কি পাগলের মত যা-তা বলছেন!
পাগল কিনা সেটা আদালতেই প্রমাণ হবে।
বেশ বেশ, তাই না হয় প্রমাণ করবেন। আপনারা আমার অতিথি-বসুন, চা খান। সঞ্চারিণী, বলে উঁচু গলায় ডাক দিল হীরেন সরকার।
সঞ্চারিণী এসে ঘরে ঢুকল।
এঁদের চায়ের ব্যবস্থা কর, এঁরা আমার অতিথি।
এখানে চা-পান করতে আমরা আসিনি হীরেনবাবু। উঠুন, আমাদের সঙ্গে এখুনি আপনাকে যেতে হবে। কিরীটী শান্ত কঠিন গলায় বললে।
যাব যাব, ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? যেখানে খুশি নিয়ে যেতে চান আমাকে যাব—My mission is over-যে চারজন শয়তান একদিন ষড়যন্ত্র করে আমদের পথে বসিয়েছিল, তাদের প্রত্যেককে কীটের মত শ্বাসরোধ করে ধ্বংস করেছি।
বিকাশ সেন অবাক হয়ে চেয়েছিল হীরেন সরকারের মুখের দিকে। অবাক বিস্ময়েই শুনছিল যে ওর প্রতিটি কথা।
লোকটি শয়তান, না বদ্ধ উন্মাদ!
হীরেন সরকার অতঃপর উঠে দাঁড়াল। রোগা, পাকানো চেহারা।
কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ। পঙ্গুত্ব কোথা তার শরীরে নেই।
এখন বুঝতে পারছি, সেদিন আপনার বুদ্ধির দৌড়টা যাচাই করবার জন্য আপনার সামনে শিবানন্দ পরিচয়ে না গেলেই হয়ত ভাল করতাম কিরীটীবাবু!
সবাই চুপ, কারও মুখে কোন কথা নেই।
হীরন সরকার বলতে থাকে, আপনার কীর্তিকলাপ ও অত্যাশ্চর্য শক্তির সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন পরিচিত মিস্টার রায়। চাক্ষুষ ও সাক্ষাৎ আমাদের মধ্যে পরস্পর-পরিচয়ের সৌভাগ্য না ঘটলেও, আপনার কথা শুনে শুনে মনে হত কি জানেন?
কি?
পড়তেন আপনি মুখোমুখি সেরকম একজনের পাল্লায়, বোঝা যেত সত্যিকারের আপনার ক্ষুরধারটা—যাচাই হয়ে যেত হাতে হাতে ব্যাপারটা। আর তাই ওই চার-চার বিশ্বাসঘাতক শয়তানের ধ্বংসযজ্ঞে নেমে পরপর তিনজনকে হত্যা করবার পরও যখন দেখলাম আপনার টনক নড়ল না, আর স্থির থাকতে পারলাম না।
নিজেই গেলেন আমার কাছে?
হ্যাঁ।
এবং সেটাই হয়ে দাঁড়াল আপনার জীবনের সর্বাপেক্ষা মারাত্মক ভুল।
তা হয়ত হয়েছে। তবু জানি, আপনি ছাড়া বোধ হয় দুনিয়ায় কারও সাধ্য ছিল আমাকে ধরে। ধরা পড়েছি বলে আমার কোনও দুঃখ নেই মিস্টার রায়, আমার প্রতিজ্ঞা আমি পূর্ণ করেছি। I have done my duty!
কিন্তু এ কাজ কেন করতে গেলেন, হীরেনবাবু? কেন যেন কিরীটীর মনের মধ্যে হীরেনের প্রতি একটা মমতা জাগে।
কেন করতে গেলাম!
হ্যাঁ, আইন ছিল দেশে, আইনের আশ্রয় নিলেই তো পারতেন।
কিছু হত না তাতে করে। আইনের সাধ্য ছিল না ওই পাষণ্ডদের কেশ স্পর্শ করে। ওই ধূর্ত শয়তান শৃগালের দলকে ধরা যেত না হাতেনাতে। তাই ওই পথটাই আমি বেছে নিয়েছিলাম।
তারপর একটু কেশে বললে হীরেন সরকার, কিন্তু আপনি সত্যি বলুন তো, আমাকে সন্দেহ করলেন কি করে?
যে মুহূর্তে জানতে পেরেছিলাম, ওরা চারজনই আপনাদের পূর্বতন কর্মচারী ছিল এবং ওদেরই জন্য আপনাদের ব্যবসায় ভরাড়ুবি হয়েছিল তখনি–
কি?
ওদের হত্যার মোটিভটা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল। তবে—
তবে?
মোটিভটা খুঁজে পেলেও তখনও স্থিরনিশ্চিত হতে পারিনি, আপনাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে কে এ কাজ করেছে! কিন্তু আপনার আমার গৃহে আসা ও তারপর আপনার হত্যাকাণ্ড শুরু হওয়ার আট মাস আগে থাকতে পঙ্গু বনে যাবার ইতিহাস, আপনার অভিনয়-ক্ষমতা সব মিলিয়ে আপনার উপরেই আমার সন্দেহটা পড়ে।
কেবল কি তাই?
আরও আছে।
কি?
সংবাদপত্র প্রত্যহে প্রকাশিত ধারাবাহিক বিজ্ঞাপনটাও আমার চোখের দৃষ্টি খুলে দিয়েছিল। আর শেষ ও মোক্ষম প্রমাণ–
কি?
পকেট থেকে কিরীটী সোনার একটা সিগারেট কেস বের করল।
এই সোনার সিগারেট কেসটা! এটা শিবানন্দর দোকানের শো-কেসের তলায় পড়ে থাকতে দেখে সবার অলক্ষ্যে তুলে নিতেই আর মনে সন্দেহের অবকাশ মাত্রও রইল না আমার।—চিনতে পারছেন এটা?
হীরেন সরকার হেসে হাত বাড়ল—নিশ্চয়ই। দিন ওটা।
উঁহু, এটা আদালতের property এখন—
দেবেন না?
না।