একজন তরুণ সাবইন্সপেক্টর ঘরে পা দিতেই বড়বাবু বললেন, সুদীপ্ত, এদের কেসটার একটা জি. ডি. করে নাও তো।
সাব ইন্সপেক্টর বিনয়বাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন, আসুন আমার সঙ্গে।
.
দিন তিনেক পরের কথা! বেলা সওয়া দশটা সাড়ে দশটা হবে। বেল বাজতেই একজন ভদ্রমহিলা দরজা খুললেন।
আমি থানা থেকে আসছি।
মিসেস ঘোষ বললেন, ভেতরে আসুন।
ড্রইংরুমে দুএক পা এগিয়েই সাবইন্সপেক্টর সুদীপ্ত ব্যানার্জী জিজ্ঞেস করলেন, আপনি অলকানন্দা দেবীর কে?
মামী। মিসেস ঘোষ এইটুকু বলেই বললেন, আপনি বসুন। আমি দরজাটা বন্ধ করে দিই।
সাবইন্সপেক্টর ব্যানার্জী সোফায় বসতে না বসতেই মিসেস ঘোষ বাইরের দিকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, চা খাবেন? নাকি কফি?
ওসব কিছুর দরকার নেই।
মিসেস ঘোষ একটু হেসে বললেন, কফি খেতে আপত্তি নেই তো?
না, আপত্তি নেই তবে…
মিসেস ঘোষ একবার ভেতরে গিয়েই আবার ড্রইংরুমে ফিরে আসতেই সাবইন্সপেক্টর ব্যানার্জী বললেন, আপনি বসুন। অলকানন্দা দেবীর চলে যাবার ব্যাপারে আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব!
মিসেস ঘোষ সামনের সোফায় বসতেই সাবইন্সপেক্টর ব্যানার্জী জিজ্ঞেস করলে অলকানন্দা দেবী আর তার মা কতদিন আপনাদের এখানে আছেন?
অনেক বছর। মেজদি বিধবা হবার বছরখানেক পর থেকেই।
মেজদি মানে অলকানন্দা দেবীর মা?
হ্যাঁ।
সে কত বছর আগেকার কথা?
অলকা যখন ক্লাস সেভেনএ পড়ে, তখন থেকেই ওরা আমাদের কাছে আছে
অলকানন্দা দেবীর কী আরো মামামামী আছেন?
মিসেস ঘোষ একটু আত্মপ্রসাদের হাসি হেসে বলে, থাকবে না কেন? কিন্তু নিজের নিজের সংসার সামলে কে আর এইসব দায়িত্ব নিতে চায় বলুন?
আপনারা এই দায়িত্ব নিলেন কেন?
আমরা এই দায়িত্ব না নিলে ওঁরা তো ভীষণ বিপদে পড়তেন।
কাজের মেয়েটি দুকাপ কফি দিয়ে যেতেই মিসেস ঘোষ বললেন, নিন, কফি খেয়ে নিন।
হ্যাঁ, ঠিক আছে। কফির কাপে চুমুক না দিয়েই সাবইন্সপেক্টর ব্যানার্জী জিজ্ঞেস করেন, অলকানন্দা দেবীর বাবা কী করতেন?
রেলে চাকরি করতেন।
কী পোস্টে?
তা বলতে পারব না।
অলকানন্দা দেবীর মা নিশ্চয়ই পেনসন পান?
হ্যাঁ, পান।
মাসে মাসে কত টাকা পান তা জানেন কী?
মিসেস ঘোষ হাসতে হাসতেই মাথা নেড়ে বলে, আমি ওসবের খবর রাখি না।
অলকানন্দা দেবীর মা পেনসনের টাকা দিয়ে কী করেন বলতে পারেন?
প্রশ্নটা শুনে মিসেস ঘোষ মনে মনে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হলেও তা প্রকাশ না করে বলেন, অলকা বাড়ি থেকে চলে যাবার সঙ্গে এসব নিছক পারিবারিক ব্যাপারের কী যোগাযোগ, তা ঠিক বুঝতে পারছি না।
সাবইনসপেক্টর ব্যানার্জী অত্যন্ত ধীর স্থিরভাবে বলেন, তার চলে যাবার সঙ্গে তো পারিবারিক ব্যাপারের সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক। তাই ও কথা জানতে চেয়েছি।
হ্যাঁ, পেনসনের কিছু টাকা মেজদি ওঁর ভাইকে দেন।
ধন্যবাদ। সাবইন্সপেক্টর এবার প্রশ্ন করেন, আচ্ছা মিসেস ঘোষ, অলকানন্দা দেবীর সঙ্গে কি কোনো ছেলের ভাব-ভালোবাসা ছিল?
