কোনও সমস্যা নয়। পুরুষের দ্বিতীয় নারী গ্রহণ বংশ মর্যাদার জন্যে, হুমকির নয়। সুতরাং সেসব বৈষম্য ও সঙ্কট বিবেচনা করে একজন বিধবা মধ্য বয়স্ক নারীকে করতে হয় বিকল্প জীবনের সন্ধান। গোপন জীবন এবং পরিরণ ইত্যাদি।
একথা অজানা নয় যে, এই মেয়েদের সবরকম অনুভূতিই আছে। তাদের বুদ্ধি আছে। সুতরাং বিধবাদের অধিকাংশই মেয়ের বিয়ে হবে না বলে দ্বিতীয় বিয়ে না করলেও, লুকিয়ে লুকিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য যৌনজীবন কোনও না কোনওভাবে উপভোগ করে। সোজা কথা যোনি থাকলে তার ক্রাইসিসও আছে। থাকাই স্বাভাবিক এবং তা নিঃসন্দেহে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
অনেক বিধবাই আমার আশপাশে রয়েছেন যারা আমার আন্তরিকতা দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের গোপন জীবনের গল্প নির্দ্বিধায় বলে গেছে। বাইরে ওরা যতই নিষ্পাপ থাকুক, ভেতরে ভেতরে ওদের গোপন জীবন কি, ওরাই ভালো জানে ও বোঝে। এবং লোকচক্ষুর আড়ালে ওরা তা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পালন করে যায়।
নারী ও পুরুষের, দোহের যৌনজীবনেই–জীবনের বিভিন্ন সময়ে কিছু না কিছু স্বাভাবিক সঙ্কট থাকে। তবে মিডলাইফের সঙ্কটটা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এই বয়সে, নারী ও পুরুষের যদি অপরপক্ষ চলে যায় বা মারা যায়, তখন যে ক্রাইসিস হয়–সেই ভুক্তভোগীদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা আমাদের ভাবার সময় কই? আমরা ভীষণ ব্যস্ত, নিজেকে নিয়ে। কার জন্যে কার সময় আছে? পৃথিবীতে কে কার!
বিপত্নীক ষাটোর্ধ্ব পুরুষের বেলায় তা আরো মজার। তারাও বিয়ে করে। শিথিল লিঙ্গ বা স্বল্প বীর্য ওদের সমস্যা নয়। ওদের জন্য ওরাল সেক্স একটা সুন্দর বিকল্প ব্যবস্থা। ৩৫-৪০-৪৫-এ বিধবা নারী যা ভাবতে পারে না, ৬৫তেও বিপত্নীক পুরুষ তা পারে। আর মধ্য বয়সের যে-কোন বিপত্নীক পুরুষও! বিয়ে করবেই। সমাজই দেবে। মেয়ের বাবা এসে ঘুরঘুর করবে। কিন্তু একথা ক’টা বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারীর বেলায় সত্য!
মধ্য বা বৃদ্ধ বয়সে দ্বিতীয় বিয়ের মানে কি শুধুই কাম? স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর জন্যে একজন সঙ্গীর বিকল্প কি আছে? বনে-জঙ্গলের পশুপাখিরাও দল বেঁধে থাকে। আর আমরা তো রক্তমাংসের। একজন মানুষ পাশে না হলে, মানুষ সুস্থভাবে বাঁচে কি করে! বাঁচতে পারে না। একটা মানসিক আদানপ্রদান, সর্বাগ্রে। নিঃসঙ্গতা তৈরি করে, হতাশা। হতাশা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীনতা। সেখান থেকে আত্মহত্যা। মধ্য এবং বৃদ্ধ বয়স, যে-কোনও বয়সের নারী ও পুরুষেরই উচিত, পুনর্বিবাহ করে নিজেকে অবিচার থেকে মুক্ত করা। কিন্তু আমাদের এই ঘুণে ধরা সমাজ ও রঙ্গভঙ্গ ধর্মীয় কালচার এখনও এই মানসিকতায় পৌঁছুতে পারলো না। বিশেষ করে নারীর বেলায় তো নয়ই। নারীর বেলায় ১৪৪ ধারা মুখে চুনকালি।
আরবের মেয়ে বিয়ন্ড দ্য ভেইল
আরবের মেয়েদের জীবনে ধর্ম ও পুরুষের নিষ্ঠুরতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তার একটি চিত্র পাওয়া যায় ‘বিয়ন্ড দ্য ভেইল’ বইটিতে। বইটির লেখক ড. স্যামুয়েল গ্রে। যেহেতু ওদের জন্যে পরপুরুষের কোনও রকম ছায়া ও ছোঁয়া নিষিদ্ধ, সেহেতু ওরা গোপনে যা করে তা আরো বীভৎস। নিষিদ্ধ বলেই ওরা যায় আরো গভীরে। অধিক নরকে। ড. গ্রের বইটিতে চার দেয়ালের ভেতরে ওদের যৌনজীবন আপন চাচা, মামা, খালা, মাসি, ভাগ্নী, ভাইপো, সবার সঙ্গে সবার, কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবার অবাধ যৌনাচার। যা ঘরে ঘরে বেশ্যালয়ের তুল্য।