মোসলেম আর দেরি করল না। জানে কিছুক্ষণের ভিতর ওই পাশে আসর বসাবে ইব্রাহিম শেখ। আর নয় সুকুমারও আসতে পারে। তার এই জায়গায় বানর নাচাতে আজগরেরও আসার সময় হয়ে গেল। ফলে, তাকে শুরু করতে হয়। মোসলেম উদ্দিন, ‘আসেন আসেন আসেন-’ বলে একটু গলা তুলে হাঁক দিল। ছোট্ট ডুগডুগিটা বাজাল। যদিও এমনিতে মোসলেম কখনওই এইভাবে গলা তোলে না। তার আসর আসলেই একটু নীচু গলায়। কিছুক্ষণ পরেই তাই হবে, মানুষ জমলে মোসলেমের গলাটা নীচু হয়ে আসবে। কিন্তু জমার আগে তো তাতে হাঁক দিতেই হবে। তাছাড়া সে জানে, সে কী বেচে। সে তো খেলা দেখায় না। গাছ-গাছড়ার গুণাগুণ বর্ণনা করে না। ধ্বজভঙ্গ একশিরা স্বপ্ন দোষের তাবিজ দেয় না। পির খানজাহানের দরগার মাদুলি বিক্রি করে না। দড়ি কি ছুরির খেলা দেখায় না। সাপে কাটলে কীভাবে মানুষকে বাঁচাতে হবে তাও শেখায় না। ফলে, এসে বসলেই তাকে ঘিরে মানুষ আসবে তাই-বা সে ভাবে কী করে। মোসলেমের কথার এমন কী গুণ যে নীচু স্বরে কথা আর টপাটপ তার সব পাউডারের প্যাকেট বিক্রি হয়ে যাবে?
কিন্তু মোসলেম জানুক কি না জানুক, তার কথায় কিছু গুণ তো আছেই। আর পাঁচ কি দশ জন ক্যানভাসারের মতন সে নিশ্চয়ই না। মোসলেম হয়তো তা জানে না, কিন্তু অন্য মানুষ তো তাকেই দেখেই বোঝে, মোসলেমের সঙ্গে তাদের তফাক্টা কোথায়। আছে এই কোর্ট চত্বরে এইরকম সাদা ইস্তিরি করা কাপড় পরা আর কোনও মানুষ, যার গায়ে জামাটা দেখলেই মনে হবে যেন ভদ্দরলোক! কেউ যদি না বলে, তাহলে বোঝার কোনও উপায় আছে, এই লোকটি কোর্টের সামনের এক ক্যানভাসার।
মোসলেম আবার ডাক দিল। না বলা ভালো, একটু গলা তুলে হাঁক দিল। আজ তার কী হয়েছে কে জানে। সেই নাম মনে না-থাকা লোকটির মতন গলায় বলল, ‘আসেন এই রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে, কিছু শুভ্রতার খোঁজে এইখানে এই কোর্ট চত্বরে। আমার কাছে।’
মোসলেমের সামনে, ডাইনে-বামে একজন দুইজন দাঁড়িয়ে গেল। মোসলেম জানে এই বৃত্ত কী করে বড়ো করতে হয়!