তাই বুঝি?
হ্যাঁ। জোসেফ তার স্ত্রীকে তার বার্থ-ডেতে রেয়ার মুক্তোগুলো দিয়ে মালা করে দিয়েছিল, তার মধ্যস্থলে লকেটের মত ছিল ঐ মুক্তোটি-রু কুইন মালা চোর বিশেষ করে ঐ রুকুইনের লোভেই মালাটি চুরি করেছিল।
কে সে?
কালো পাখী রঘুনাথন। তাহলে সেই রঘুনাথনই— হ্যাঁ, তবে শেষ পর্যন্ত সে সেটি হজম করতে পারবে না। কেন?
কারণ সে এখনও বুঝতে পারেনি যে তার প্রেমই তার গলায় ফাঁস হয়ে এঁটে বসতে চলেছে।
প্রেম?
হ্যাঁ।
তাহলে এর মধ্যে নারীও আছে?
আছে বৈকি। আর নারী একজন ছিল বলেই শেষ পর্যন্ত আমরা হয়ত মুক্তোগুলো উদ্ধার করতে পারব।
কিন্তু আপনি যে বলেছিলেন, ঐ মুক্তোর মালার সঙ্গে ইউসুফ মিঞার হত্যার ব্যাপারটা জড়িয়ে আছে।
মিথ্যে আমি বলিনি লাহিড়ী সাহেব, ঠিকই বলেছি। কালো পাখীটাই ইউসুফের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে তার সামনে গিয়ে হাজির হয়েছিল।
কালো পাখী।
সেই ময়নাটার কথা ভুলে গেলেন?
না ভুলিনি, কিন্তু সেই ময়নার সঙ্গে ইউসুফের মৃত্যুর কী সম্পর্ক তা তো বুঝতে পারছি না! লাহিড়ী ববেন।
মুক্তোর মালাটা রঘুনাথন চুরি করে মালা থেকে সম্ভবত মুক্তোগুলো খুলে ফেলে।
কেন?
কিরীটী বলে, তার কারণ মালার সব মুক্তোগুলোই সমান মূল্যের ছিল না। তার মধ্যে যে মুক্তোগুলোর দাম বেশি, সেগুলো ঐ রু কুইনের সঙ্গে ময়নার খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে রঘুনাথন সম্ভবত ময়নাকে খাইয়ে দেয়।
বলেন কি?
আমার অনুমান তাই।
তারপর?
রঘুনাথন দলে নিশ্চয়ই একা ছিল না—আর ঐ ধরনের চুরির ব্যাপারে সাধারণতঃ একাধিক লোকই থাকে। সেই কারণেই বিশেষ করে রঘুনাথনকে হয়ত ঐ বিশেষ পন্থাটা নিতে হয়েছিল, তার ভাগিদারের হাত থেকে কিছু দামী মুক্তো অন্ততঃ সরিয়ে ফেলবার জন্য। তবে নিঃসন্দেহে যে পদ্ধতিটা সে মুক্তোগুলো সরিয়ে ফেলবার জন্য গ্রহণ করেছিল সেটা সত্যিই অভিনব তো বটেই, সেই সঙ্গে রঘুনাথনের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিরও পরিচয় তা থেকে আমরা পাই।
লাহিড়ী প্রশ্ন করেন ঐ সময়, কিন্তু ওই ভাবেই যে রঘুনাথন কিছু দামী মুক্তো সরিয়েছিল, আপনি অনুমান করলেন কি করে?
অনুমান করেছি দুটো ঘটনা থেকে।
কোন্ দুটো ঘটনা?
প্রথম ঘটনাটা হচ্ছে, মুক্তোর মালাটি অদৃশ্য হওয়াতে সঙ্গে সঙ্গে রঘুনাথন ও সেই অত্যাশ্চর্য ময়না পাখীটিরও অন্তর্ধান–
দ্বিতীয়?
দ্বিতীয় হচ্ছে, সেই পাখী কিনে ইউসুফ মিঞাকে মৃত্যুবরণ করতে হল বলে। ইউসুফের মৃত্যুর ব্যাপারটা ভেবে দেখুন-হত্যাকারী একাই একজন বা একাধিক থাকুক সেরাত্রে নিশ্চয়ই এসেছিল পাখীটা সরিয়ে নেবার জন্য। হয়ত ইউসুফ মি জেগে উঠে বাধা দেয়—যার ফলে তাকে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়।
কিন্তু আপনার অনুমানই যদি সত্য হয় মিঃ রায়-রঘুনাথন পাখীটা বেচবে কেন?
