সোহিনী এক গাল হাসি হেসে বলেন, তার মানে সে তো দারুণ ছেলে।
হ্যাঁ, আমার ছোট ভাই সত্যি অসম্ভব ভালো।
উনি মুহূর্তের জন্য থেমে বলেন, মাস্টার্সেও অসম্ভব ভালো রেজাল্ট করেছিল বলে এম আইটি ওকে রেখে দেবার জন্য খুব ভালো অফার দিয়েছিল কিন্তু ছোট মামা ওকে দেশে পাঠিয়ে দিলেন।
আপনার ছোট মামাও কি আমেরিকায় থাকেন?
উনি হার্ভার্ড স্কুল অব ম্যানেজমেন্টে আছেন বহুদিন ধরে। ওর জন্যই তো আমার ছোট ভাই এত বছর ধরে আমেরিকায় পড়াশুনা করতে পারল।
মিসেস চৌধুরী প্রায় এক নিঃশ্বাসেই বলেন, আমার এই ছোট মামা তো আমাকেও ওখানে নিয়ে যাবার সব ব্যবস্থা করেছিলেন কিন্তু ঠিক সেই সময় আমার ছেলে হল বলে আমি আর গেলাম না।
ও!
মিসেস চৌধুরী ব্যাগ থেকে একটা ফটো বের করে ওর হাতে দিয়ে বললেন, এই দেখুন আমার ছোট ভাই এর ছবি।
ছবির উপর চোখ রেখেই সোহিনী বললেন, বাবা! দারুণ হ্যান্ডসাম তো।
আমার দাদাকেও দেখতে খুব সুন্দর। তিন ভাইবোনের মধ্যে আমিই শুধু ওদের মত সুন্দর না।
সোহিনী চোখ দুটো বড় বড় করে একটু চাপা হাসি হেসে বলেন, গড়িয়াহাটের মোড়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও তো আপনার মতো একটা সুন্দরী চোখে পড়বেনা। আর আপনি বলছেন…
ওর কথার মাঝখানেই মিসেস চৌধুরী হাসতে হাসতে বলেন, আমার স্বামী তো যখন তখন ছেলেদের বলেন–হারে, তোদের কালো বুড়ি মাকে ডেকে দে তো।
শুনেছি, সুন্দরী চিরযৌবনা স্ত্রীর গর্বে গর্বিত স্বামীরা এইভাবেই কথা বলেন।
ব্যাস! সঙ্গে সঙ্গেই ওরা দুজনে হো হো করে হেসে ওঠেন। ঠিক সেই মুহূর্তে সায়ন্তনী ড্রইংরুমে ঢুকেই ওর পরমপ্রিয় অধ্যাপিকাকে দেখে বিস্ময়মুগ্ধ খুশিতে এক গাল হেসে বলে, আপনি!
মিসেস চৌধুরী হাসতে হাসতে বলেন, কি করবো বলো? তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করল বলেই চলে এলাম।
সায়ন্তনী সলজ্জ হাসি হেসে দৃষ্টি গুটিয়ে নিয়ে মার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাদের হাসি শুনে ভেবেছিলাম, নিশ্চয়ই রত্নামাসী এসেছে।
সায়ন্তনীর হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে পাশে বসিয়ে মিসেস চৌধুরী বলেন, তোমাদের মত ছাত্রীদের জন্য কলেজে হাসাহাসি করতে পারি না বলে কি তোমাদের বাড়িতে এসেও হাসতে পারব না?
মিসেস চৌধুরী দৃষ্টি ঘুরিয়ে সোহিনীর দিকে তাকিয়ে বলেন, আমার ছোট ভাইএর জন্য এই মেয়েটাকে আমার চাই।
সোহিনী অবাক হয়ে বলেন, কি বলছেন আপনি? অত হাইলি কোয়ালিফায়েড ভাই এর জন্য…
কিন্তু আমি যে তিন বছর ধরে স্বপ্ন দেখছি, এই মেয়েটাকে আমাদের চাই।…
.
