কি বল তো? কিরীটী বিকাশের মুখের দিকে তাকাল।
ওটা যদি ইংরাজি ‘3’ না হয়ে বাংলার ‘ও’ হয়।
না।
কি না?
ওটা ইংরাজির 3 ই।
কি করে স্থিরনিশ্চয় হলেন?
একটা বিজ্ঞাপন সংবাদপত্রে তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কিনা জানি না। বিকাশ–
বিজ্ঞাপন।
হ্যাঁ, বিজ্ঞাপনটা কিছুদিন থেকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে—
কি বিজ্ঞাপন বলুন তো?
কিরীটী তখন দৈনিক প্রত্যহে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন—যেটা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এবং যে বিজ্ঞাপন সম্পর্কে কিছুক্ষণ পূর্বে তার কৃষ্ণার সঙ্গে আলোচনা চলছিল সেটা সম্পর্কে বললে।
সত্যি? দেখি বিজ্ঞাপনটা।
কিরীটী কাগজটা এগিয়ে দিল।
বিকাশ বিজ্ঞাপনটা বারকয়েক পড়ল। তারপর বললে, হুঁ। বিজ্ঞাপনটা সত্যিই বিচিত্র তো! তাহলে–
ঠিক তাই বিকাশ, পর পর তিনটি হত্যাকাণ্ডই বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এক বা একাধিক ব্যক্তির দ্বারা যদি সংঘটিত হয়েও থাকে, তাহলেও pre-planned premeditated, পূর্বপরিকল্পিত বলেই মনে হয়–
তা তো বুঝলাম, কিন্তু—
কি বল?
উদ্দেশ্য একটা নিশ্চয়ই আছে!
তা আছে বৈকি। হত্যাকারী কিছুটা maniac হলেও, হত্যাগুলোর পেছনে তার একটা উদ্দেশ্য সুনিশ্চিত আছে। হয়ত প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধ—কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পূর্বে তোমাকে কতকগুলো ব্যাপারে ভাল করে অনুসন্ধান নিতে হবে।
কিন্তু কি অনুসন্ধান করি বলুন তো? ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে আর কেউ ছিল বলেই তো এখনও জানা যায়নি। পেছনের গ্যারাজে যে ব্যাটা দারোয়ান ছিল, সে ব্যাটা তো সিদ্ধির নেশায় সে রাত্রে ঝুঁদ হয়েছিল।
আচ্ছা সংবাদপত্রে যে নিউজ বের হয়েছে–সেদিন রাত আটটা নাগাদ কার কাছ থেকে একটা ফোন-কল পেয়ে শশধর সরকার বার হয়ে যান বাড়ি থেকে–
হ্যাঁ, তার স্ত্রী তো বলতে পারলেন না, ফোন-কলটা কোথা থেকে এসেছিল! কেবল বললেন, তাঁর স্বামী নাকি তাকে বলেছিলেন ফোন-কলটা জরুরী।
জরুরী তো বটেই—একেবারে মৃত্যু-পরোয়ানা। তাই বলছিলাম, সেটার কোন ট্রেস করা যায় কিনা দেখ।
কেমন করে সম্ভব তা? অটোমেটিক ফোন–
তবু দেখ, চেষ্টা করলে হয়ত জানতেও পার। তারপর ওই বিনয়ভূষণ—
সেখানেও একটা ধোঁয়া।
তাই বুঝি?
হ্যাঁ। ওই বিনয়ভূষণকে শশধরবাবুর স্ত্রী জানতেন না। তবে একটা সংবাদ পেয়েছি, দিন পনেরো আগে দোকানের চাকরি থেকে নাকিবিনয়কে বরখাস্ত করেছিলেন শশধর সরকার।
কি করে জানলে?
দোকানের একজন কর্মচারী যতীন সমাদ্দারই বললে এনকোয়ারির সময়। যে ফোন করেছিল শশধরের স্ত্রী সুনয়না দেবীকে সে বিনয়ভূষণের নাম করে ওই সব বলে। তাছাড়া আরও একটা কথা আছে, সে-রাত্রে তো নাকি বিনয়ভূষণ কলকাতাতেই ছিল না।
তবে কোথায় ছিল?
অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, বিকাশ বললে, বিনয়ভূষণ দিন দশেক আগে। থাকতেই তার বৌবাজারের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে শ্রীরামপুর চলে গিয়েছিল সেখানে একটা দোকানে চাকরি পেয়ে। সে-রাত্রে শ্রীরামপুরেই ছিল। ওই দিন সকালে কলকাতায় আসে কি একটা কাজে।
কিরীটী বললে, তা বিনয়ভূষণের চাকরি গিয়েছিল কেন, জানতে পেরেছ কিছু?
হ্যাঁ, চুরির ব্যাপারে—
চুরি?
হ্যাঁ। কিছু দামী জুয়েল্স্ চুরির ব্যাপারের সন্দেহে তার চাকরি যায়।
আচ্ছা শশধর সরকারের ফ্যামিলি মেম্বারস কজন? কে কে আছে বাড়িতে?
নিঃসন্তান ছিলেন উনি। স্ত্রী এবং একটি পোয্য ভাইপো রাজীব সরকার—আর চাকরবাকর, দারোয়ান, ড্রাইভার।
রাজীব সরকার কি করে?
সেও তার কাকার সঙ্গে দোকানেই বসত। এখন বুঝতেই পারছেন ব্যাপারটা যেমন ধোঁয়াটে তেমনি রীতিমত রহস্যজনক। আমি তো মিঃ রায়, কোন আলোর বিন্দুও কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।
সুনয়না দেবী ও রাজীব সরকারকে ভাল ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলে?
করেছি।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও কিছু জানতে পারা গেল না?
না। তারা বললেন, শশধরবাবু নাকি অত্যন্ত অমায়িক ও সৎ চরিত্রের লোক ছিলেন। কখনও কারও সাতে বা পাঁচে থাকতেন না। তার কোন শত্রু ছিল না। ওই ভাবে তার মৃত্যুটা তাদের কাছে কল্পনাতীত।
আচ্ছা দোকানটা কত দিনের? কিরীটী প্রশ্ন করে।
শুনলাম দোকানটা নাকি উনিই করেছিলেন—বছর পাঁচেক হল। ছোট দোকন থেকে পাঁচ বছরে বিরাট কারবার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ওটা পৈতৃক সম্পত্তি নয় তাহলে? পাঁচ বছরের ঐশ্বর্য?
হ্যাঁ। ওঁর বাপ রামজীবন সরকার সামান্য একজন কারিগর ছিলেন। শশধরও তাই ছিলেন। বাপ বছর আষ্টেক আগে মারা যান। বছর পাঁচেক আগে কাজ ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন বসেছিলেন, তারপর ছোট্ট একটা দোকান খোলেন। তারপর ধীরে ধীরে
নিজের চেষ্টা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমে সরকার জুয়েলারির আবির্ভাব—তাই তো?
হ্যাঁ।
তা শশধর কোথায় চাকরি করত, কোন্ দোকানে-কিছু জানা গেছে—
সে খবরও নিয়েছি, বিরাট জুয়েলার্স বি. কে. সরকার অ্যান্ড সন্সের নামটা আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে
মনে থাকবে না কেন? সে তো প্রায় বছর পাঁচেক আগে কি সব আভ্যন্তরীণ কারণে প্রতিষ্ঠানটা বন্ধ হয়ে যায়।
হ্যাঁ, সেখানেই চাকরি করতেন শশধর সরকার এক সময়।
কিরীটী কিছুক্ষণ যেন কি ভাবল। তারপর বিকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে বললে, একটা খোঁজ নিতে পার বিকাশ–
কি বলুন তো?
বি. কে. সরকার অ্যান্ড সন্সের মালিক বা মালিকদের মধ্যে কেউ আছেন কিনা এবং যদি থাকেন তো বর্তমানে কে কোথায় আছেন, কি করছেন—