কে বললে আপনাকে?
মিত্রানীর ডাইরীতে তাই লেখা আছে।
হ্যাঁ, দিয়েছিলাম। আমি জানতাম না যে সে সুহাসকে ভালবাসে মনে মনে—তাহলে কখনোই তাকে ঐ ধরনের পোপোজাল দিতাম না।
আপনি জানলেন কি করে সে কথা যে মিত্রানী মনে মনে সুহাসকে ভালবাসত? জানতে পেরেছি— কি করে জানলেন? মিত্রানী কি সে কথা আপনাকে বলেছিলেন সেদিন?
না।
তবে?
জেনেছিলাম।
তাকে ফোন করেছিলেন পরের দিন, তাই না?
ফোন?
হ্যাঁ। ফোন করেছিলেন আপনি তাকে–সুহাসের নাম করে—মানে যে সন্দেহটা আপনার জেগেছিল সেটা মেটাবার জন্য।
সুহাসের নাম করে আমি তাকে ফোন করতে যাবো কেন?
করেছিলেন তাই বলছি বলুন, কেন নিজের নাম না করে সুহাসের নাম করেছিলেন—
বললাম তো–সুহাসের নাম করে তাকে আমি ফোন করিনি।
সজলবাবু, আপনি সাপ নিয়ে খেলা করছেন—
ভয় দেখাচ্ছেন?
না, ভয়। আদালতে যা সত্য তা যখন প্রমাণ হবে—
আপনার আর কোন কথা আছে?
না! কিন্তু সজলবাবু এখনো আপনি ভেবে দেখুন, মিত্রানীর হত্যার ব্যাপারে আপনি বিশ্রীভাবে জড়িয়ে পড়ছেন—এখনো যা সত্য, অকপটে তা বলুন-নচেৎ আপনার চাকরি তো যাবেই—অপমানের চূড়ান্ত হবেন।
ঠিক আছে—ধরুন আমিই না হয় ফোন করেছিলাম—
আসল ব্যাপারটা জানার জন্য—
ধরুন তাই—
কোথা থেকে ফোনটা করেছিলেন—
পাবলিক বুথ থেকে–
না। আচ্ছা আর একটা কথা—
আমি আর আপনার কোন কথার জবাব দেবো না। দরকার যদি হয়ই তো আদালতেই দেবো–
তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে–
আমি উঠলাম—বলে হঠাৎ উঠে দাঁড়াল সজল এবং আর দ্বিতীয় কোন বাক্য উচ্চারণ না করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
ঘরের মধ্যে একটা স্তব্ধতা ভঙ্গ করে সুশীল নন্দীই কথা বললেন, আশ্চর্য! ভদ্রলোক একজন দায়িত্বশীল অফিসার হয়ে এমন ব্যবহার করলেন কি করে—আগাগোড়া একেবারে মিথ্যা স্টেটমেন্ট দিয়ে গিয়েছেন—
আরো কিছু আছে সুশীলবাবু, মিত্রানীর হত্যাকারীকে কাঠগড়ায় এনে দাঁড় করাতে গেলে আমাকে আরো কিছু প্রমাণ জোগাড় করতে হবে।
আপনি মিত্রানীর হত্যাকারীকে তাহলে ধরতে পেরেছেন?
পেরেছি সুশীলবাবু। তবে প্রমাণ, আরো কিছু প্রমাণ চাই—কেবলমাত্র অনুমানের উপর নির্ভর করে অত বড় অভিযোগটা একজনের উপর চাপানো যায় না। তাছাড়া আপনি তো জানেন-আদালত অনুমান চায় না—চায় প্রমাণ-অকাট্য প্রমাণ।
আচ্ছা কিরীটীবাবু, আপনার কি ধারণা সেদিন গার্ডেনে সজলবাবু উপস্থিত ছিলেন?
শুধু উপস্থিত থাকলেই তো হবে না সুশীলবাবু—ঘটনার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ও সক্রিয় যোগাযোগ থাকা চাই—সে-রকম কিছু যতক্ষণ না আপনার হাতের মুঠোয় আপনি পাচ্ছেন, তাকে আপনি স্পর্শ করতে পারবেন না। আইনের ফাঁক দিয়ে তিনি গলে বের হয়ে যাবেন।
আমার কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কিরীটীবাবু-সুশীল নন্দী বলতে গিয়ে যেন কেমন ইতস্তত করেন।
কি মনে হচ্ছে সুশীলবাবু?
