ছিল। সিলকের রুমাল ছিল কি সেটা?
না মশাই, সাধারণ ক্যালিকোর রুমাল একটা-সাদা।
আপনার রুমালের কোণে নাম লেখা থাকত বা কোন চিহ্ন?
হ্যাঁ–আমার ডাক নাম টুটু ইংরাজীতে টি অক্ষরটা লেখা থাকত।
হঠাৎ পকেট থেকে একটা সিল্কের রুমাল বের করলো কিরীটী—সাধারণ জেন্টস রুমালের সাইজের থেকে সামান্য একটু বড়-তার এক কোণে ইংরাজী টি অক্ষরটা সবুজ সুতো দিয়ে বোনা। বললে, দেখুন তো, এই রুমালটা একবার!
দেখি রুমালটা, রুমালটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে সুহাস বললে, আশ্চর্য!
কি হলো?
রুমালটা আমারই মনে হচ্ছে—কিন্তু–, রুমালটা কিরীটীর হাতে আবার ফিরিয়ে দিল সুহাস।
আপনারই রুমাল! এটা তো সিল্কের?
হ্যাঁ গত বছর কাজল আমার জন্মদিনে সবুজ সুতো দিয়ে টি লিখে এই রুমালটাই আমাকে উপহার দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ পিকনিকের দিন দুই আগে কোথায় যে রুমালটা ফেললাম আর খুঁজে পাই নি, অথচ মনে আছে সেটা অফিসে আমার পকেটেই ছিল।
ঠিক বলেছেন—ঠিক চিনতে পেরেছেন ওটা আপনারই রুমাল?
হ্যাঁ—তাছাড়া দেখুন ওর এক কোণে লাল কালির একটা দাগ আছে—
কথাটা মিথ্যা নয়, কিরীটী দেখতে পেল, সত্যিই এক কোণে একটা লাল কালির দাগ আছে রুমালটায়।
কিন্তু এটা—এটা আপনি পেলেন কোথায় কিরীটীবাবু? ব্যগ্র কণ্ঠেই প্রশ্ন করে সুহাস মিত্র কিরীটীকে।
এই রুমালটাই পাকিয়ে ফাঁস দিয়ে মিত্রানীকে সেদিন–
না-না-না—একটা যেন চাপা আর্তনাদ করে ওঠে সুহাস, না, না, না।
কিরীটী তাড়াতাড়ি রুমালটা আবার পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল। তারপর শান্ত গলায় ডাকল, সুহাসবাবু?
আঁ।
আপনার ফেবারিট ব্রান্ড সিগারেট চার্মিনার, তাই না?
হ্যাঁ—
দিনে কতগুলো সিগারেট খান?
তিন-চার প্যাকেট।
আচ্ছা আপনি মিত্রানীর হত্যার ব্যাপারে দলের মধ্যে কাউকে সন্দেহ করেন?
আমাদের দলের মধ্যে-না, না—এ অসম্ভব—
কিন্তু পুলিশের ধারণা, সেদিন আপনাদের মধ্যেই কেউ–
হরিবল! কি বলছেন আপনি?
আমার কি ধারণা জানেন?
কি?
ঐ ধুলোর ঝড় আর অন্ধকারের ভেতরেও আপনাদের মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ কিছু অস্পষ্টভাবে দেখেছেন বা শুনেছেন, যেটা সেদিন আপনাদের জবানবন্দিতে কেউই আপনারা সুশীল নন্দীর কাছে প্রকাশ করেননি–অথচ যে কথাটা জানতে পারলে মিত্রানীর হত্যাকারীকে ধরার ব্যাপারে হয়ত অনেক সাহায্য পেতো পুলিস!
আমি-আমি—আমার কথা আমি বলতে পারি—অন্তত আমি কিছু আপনাদের কাছে গোপন করিনি—সুহাস মিত্র বলে উঠলো জবাবে—
কিরীটী তার কথাটার আর জের টানলো না। সে সম্পূর্ণ অন্য এক প্রশ্ন করলো। বললে, আচ্ছা সুহাসবাবু, কাজল বোস সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?
সুহাস মিত্র প্রথমটায় কিছু সময় চুপ করে রইলো তারপর ধীরে ধীরে বললে, মিত্রানীকে ও বোধ হয় একটু হিংসা করতে
সেটা ওর সঙ্গে আমি কথা বলেই বুঝতে পেরেছি—তা নয়, আমার প্রশ্ন আপনি নিশ্চয়ই জানেন।
কি?