সিদ্ধার্থ হুইস্কির গেলাসে চুমুক দিয়ে বলেন, যাই বলো সোহিনী, রামানুজের মতো জামাই পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।
সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মেয়ের চিঠিগুলো পড়েই তো বুঝতে পারি, ছেলেটা কত ভালো।
যে ছেলেটা এত বছর আমেরিকায় কাটিয়েছে, সে যে ড্রিঙ্ক করে না, তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।
চিত্রা তো বলছিল, রামানুজ ঠিক ওর ছোট মামার মতো চরিত্রবান আদর্শবান হয়েছে।
সিদ্ধার্থ হুইস্কির গেলাসে আবার চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলেন, ওরা তিন ভাই বোনই তো ছোট মামাকে দেবতার মতো ভক্তি করে।
ভদ্রলোক নিঃসন্দেহে ভালো। তা না হলে ওরা এভাবে ভক্তি করে?
হ্যাঁ, তা তো বটেই।
দুচার মিনিট দুজনেই চুপচাপ থাকেন।
একটু পরে সোহিনী বলেন, আমাদের মেয়ে তো জাস্ট অর্ডিনারী গ্রাজুয়েট আর মোটামুটি একটু গান জানে। ওর সঙ্গে যে এত গুণী ছেলের বিয়ে হবে, তা আমি ভাবতেই পারিনি।
কিন্তু সায়ন্তনীকে দেখতে তো ভারী সুন্দর।
মেয়ের রূপ থাকলেই যে তার কপালে ভালো বর জুটবে, তার তো কোনো মানে নেই।
সিদ্ধার্থ আবার একটু হুইস্কি খেয়েই সোহিনীর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, আনন্দদার সঙ্গে শুভশ্রীদির বিয়ের দিন তোমার রূপ দেখেই তো দিদি-জামাইবাবুর মাথা ঘুরে গিয়েছিল। তাই তো…
সোহিনী গম্ভীর হয়ে বলেন, আমার বিয়ের কথা বলো না।
কেন?
তখন আমার বিয়ে করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না।
উনি একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তোমার বাবা-মা আর দিদি-জামাইবাবুর পাল্লায় পড়ে আমার বাবা-মা এমনই গলে গেলেন যে আমাকে প্রায় জোর করেই বিয়ে দেওয়া হল।
সিদ্ধার্থ সিগারেটে শেষ টান দিয়ে গম্ভীর হয়ে বলেন, আচ্ছা, তুমি কি সত্যি আগে থেকে কিছু জানতে না?
না, কিছুই জানতাম না।
তোমার বাবা-মা আগে থেকে তোমাকে কিছু বলেননি কেন?
বাবা-মা খুব ভালো করেই জানতেন, আমি রিসার্চ শেষ না করে কিছুতেই বিয়ে করবো না।
সোহিনী একটু থেমেই আবার বলেন, বাবা-মা আমার মতামত খুব ভালো করে জানতেন বলে আমাকে কিছু না জানিয়েই ছোট মামার চন্দনগরের বাড়িতে বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিয়ের দুদিন আগে ওখানে পৌঁছে দেখলাম, প্যান্ডেল বাঁধা হয়ে গেছে।
সিদ্ধার্থ একটু হেসে বলেন, আসলে তোমার বাবা-মা আমার মতো ছেলেকে হাত ছাড়া করতে চাননি।
তা ঠিক কিন্তু আমি তো তোমার মতো বিলেত থেকে পাশ করা এঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করতে চাইনি। আমি চিরকাল ভেবেছি, একজন অধ্যাপককে বিয়ে করব।
কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে সুখেও রেখেছি।
নিশ্চয়ই ভালোবাসো, নিশ্চয়ই সুখে রেখেছ কিন্তু প্রত্যেক মেয়ের মতো আমিও স্বামী সম্পর্কে যে স্বপ্ন দেখেছি, তা তো সম্ভব হল না।
হুইস্কির গেলাসে শেষ চুমুক দিয়ে সিদ্ধার্থ একটু হেসে বলেন, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সব ছেলেমেয়েরাই অনেক অবাস্তব স্বপ্ন দেখে। বাস্তব জীবনে ওসব স্বপ্নের কোনো দামই নেই।