মিসেস ঘোষ একটু চাপা হাসি হেসে বলেন, এ প্রশ্নের জবাব কি দেব, ভেবে পাচ্ছি না। অলকার বয়স হয়েছে, সুন্দরী শিক্ষিতা। কলেজইউনিভার্সিটিতে যখন পড়েছে, তখন অনেক ছেলের সঙ্গেই ভাবটাব আছে কিন্তু কাউকে ভালোবাসে কিনা, তা কি আমার জানা সম্ভব?
উনি মুহূর্তের জন্য একটু থেমে বলেন, অলকা আবার বেশ স্বাধীনচেতা ও একগুঁয়ে। ও অদ্ভুত কিছু করলেও আমি অন্তত অবাক হবো না।
ওঁর অমতে কী বাড়ি থেকে বিয়ে দেবার চেষ্টা হয়েছে?
না, না, কোনোদিন না।
অলকানন্দা দেবীর মা বাড়িতে আছেন তো?
হ্যাঁ, আছেন।
তার সঙ্গে একটু কথা বলব।
মিসেস ঘোষ বাড়ির ভেতরে চলে যান। দুএক মিনিট পরই শীলাদেবীকে নিয়ে ড্রইংরুমে এসেই সাবইন্সপেক্টরকে বলেন, ইনিই অলকার মা।
সাবইন্সপেক্টর ব্যানার্জী দুহাত জোড় করে নমস্কার করার সঙ্গে সঙ্গেই অলকার মাও দুহাত জোড় করে নমস্কার করেন।
সাবইন্সপেক্টর ব্যানার্জী অত্যন্ত সসম্ভ্রমে বললেন, আপনার মেয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছে। নিশ্চয়ই আপনার মন খুব খারাপ। তবু আপনাকে একটু বিরক্ত করব। দয়া করে কিছু মনে করবেন না।
শীলাদেবী মাথায় আঁচলটা একটু টেনেই বললেন, আপনি তো আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন। আপনার উপর কী আমি রাগ করতে পারি?
মিসেস ঘোষ পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর দিকে তাকিয়ে সাবইন্সপেক্টর বললেন, প্লীজ, আপনি এ ঘরে থাকরেন না। আর যাবার সময় দরজাটা বন্ধ করে দেবেন।
ওর কথা শুনে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে মিসেস ঘোষ বললেন, আপনারা কথা বলুন। আমি পাশের বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি।
মিসেস ঘোষকে ওভাবে চলে যেতে দেখে সাবইন্সপেক্টর একটু চাপা হাসি হাসেন। তারপর শীলাদেবীর দিকে তাকিয়ে বলেন, আমি আপনার ছেলের মতো। আপনি যদি বিশ্বাস করে আমাকে সব কিছু খোলাখুলি বলেন, তাহলে খুব ভালো হয়।
উনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, নিশ্চয়ই আপনি আমার ছেলের মতো। আপনাকে কোন কিছু বলতেই আমার আপত্তি নেই।
দেখুন, আপনার ভাইএর কাছ থেকে জেনেছি, আপনার মেয়ে বরাবর খুব ভালো রেজাল্ট করেছেন এবং এক কথায় অত্যন্ত ভালো মেয়ে।…
শীলাদেবী একটু চাপা হাসি হেসে বলেন, আপনাদের পাঁচজনের আশীর্বাদে আমার মেয়ে সত্যি খুব ভালো। আপনি ওর স্কুলকলেজইউনিভার্সিটির বন্ধুবান্ধব অধ্যাপকদের কাছে জিজ্ঞেস করলেও জানতে পারবেন…
সাবইন্সপেক্টর ব্যানার্জী একটু হেসে বলেন, সন্তানকে মায়ের চাইতে বেশি ভালো করে তো কেউ চিনতে জানতে পারে না। আপনি যখন প্রাণ খুলে তাকে ভালো বলছেন, তখন তিনি যে সত্যি ভালো, সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।