দিন-দুই বাদে ফিরবার পথে ট্রেনের কামরায় কিরীটী বলছিল, হিরণ্ময়ী দেবীর কথাই ঘুরে-ফিরে মনে পড়ছে সুব্রত। একমাত্র মেয়ে সীতার মৃত্যুটা সত্যিই বড় মর্মান্তিক হয়েছে তাঁর কাছে, ঘুণাক্ষরেও তিনি সন্দেহ করেননি কখনো যে সীতা শতদলকে ভালবাসে। এবং সেটাই যখন প্রকাশ পেল, তাঁর মুখের দিকে তখন যদি তুমি তাকাতে দেখতে কি সর্বস্ব হারানোর বেদনাই না তাঁর মুখের ওপরে ফুটে উঠেছিল। একেই বলে মর্মান্তিক বিয়োগান্ত ব্যাপার। যে সম্পত্তির লোভে তিনি নিরালা আঁকড়ে পড়েছিলেন সে সম্পত্তিও তাঁর হস্তগত হল না, ঐ সঙ্গে হারাতে হল মর্মান্তিক দুঃখ ও লজ্জার মধ্যে দিয়ে একমাত্র কন্যাকেও। শতদলও শুন্য হাতে চরম দণ্ডের জন্য অপেক্ষা করছে, হিরণ্ময়ীকেও ফিরে যেতে হল শূন্য হাতে। সীতাকে শূন্য হাতে বিদায় নিতে হল, কবিতা ফিরে গেল শুন্য হাতে। রণধীর চৌধুরীর এত সাধের নিরালা-তাও পড়ে রইল শূন্য, কুমারেশ বা রাণু, কোনদিনই হয়তো ওখানে পা দেবে না। হিরণ্ময়ী ও হরবিলাস তো দেবেনই না।
কথা শেষ করে কিরীটী পাইপটা মুখে তুলে নিল। ট্রেন ছুটে চলেছে কলকাতা অভিমুখে।