–তার আগে ঐ মেয়েটির সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। টাকার প্যাকেটটা আমি শুধু তার হাতেই দেব। অন্য কাউকে নয়।
–তা তো হবে না, স্যার। সি ইখানে না আছে। তাকে কী দরকার?
–একমাত্র তাকেই আমি দেখলে চিনতে পারব।
–লেকিন সি তো কলকাত্তামে না-আছে। পাকিট হামাকেই দিতে হবে। আমি আইডেন্টিটি দেখিয়ে তবে লিব।
–কী আইডেন্টিটি?
–তিন সেট পিকচার ঔর নিগেটিভ।
–সে সব আমি চাই না।
-–চান না, ওয়াপস লিবেন না। লেকিন কেন?
–তুমি তো দশ কপি করে প্রিন্ট বানিয়ে রেখে ওগুলো আমাকে ফেরত দিতে পার। আমি তোমাকে টাকাটা দিলেই তুমি আবার নতুন করে টাকা চাইতে পার। ঠেকাচ্ছে কে?
–‘আপন গড’ স্যার! সিরেফ তিন সেট বানিয়েসি। আপন মাই অনার!
প্রফেসর তালুকদার নীরবে অপেক্ষা করেন।
–কী হল স্যার? কুছু তো বোলেন?
–আমি কী বলব, মাস্তান? তুমি বলছ ‘আপন গড’, ‘আপন মাই অনার’-এ ক্ষেত্রে আমি কী বলতে পারি? তোমার মতো অনারেবল…
–অ! তা আপনি কী চাইছেন?
–সেই মেয়েটি যদি টাকা নিতে না পারে তবে তোমাকেই আমি প্যাকেটটা দেব, তবে স্ট্যাম্পড রসিদ নিয়ে।
–কী নিয়ে? রিসিট?
–হ্যাঁ, তাই। রসিদ। রিসিট!
–আপনি কি দিল্লাগি শুরু করলেন স্যার? ব্ল্যাকমেলিং-এর রুপেয় কেউ কখনো রসিদ দিয়ে নেয়?
–তা তো আমি জানি না। আমার জানার কথা নয়। এই জীবনে কখনো ব্ল্যাকমেলিঙের টাকা নিইওনি, দিইওনি। তবে ঐ আমার শর্ত। আমি একটা কাগজে লিখে নিয়ে যাব—”পত্রবাহকের কাছে ব্ল্যাকমেলিং বাবদ পঁচিশ হাজার টাকা খুচরো নোটে বুঝিয়া পাইলাম।” স্ট্যাম্প প্যাডও নিয়ে যাব। তুমি তার নিচে তোমার বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের টিপছাপ দিয়ে টাকাটা আমার কাছ থেকে নেবে!
–আপনি পাগল হইয়ে গেসেন, স্যার। তাই কি হামি পারি?
–না পার টিপছাপ দিও না। রসিদ দিও না। আমিও টাকাটা দিতে পারব না।
–ও. কে.। তাইলে কালই তিন সেট পিচার ডাকে ডেলে দিই।
–ক্ষমতা থাকে দাও!
–ক্ষেমতা! কেঁও? হমার হিম্মতে কুলাবে না?
–তাই তো আমার ধারণা!
–তিনঠো লেফাফা ডাক-বাক্সে গিরাতে সেকব না আমি?
–সেই কথাই তো বলছি আমি। বারে বারে বলছি।
–লেকিন কেঁও?
–কারণ তোমার এক্তিয়ারে ঐ একটিই একাঘ্নী বাণ আছে, মাস্তান! ও দিয়ে তুমি ঘটোৎকচকে বধ করতে পার–আলবৎ পার–কিন্তু অর্জুন তাহলে জীবিত থাকবে। তোমার কভিকশন তো অৰ্জুনই করবে, তাই নয়? আই. পি. সি.-তে ব্ল্যাকমেলিঙের জন্য ম্যাক্সিমাম কত বছর সশ্রম কারাদণ্ডের প্রভিসন্স আছে তা ভোলনি নিশ্চয়। অর্জুনই সে ব্রহ্মাস্ত্রটা ছাড়বে, তাই নয়? ঘটোৎকচ তো বেফাজুল? ‘কর্ণার্জুন’ নাটকে এলেবেলে-চরিত্র!
–কী উল্টাসিধা বকছেন প্রফেসার-সাহাব!