উনি আপনাকে ভালবাসেন!
জানি।
ওঁর প্রতি আপনার মনোভাবটা বোধ হয় বিপরীত?
আমি ওকে ঠিক পছন্দ করি না।
তার কোন কারণ আছে?
আসলে ও দেহে মেয়েছেলে হলেও মনের গঠনের দিক দিয়ে ঠিক যেন তা নয়— র্যাদার ওর মধ্যে একটা যেন পুরুষালী ভাব আছে
মৃদু হেসে কিরীটী বললে, আপনি যে মিত্রানীকে মনে মনে ভালবেসেছিলেন, সেটা বোধ হয় উনি অনুমান করতে পেরেছিলেন!
মিত্রানীর প্রতি আমার মনোভাব তো কখনো ঘুণাক্ষরেও কারো কাছে আমি প্রকাশ করিনি—
কিরীটী মৃদু হেসে বললে, ভালবাসার ব্যাপারটা মুখ ফুটে প্রকাশ না করলেও মেয়েদের কাছে অস্পষ্ট থাকে না সুহাসবাবু।
১১. কিরীটী আর সুব্রত সেদিন
কিরীটী আর সুব্রত সেদিন যখন উঠবে-উঠবে করছে, বিদ্যুৎ সরকার এলো।
সবাই তখন চলে গিয়েছে।
বিদ্যুৎ ঘরে ঢুকে বললে, সুশীলবাবু, আমি অত্যন্ত দুঃখিত—বিশেষ কাজে আটকা পড়ায় আসতে দেরী হয়ে গেল।
সুশীল নন্দী বললেন, ঠিক আছে, বসুন—আলাপ করিয়ে দিন—ইনি—বিদ্যুৎ সরকার আর বিদ্যুৎবাবু, এঁকে চাক্ষুষ দেখেছেন কিনা জানি না, তবে নিশ্চয়ই এঁর নাম শুনেছেন–কিরীটী রায়।
নমস্কার। ওঁর নাম আমি বহুবার শুনেছি মিত্রানীর মুখে। আজই সকালে মিত্রানীর দাদা প্রণবেশবাবুর সঙ্গে টেলিফোনে যখন কথা হচ্ছিল, উনি বললেন, মিত্রানার মৃত্যুর ব্যাপারটা উনি তদন্ত করছেন।
কিরীটী বললে, মিত্রানীর বাবা অবিনাশবাবুর কাছে একসময় আমি পড়েছি–স্কুলে উনি আমাদের অঙ্কের মাস্টার ছিলেন।
বিদ্যুৎ সরকার কিরীটীর মুখোমুখি একটা খালি চেয়ার টেনে নিয়ে বসল, উঃ, কি প্রচণ্ড গরম–
কিরীটী বললে, আজও সকালবেলায় কাগজে ছিল সন্ধ্যার দিকে বজ্রবিদ্যুৎসহ এক পশলা ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে–
বিদ্যুৎ বললে, ছিল নাকি! আমি দেখিনি। সচরাচর ওদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস বড় একটা মেলে না বলে আমি কখনো ও-সব দেখি না বা থাকলেও গুরুত্ব দিই না।
একেবারে যে মেলে না তা নয়, কিরীটী বললে, সেদিন কিন্তু পূর্বাভাস ঠিক মিলে গিয়েছিল—আর তাতেই হত্যাকারীর পূর্ব পরিকল্পনা সাকসেসফুলও হয়েছিল।
চকিতে বিদ্যুৎ সরকার কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল।
কিরীটী একটা সিগার ধরানোর ব্যাপারে ঐ মুহূর্তে ব্যস্ত থাকায় ব্যাপারটা তার নজরে পড়লেও সুব্রতর দৃষ্টি কিন্তু এড়ায় না।
আরো কিছুক্ষণ পরে কিরীটী ও বিদ্যুৎ সরকারের মধ্যে কথা হচ্ছিল। বিদ্যুৎ সরকার যে অবস্থাপন্ন পরিবারের ছেলে, সেটা তার চেহারা ও পোশাকেই কিছুটা যেন ধরা যায়। যেমন গাত্রবর্ণ, তেমনি সুন্দর স্বাস্থ্যবান চেহারা। চেহারার মধ্যে একটা যেন বনেদী ছাপ আছে।