তালুকদার বুঝতে পারেন প্রণব অতি ধুরন্ধর গোয়েন্দা। রুদ্ধদ্বার কক্ষে তিনি মহিম হালদারকে কী ভাষায় কথা বলেছেন তা পর্যন্ত জানে।
উনি জানতে চান, লালমোহন বিশ্বাস মশাই হঠাৎ কীভাবে দেহ রাখলেন, প্রণব?
–সে কথাই তো এতক্ষণ আমরা আলোচনা করছিলাম, স্যার। বোমা বিস্ফোরণে। বুবি-ট্র্যাপের খপ্পরে পড়ে।
এমন একটা সন্দেহ ওঁর নিজেরও হয়েছিল। এতক্ষণে নিঃসন্দেহ হলেন। বলেন, কিন্তু এ খবরটা তো কৃষ্ণাকে যে কেউ জানাতে পারে। পারে না?
–বাস্তবতার বিচারে পারে, নৈতিকতার অগ্রাধিকারে পারে না। সে অধিকার যে নিজ শৌর্যে অর্জন করেছেন আপনি। কী করে অমন অগ্রাধিকার আপনার হল, তা আমার কাছে জানতে চাইবেন না, স্যার! সে কথা আমরা আলোচনা করতে পারি না। প্রফেশনাল এথিক্সে বারণ।
হেলমেট নাড়িয়ে আবার একটি ‘বাও’ করে প্রণব বেরিয়ে যায় অন্ধকারে।
.
প্রায় এক মাস পরের কথা।
দেবু আর কৃষ্ণা ইতিমধ্যে একদিন এসে ওঁকে যুগলে প্রণাম করে গেছে। দুজনেই এখন হাঁটা-চলা করতে পারছে।
হঠাৎ একদিন দিল্লী থেকে ডাকে একটা চিঠি পেলেন। মাদার টেরিজার স্নেহধন্য একটি অনাথ আশ্রমের মহিলা সেক্রেটারির ইংরেজিতে ছাপানো আবেদনপত্র। ওঁর প্রতিষ্ঠানে পিতৃপরিচয়হীন হতভাগ্যদের মানুষ করার, মনুষ্যত্বের দাবী মিটিয়ে দেবার চেষ্টা হয়।
ছাপানো আবেদনপত্রটা কিন্তু বুক-পোস্টে আসেনি।
এসেছে মুখবন্ধ খামে। তাই পুরো ডাকটিকিট লেগেছে।
ইংরেজি আবেদনপত্রের তলায় সাদা বাঙলায় গোটা গোটা হরফে কে যেন লিখেছে :
“প্রভু বুদ্ধ লাগি আমি ভিক্ষা মাগি…”
প্রফেসর তালুকদার প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ পেলেন।
প্রায়শ্চিত্ত? না পাপ তিনি কিছু করেননি। প্রণব মজুমদারের ভাষায় ধরণীর পাপের ভার কিছুটা লাঘব করেছেন মাত্র। কবি সাহিত্যিক হিসাবে সমাজের প্রতি যা তাঁর প্রতিশ্রুতি :
“দু একটি কাঁটা করি দিব দূর
তার পরে ছুটি নিব।”
বরং বলা উচিত উপযুক্ত পাত্রে করুণা প্রদর্শনের একটা সুযোগ পেলেন মাতা আম্রপালীর উদাত্ত পুকারে।
দেরাজ খুলে চেক বইটা বার করে আনলেন উনি।
পঁচিশ হাজার টাকার একটা চেক লিখতে।