কেন?
প্রশ্ন করেই অলকানন্দা লজ্জিত হয় কিন্তু আরো কিছু বলতে যাবার আগেই সুদীপ্ত বলে, দিদির রূপ দেখেই জামাইবাবু ওকে বিয়ে করেন। কিন্তু বড্ড অহঙ্কারী। তাছাড়া ওরা মালেশিয়ায় থাকে।
আপনার জামাইবাবু কী খুব বড়লোকের বাড়ির ছেলে?
কফির পেয়ালায় শেষ চুমুক দিয়ে সুদীপ্ত বলে, খুব বড়লোকের বাড়ির ছেলে না হলেও যথেষ্ট সচ্ছল পরিবারের। তাছাড়া জামাইবাবু ডাক্তার।
সো হোয়াট!
দুজনেরই কফি খাওয়া শেষ কিন্তু তবু দুজনেই চুপ করে বসে থাকে।
একটু পরে অলকানন্দা জিজ্ঞেস করে, বিয়ে করেছেন?
সুদীপ্ত একটু হেসে বলে, দেনা শোধ না করেই টোপর মাথায় দেব?
তাহলে আপনি একেবারেই একলা?
না, আমার বড় মাসী আমার কাছে থাকেন। ও একটু থেমে বলে, আমার বড় মাসী আমার মার বিয়ের আগেই বিধবা হন। আমার জন্ম হবার পর থেকেই বড়মাসী আমাদের কাছে আছেন!
ডাইনিং হল থেকে বেরুতে বেরুতেই অলকানন্দা বলে, তাহলে তো আপনারা মাসীরও অনেক বয়স হয়েছে।
হ্যাসুদীপ্ত একটু হেসে বলে, তবে বুড়ি বলে, আমার ছেলেকে না দেখে মরতে পারবে না।
ওর কথা শুনে অলকানন্দাও একটু হাসে।
শহরের এদিকওদিক ঘুরতে ঘুরতে ওরা সালিম সিং কী হাভেলী পৌঁছে যায়। তারপর খান থেকে চলে যায় পাটোও কী হাভেলী। সব শেষে নাথলজী কী হাভেলী। ইতিমধ্যে রোদ্দর অসহ্য মনে হতেই ওরা টুরিস্ট লজএর দিকে পা বাড়ায়।
কদিনের ছুটি নিয়ে এসেছেন? অলকানন্দা হাঁটতে হাঁটতেই সুদীপ্তর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
ছুটি নিয়ে আসিনি; কাজে এসেছি।
কলকাতার পুলিশে কাজ করেন; এখানে আবার কী কাজ?
আপনিই তো আমাকে টেনে এনেছেন।
অলকানন্দা থমকে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমি আপনাকে টেনে এনেছি?
সুদীপ্ত চাপা হাসি হাসতে হাসতে শুধু মাথা নেড়ে বলে, হ্যাঁ।
তার মানে? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কী ব্যাপার বলুন তো!
সত্যি শুনতে চান?
নিশ্চয়ই।
টুরিস্ট লজএ গিয়ে সব বলছি।
***
বড়বাবু সব শোনার পর বললেন, দেখুন, যদি কোনো গ্রোনআপ ছেলেমেয়ে–আই মীন অ্যাডাল্ট স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে কোথাও চলে যায়, তাহলে সেটা কোনো বেআইনী হয় না।…
ওর কথার মাঝখানেই দীপুবাবু বলেন, কিন্তু হঠাৎ কোনো বিশেষ কারণে যদি…
বড়বাবু একটু বিরক্ত হয়েই বললেন, আপনারা তো আপনাদের কথা বলছেন। এবার আমাকে কিছু বলতে দিন।
বিনয়বাবু সঙ্গে সঙ্গে বলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনি বলুন।
বড়বাবুর আবার শুরু করেন, মিঃ ঘোষ, আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, আপনার ভাগ্নীর চিঠি থেকে স্পষ্ট যে তাকে কেউ কিডন্যাপ করেনি বা…
সে তো একশবার স্বীকার করব।
তাকে কেউ ভয় দেখিয়ে নিয়ে গেছে, তাও নয়।
বিনয়বাবু মাথা নেড়ে সম্মতি জানান।
বড়বাবু বিনয়বাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান। তাই আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, গ্রোনআপ ও শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা সাধারণত তিনটি কারণে বাড়ি থেকে পালায়।
উনি লাইটার জ্বেলে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, নাম্বার ওয়ান–প্রেমঘটিত কোনো…
দীপবাবু ওর কথার মাঝখানেই বলেন, না, ওর ওসব কোনো ব্যাপার ছিল না।
বড়বাবু এবার গলা চড়িয়ে বলেন, উড ইউ প্লীজ স্টপ! তাছাড়া মশাই, আপনি হচ্ছেন মেয়েটির মামার দূর সম্পর্কের শালা। এ ব্যাপারে আপনাকে বকবক করার অধিকার কে দিল?