রঘুনাথন বেচেছে কে বললে আপনাকে? সুলতানের মুখে, পাখীটা যে বেচতে এসেছিল, তার চেহারার যে বর্ণনা আমরা পেয়েছি, তার সঙ্গে রঘুনাথনের চেহারার মিল তো আমরা পাইনি।
তবে? কে এসেছিল পাখী বেচতে?
রঘুনাথন নয়-তৃতীয় কোন ব্যক্তি যে পাখীর পেটে ঐ মুক্তো আছে নিশ্চয়ই জানত না।
তাই যদি হয় তো সে পাখীটা পেল কোথা থেকে? রঘুনাথন কি পাখীটাকে প্রহরায় রাখেনি?
নিশ্চয়ই রেখেছিল।
তবে?
সে ব্যাপারটা জানতে হলে আমাদের ডি’সিলভাকে প্রয়োজন। কারণ ডি’সিলভার সঙ্গেই সে লোকটা ইউসুফ মিঞার কাছে পাখীটা বেচতে গিয়েছিল। কিন্তু আর না-চুপ-ওরা বোধ। হয় এসে গেছে-পায়ের শব্দ পাচ্ছি!
সত্যিই প্যাসেজে পায়ের শব্দ পাওয়া গেল।
কুইক-দরজার দুপাশে সব সরে দাঁড়ান! কিরীটী চাপা গলায় নির্দেশ দিল।
সঙ্গে সঙ্গে আমরা দরজার দুপাশে—একদিকে কিরীটী ও অন্যদিকে আমি ও লাহিড়ী সরে দাঁড়ালাম। একটু পরেই দরজা খুলে গেল কেবিনের।
প্রথমে একজন দামী সুট পরিহিত পুরুষ ও তার পশ্চাতে এক বর্মিনী নারী কেবিনের মধ্যে প্রবেশ করল। এবং তারা কিছু বোঝবার আগেই চকিতে কিরীটী ওদের সামনে এগিয়ে কঠোর কণ্ঠে নির্দেশ দিল, মিঃ থি’ব, কোন রকম পালাবার চেষ্টা করো না বা গোলমাল করো না, পুলিস কমিশনার মিঃ লাহিড়ী তোমাকে অ্যারেস্ট করতে এসেছেন।
০৮. বিস্ময়ে একেবারে অভিভূত
আমি তখন বিস্ময়ে যেন একেবারে অভিভূত।
থি’ব নামধারী লোকটিকে না চিনলেও তার সঙ্গিনী নারীকে চিনতে পেরেছিলাম—ম্যাডাম মা’থিন।
থি’বর নার্ভের কিন্তু সত্যিই প্রশংসা করতে হয়। নিঃশব্দে সে তখন কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার দেহের গঠন বেশ বলিষ্ঠ। তার চ্যাপ্টা মঙ্গোলিয়ান টাইপের হলদেটে মুখ দেখলে বুঝতে কষ্ট হয় না সে একজন বর্মীই।
পূর্ণ লাহিড়ী ইতিমধ্যে থি’বর পাশে এসে দাঁড়িয়ছিলেন, তার হাতে পিস্তল। বলা বাহুল্য কালো পাখী লাহিড়ীর অঙ্গে পুলিস অফিসারের ইউনিফর্মই ছিল।
অল্প দুরে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে মা’থিন। সেও কিরীটীর মুখের দিকেই চেয়ে ছিল।
থি’বই প্রথমে কথা বললে, কিন্তু আমি তো এর মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না মশাই! এভাবে আমার বিনা অনুমতিতে আমার রিজার্ভভ কেবিনে অনধিকার প্রবেশই বা করেছেন কেন আর আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করবারই বা দুঃসাহস হল কি করে আপনাদের?
কিরীটী পূর্ণ লাহিড়ীর দিকে তাকিয়ে বললে, মিঃ লাহিড়ী, arest him!
তাই নাকি? ব্যঙ্গভরা কণ্ঠে বলে ওঠে থি’ব, কিন্তু কেন জানতে পারি কি?