সেই চোখে রঙিন চশমা, মুখে দাড়ি, হাতে বায়নাকুলার, মাথায় বেতের টুপি, পরনে কালো প্যান্ট ও স্ট্রাইপ দেওয়া হাওয়াই শার্ট—যাকে সুহাসবাবু সেদিন দেখেছিলেন গার্ডেনে তাদের কিছু দূরে—
আমি যদি বলি সুহাসবাবু যাকে সেদিন দেখেছিলেন গার্ডেনে অল্প দূরে, সে ব্যক্তির সঙ্গে মিত্রানীর হত্যাকাণ্ডের কোন সম্পর্ক নেই—
সম্পর্ক নেই!
না।
কিন্তু তাহলে অকুস্থানে ঐ বেতের টুপি ও বায়নাকুলার যা পাওয়া গিয়েছে সেটা ব্যাখ্যা কি করবেন কিরীটীবাবু?
হয়ত ঘটনাচক্রে ঐ হঠাৎ ধুলোর ঘূর্ণিঝড়ে বায়নাকুলারটা তার হাত থেকে পড়ে যায় ও সেই সঙ্গে মাথার বেতের টুপিটা–
সুব্রত ঐ সময় বললে, কিন্তু এমনও হতে পারে কিরীটী—
কি? কিরীটী সহাস্যে সুব্রতর মুখের দিকে তাকাল—
সম্পূর্ণ তৃতীয় ব্যক্তি একজন সেদিন ঐ গার্ডেনে ওদেরই মত হাজির হয়েছিল, তারপর বিকেলের দিকে অকস্মাৎ ধুলোর ঘূর্ণিঝড় ওঠায় দৈবক্রমে ঐ দলের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে–
বল—থামলি কেন? তারপর?
তারপর হয়ত মিত্রানীর মৃত্যুর ব্যাপারটা জানতে পেরে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা পলিসি নিয়েছে—কে চায় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে বল্?
আমারও অনুমান ঠিক তাই সুব্রত—কাজেই ঐ ব্যক্তিটির আদি মধ্য ও শেষ জানতেই হবে যেমন করে থোক এবং সেইটাই আমার তৃতীয় জট মিত্রানীর হত্যা-রহস্যের।
সুশীল নন্দী কোন কথা বলেন না। কেমন যেন একটু বিব্রতভাবেই চুপ করে বসে থাকেন।
সুশীলবাবু—
বলুন—কিরীটীর ডাকে সুশীল নন্দী ওর দিকে তাকালেন।
আমাদের দৃঢ় ধারণা ওদের মধ্যে কেউ না কেউ ঐ ব্যক্তিটির পরিচয় ও সমস্ত রহস্য জানেন—
তাহলে ওদের সকলকে ডেকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়—
হবে না। কোন ফল হবে তাতে করে—
তাহলে?
তা হলেও ভয় নেই! তাকে আমরা খুঁজে বের করবোই।
কেমন করে?
আপাতত এই মুহূর্তে সেটা আপনাকে বলতে পারছি না। তবে একটা কথা এর মধ্যে আছে—একমাত্র সুহাসবাবু ছাড়া কেউ তাকে দেখেননি অথচ সুহাসবাবুর চোখের দৃষ্টি তেমন প্রখর ছিল না–তার চোখের ব্যাধির জন্য কাজেই আমার মনে হচ্ছে অ্যাকচুয়ালি সুহাসবাবু নয়—অন্য কেউ লোকটিকে দেখেছিল—সে-ই এক সময় সুহাসবাবুকে কথাটা বলায় সুহাসবাবু হয়ত তাকিয়ে দেখেছিলেন
কিন্তু কথাটা তাহলে সুহাসবাবু একবারও বললেন না কেন?
সুহাসবাবুকে যতটুকু আমি স্টাডি করতে পেরেছি সুশীলবাবু, যাকে বলে সত্যিকারের ভদ্রলোক, তাই তিনি—তিনি হয়ত পরে ব্যাপারটার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরে মুখটা বন্ধ করে রেখেছেন, পাছে কেউ বিশ্রীভাবে জড়িয়ে পড়ে ঐ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। কিন্তু আমি বের করে নেবো তার মুখ থেকে কথাটা—তারপর একটু থেমে বললে কিরীটী, ঐ রুমাল-রহস্যটা আমার কাছে অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে—