আমি বুঝলাম সকল রহস্যের মেঘনাদ কে! সীতাকে হত্যা করবার পূর্বমুহূর্তে নিজের লাল রঙের শালটা সীতার গায়ে দিয়ে ব্যাপারটা শতদল এমন করে সাজাতে চেয়েছিল, যাতে করে লোকের ধারণা হয় আসলে হত্যাকারী শতদলকেই হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু আলোয়ানের ব্যাপারে ভুল করে সীতাকে হত্যা করে ফেলেছে! সীতার হত্যা একটা pure accident ভিন্ন কিছুই নয়! বলতে বলতে কিরীটী থামল।
হাতের পাইপটা কখন একসময় নিবে গিয়েছিল। সেটায় আবার অগ্নিসংযোগ করে কিরীটী তার অসমাপ্ত কাহিনী শুরু করলে।
এবারে আমি আসব চতুর্থ অধ্যায়ে। রাণু দেবীর সহাধ্যায়ী কবিতা দেবী, রাণুদের কলকাতার বাসাতেই শতদলের সঙ্গে কবিতা দেবীর পরিচয় হয়। এবং কবিতা দেবীর মনে সেই পরিচয়টা গাঢ় হয়ে উঠে ভালবাসায় পরিণত হয়। প্রথম victim সীতা ও দ্বিতীয় victim হলেন কবিতা দেবী।
কবিতা দেবীর দিকে তাকালাম। মাথাটা বুকের ওপর ঝুলে পড়েছে তাঁর।
কিরীটী বলে চলে, টের পেলাম আমি ব্যাপারটা একটি প্রবাল পাথর থেকে।
হিরণ্ময়ী দেবী এবার কথা বললেন, সেদিন আপনাকে আমি বলিনি মিঃ রায়, একই ধরনের প্রবাল পাথর দেওয়া দুটি আংটি ছিল বাবার! একটি দাদা নিয়েছিল, অন্যটি আমি নিয়েছিলাম। আমার আংটিটা আমার স্বামীকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম—আর দ্বিতীয়টি রণধীর চৌধুরীর মৃত্যুর পর শতদলের হাতে যায়। পরে আমার মনে পড়ে, শতদলের হাতে প্রথম দিন আংটিটা দেখেছিলাম। এবং সেটাই বোধ হয় শতদল কবিতা দেবীকে দেয়। কেমন তাই না কবিতা দেবী?
কবিতা গুহ মৃদুভাবে ঘাড় নাড়লেন।
এবং সেই জন্যই পাথরটা কবিতা দেবীর বাইরের ঘরে কুড়িয়ে পাওয়ায় ও পরে কবিতা দেবীর আংটির পাথরটা হারানোর সংবাদে কবিতা দেবী যখন আংটিটা এনে আমাকে দেখালেন, চকিতে আমার সব কথা মনে পড়ে গেল। ও সেই সঙ্গে সঙ্গে কবিতা দেবী ও শতদলের relationটা চোখের উপরে আমার স্পষ্ট হয়ে উঠল। বুঝলাম কবিতা দেবীও শতদলের ফাঁদে পা দিয়ে মজেছেন। ডন জুয়ান শতদল! যাক, আবার পূর্বের কথায় ফিরে যাই। সীতাকে হত্যা করবার পরই আমি সাবধান হলাম। শতদলকে আর free রাখতে সাহস হল না। নার্সিং হোমে নিয়ে চোখে চোখে রাখলাম—so that he might not play any more dirty tricks। কিন্তু এবারে কবিতা দেবী হলেন তার সহায়। নার্সিং হোমের ব্যাপারগুলো সব কবিতা দেবীর সাহায্যেই ঘটে। কবিতা দেবীর বাড়িতে সন্দেশ ও ফুল নার্সিং হোমে পাঠাবার জন্য কেউ সংবাদ দেয়নি তাঁকে। A made-up story কবিতা দেবীর! শতদলের পরামর্শমতই কবিতা দেবী যা করবার করেছেন। এদিকে শতদল নার্সিং হোমে বন্দী থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে উঠেছিল, কারণ কুমারেশ একবার যখন ছাড়া পেয়েছে সমস্ত planটাই তার বানচাল হয়ে যেতে পারে যে-কোন মুহূর্তে। সে ভয়ও ছিল, তাই ভুখনার সাহায্যে ফটোটা চুরি করে রাতারাতি এখান হতে সরে পড়বার মতলব ছিল! নার্সিং হোমের জানালাপথে ধুতি ঝুলিয়ে তার সাহায্যে নেমে গিয়ে নিরালায় যায়। নার্স দুধ নিয়ে যখন তার কেবিনে যায় শতদল আলো নিবিয়ে তখন ঘুমের ভান করেছে। এবং নার্স চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই কেবিন ত্যাগ করে। কিন্তু ধর্মের কল নড়ে উঠল বাতাসে ভাগ্যচক্রে সব গেল ভেস্তে, বাধ্য হয়েই তাকে তাই ছবিটা ফেলে কেবিনে ফিরে আসতে হল। এবং আবার করতে হল অভিনয়—তার উপরে আর-একবার attempt হয়েছে। কিন্তু তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। রঙের খেলার আগেই ড্রপ পড়েছে!
ঘোষাল সাহেব প্রশ্ন করলেন, কিন্তু শতদলবাবুই যে সব কিছুর মূলে জানলেন কী করে মিঃ রায় সর্বপ্রথম?
বললাম তো। সীতা নিহত হবার পরই। তার আগে পর্যন্তও সন্দেহটা দৃঢ় হতে পারেনি। ভাসা-ভাসা অবস্থাতেই মনের মধ্যে ছিল। সে রাত্রে সর্বক্ষণই আমার দুজনের ওপরে নজর ছিল, একজন সীতা ও অন্যজন শতদল। সীতা ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার পরই কিছুক্ষণ বাদে শতদলকে আমি নীচে যেতে দেখেছি এবং ঠিক তার পশ্চাতেই দেখেছিলাম নীচে যেতে কবিতা দেবীকে। কবিতা দেবীর চিৎকারেই আমাদের সকলের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়, সীতার হত্যার ব্যাপারটা কবিতা দেবী সবটা না জানলেও যে অনেক কিছুই জানেন, সেটা তাঁর মুখের দিকে তাকিয়েই সে রাত্রে বুঝেছিলাম। তখনি মনে হয় কবিতা দেবী কাউকে shield করছেন deliberately! কিন্তু কাকে? হঠাৎ চকিতে একটা কথা ঐ সঙ্গে মনে হয়, কবিতা দেবী শতদলকেই shield করছেন না তো! ভাবতে গিয়ে দেখলাম সেটাই সম্ভব। সেটাই স্বাভাবিক। আর তখন সন্দেহ রইল না। বুঝলাম এ খেলা শতদলেরই। ইতিমধ্যে রণধীরের চিঠির কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। তাই শতদলকে দোষী বুঝতে পেরেও, strong একটা motive খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কবিতা দেবীর বাড়ি থেকে ফিরবার পথে আংটির পাথর-রহস্যটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় ব্যাপারটা আর একবার গোড়া থেকে নতুন করে ভাবতে গিয়ে মনে পড়ল চিঠিটার কথা। হোটেলে ফিরেই চিঠিটা নিয়ে বসলাম। ঘণ্টা দুইয়ের মধ্যেই সব স্পষ্ট হয়ে গেল, দুয়ে দুয়ে চার অঙ্ক মিলে গেল। তখনি বুঝলাম, গত রাত্রে ছবিটা চুরি করবার চেষ্টা করে যখন হত্যাকারী সফল হয়নি, আর একবার সে সম্ভবত ঐ রাত্রেই attempt নেবে। সঙ্গে সঙ্গে নিরালায় গিয়ে হানা দিলাম এবং অনুমান যে আমার মিথ্যা হয়নি তার প্রমাণও পাওয়া গেল হাতে হাতে। কিরীটী তার কথা শেষ করল।