বিনয়বাবু শালাবাবুকে বলেন, এই দীপু, কেন কথার মাঝখানে বকবক করছো। এবার উনি বড়বাবুকে বলেন, প্লীজ আপনি বলুন।
বড়বাবু সিগারেটে একটা টান দিয়ে বলেন, প্রেমট্রেম ছাড়া হয় পারিবারিক কারণে না হয় নিজের মতো নিজের কেরিয়ার গড়ে তোলার জন্যই শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা বাড়ি থেকে হঠাৎ কোথাও চলে যায়।
এবার উনি একটু হেসে বলেন, এসব ব্যাপারে আমরা পুলিশের লোক হয়ে কি করতে পারি বলুন?
বিনয়বাবু একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তা ঠিক কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ বাড়ি থেকে চলে গেল। আপনারা যদি সাহায্য না করেন তাহলে আমরা কোথায় যাই।
বড়বাবু কোনো মন্তব্য না করে সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে এ্যাশট্রেতে ফেলে দেন।
বিনয়বাবু আবার বলেন, খবরের কাগজে তো হরদম দেখি, ছেলেমেয়ে হারিয়ে গেল পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে।
বড়বাবু টেবিলে একটু ঘুষি মেরে বলেন, ইয়েস দ্যাটস রাইট। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা চলে গেলে বা হারিয়ে গেলে তারা নানা ধরনের ক্রিমিনালদের হাতে পড়তে পারে বলেই…
তা ঠিক।
বড়বাবু এক গাল হাসি হেসে বলেন, চোরডাকাত, খুনিটুনি ধরাই আমাদের কাজ।
ছেলেমেয়ে হারিয়েটারিয়ে গেলে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, এ্যাজ এ সোস্যাল সার্ভিস।
বিনয়বাবু বললেন, সবই বুঝতে পারছি কিন্তু আপনারা যদি সাহায্য না করেন, তাহলে আমরা কোথায় যাই?
বড়বাবু সঙ্গে সঙ্গে বললেন, নিশ্চয়ই সাহায্য করব; তবে আমাদের লিমিটেনশনটাও বুঝবেন। আমাদের কাজ বা দায়িত্ব অনুপাতে লোকজন অত্যন্ত কম। তার উপর এই কলকাতা শহরে রোজ একটা না একটা পলিটিক্যাল ঝামেলা লেগেই আছে। এ ছাড়া ভি আইপিদের জন্য স্পেশ্যাল ডিউটি ছাড়া আজকাল সব কেষ্টবিচ্ছুদের বিয়েবাড়িতেও আমাদের দুতিনজন কনস্টেবল পাঠাতে হয়।
বিনয়বাবু একটু হেসে বললেন, তা যা বলেছেন।
বড়বাবু আর কোনো কথা না বলে কলিং বেল টিপলেন। সঙ্গে সঙ্গে একজন কনস্টেবল ঘরে ঢুকতেই বললেন, শ্রীনাথ বা সুদীপ্ত আছে?
কনস্টেবলের উত্তরের অপেক্ষা না করেই উনি বললেন, ওদের একজনকে আসতে বলো।