–মহাভারত যে পড়নি তা জানি, কিন্তু চোপড়া-সাহেবের সিরিয়ালটাও দেখনি রোব্বারে?
–হামি সচমুছ কুছু সমঝাতে পারছি না, স্যার!
–অলরাইট! মহাভারত তুমি পড়নি! কিন্তু তাস খেল নিশ্চয়। শোন! তোমার হাতে আছে রঙের টেক্কাখানা! ম্যায়নে মান্লি! একটা পিঠ তুমি তুলবেই। কোন শুয়ারের বাচ্চা রুখতে পারবে না! তাই না মাস্তান? কিন্তু তারপর! টেক্কাখানা তোমার হাতছাড়া হয়ে যাবার পর? মানছি, আমার নানান অসুবিধা হবে, নানা বেইজ্জতি। হয়তো চাকরি ছেড়ে দেব। কিন্তু তুমি? শুধু পঁচিশ হাজার টাকাই খোয়াবে –উপরন্তু আমার মতো একটা শত্রুকে লাভ করবে। বদলা না নিয়ে যে আমি থামব তা তুমি নিশ্চয় বুঝছ! বয়স হয়েছে, তবু শত্রু হিসাবে আমি লোকটা যে সাঘাতিক তা তোমার ভালরকম জানা। তাছাড়া তুমি জান নিশ্চয়, সোন্ধী ইতিমধ্যে পুলিসে ডায়েরি করেছে…
–সোন্ধী! সৌন্ধী কৌন আছে?
–ন্যাকা সাজবার চেষ্টা কর না মাস্তান! য়ু আর অলরেডি হাফ-এক্সপোজড! তুমি জান যে, পুলিসে এইট বাই টোয়েন্টি অ্যাপার্টমেন্টে সাত-সাতটা লেটেন্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়েছে। একটা মেয়ের, আর একটা ছেলের। য়ু নো ড্যাম ওয়েল, হোয়াটস আ লেটেন্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট। তুমি জান, পুলিস রেকর্ডে তোমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে কি না। যদি জীবনে কখনো কনভিকশন হয়ে থাকে, যদি কখনো কোনো হাজতে রাত্রিবাস করে থাক, তাহলে য়োর ফিঙ্গারপ্রিন্ট উড ট্যালি…
–হামি কুছু সমঝাতে…
–লেকিন হামি সব কুছ সমঝেছি মাস্তান! ডু হোয়াটএভার য়ু থিংক বেস্ট! আই নো অ্যান্ড দ্য পুলিস নো দ্যাট য়ু আন্ডারস্ট্যান্ড ইংলিশ পার্ফেক্টলি! গুড নাইট!
–শুনুন স্যার, প্লীজ…
তালুকদার লাইনটা কেটে দিলেন।
‘ফিয়ার ইজ দ্য কী!’
তীক্ষ্ণধী মানুষটি ইতিমধ্যে ‘দুইয়ে-দুইয়ে চার’ করেছেন।
সদ্যসমাপ্ত অ্যাপার্টমেন্ট। প্রকাণ্ড বড় ফ্ল্যাট, অথচ আসবাবপত্রবিহীন! তার একটাই অর্থ হতে পারে : মালিক ফ্ল্যাটের দখল নিয়েছে, নেমপ্লেট বসিয়েছে, নগদ টাকার জোরে টেলিফোন কানেকশান পর্যন্ত পেয়েছে, কিন্তু সপরিবারে ফ্ল্যাটটা দখল করেনি। এটা বোঝা যায়। একটা ফ্রিজ, একটা ডবল-বেড খাট আর একটা সিলিঙ ফ্যান। ব্যস! কেন? সম্ভবত পূর্ববর্তী এক-কামরার ফ্ল্যাট থেকে এগুলি স্থানান্তরিত করে সোন্ধী অপেক্ষা করছিল। হয়তো ওর স্ত্রী-পুত্র-পরিবার দিল্লীতে, বোম্বাইয়ে বা ব্যাঙ্গালোরে। দু-চার মাস পরে, বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হলে হয়তো ওরা সবাই আসবে। এই সুযোগটা নিয়েছে ঐ মাস্তান-পার্টি। যে কোনোভাবেই হোক ঐ সদর দরজার একটা ডুপ্লিকেট চাবি যোগাড় করেছে।