–কী দেখছ?
–এমন সুন্দর ফ্ল্যাট, অথচ এমন ন্যাড়া কেন?
–ডির্ভোসের সময় মানি-সেটলমেন্টে ফ্ল্যাটটা পেয়েছি, ফার্নিচার নয়। ধীরে ধীরে কিনতে হবে। কিন্তু তুমি আমার প্রথম প্রশ্নটার জবাব দাওনি। তুমি কি আমাকে আগে কোথাও দেখেছ?
–বাস্তবে নয়। ফটোতে। ‘পত্রমিতালী’র প্রচ্ছদে। থার্ড ইস্যুতে।
–আই সি। হ্যাঁ, ওটা আমারই ছবি। কিছু খাবে?
-–খাব? এই বেলা আড়াইটার সময়? আমার বয়সটা কত তা তো আমি বলেছি, মিসেস সোন্ধী।
–আমি মিসেস সোন্ধী নই। তুমি আমাকে ‘মালিনী’ বলেই ডেক। আর ‘খাবে’ প্রশ্নটা রিডিক্লাস মনে হচ্ছে, যেহেতু হিন্দি বা ইংরেজির মতো ঐ ক্রিয়াপদের চলিত বাঙলা নেই। লাইক টু হ্যাভ আ ড্রিংক? এত গরমে এলে তো, তাই বলছি। জিন অ্যান্ড লাইম? দেব একটা?
–নো, থ্যাংস। আমি মদ্যপান করি না।
–গুড হেভেন্স! ‘জিন’ মদ নয় গো, সাহিত্যিক মশাই। আপনার প্রফেশনাল ছদ্মনামটা কী দয়া করে জানাবেন? ‘জিন’কে যিনি মদ বলেন, তিনি কী জাতের কথাসাহিত্য রচনা করতে সক্ষম, আমি জানতে কৌতূহলী।
–আমার কথা থাক। তোমার কথা শুনতে এসেছি। সন্ধ্যায় তোমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। ফলে ঘণ্টা-তিনেক তোমার সঙ্গে আলাপচারি করলে কী পরিমাণ সম্মান-দক্ষিণা দিতে হবে সেটা সর্বাগ্রে জেনে নিতে চাই।
–আলাপচারি?
–হাঁ, তাই। তুমি বেণীর সঙ্গে মাথাটাও দিতে প্রস্তুত; কিন্তু আমি শুধু বেণীটুকুই সংগ্রহ করতে এসেছি। আই ওয়ান্ট য়োর স্টোরি, অ্যান্ড নাথিং বাট ইট!
–‘ওনলি-বিমল’-স্টোরি?
এক মুহূর্ত কী যেন চিন্তা করল। তারপর বলল, অঙ্কটা ভেরিএবল। বাড়ে কমে। সেটা নির্ভর করে পার্টির স্যাটিসফ্যাকশানের উপর।
–স্যাটিসফ্যাকশান? সন্তুষ্টি?
–তাই বলেছি আমি। তুমি নাকি মাথা বাদ দিয়ে শুধু বেণীটুকু নিতে এসেছ। তা সেই বেণীটা দিয়ে তোমাকে স্যাটিসফাই করতে হবে না? আরও সহজ ভাষায় : তুমি এসেছ একটা প্লটের সন্ধানে–জানতে যে, যৌনপত্রিকায় যে মেয়েটি মডেল হতে রাজি, সে কেন কারও ঘরণী নয়, সে কেন নয় কারো ‘মা’? তাই তো?
–একজ্যাক্টলি। কেন? কেন? কেন?
–সেই কিস্সা শুনিয়ে তোমাকে স্যাটিসফাই করতে হবে প্রথমে। তুমি না পরে বলতে পার–এ তো জানা প্লট, মোপাসা, টুর্গেনিভ বা ব্যালজাকে পড়েছি।
অধ্যাপক তালুকদার একটু ঝুঁকে বসেন সামনের দিকে : জাস্ট আ মিনিট। তোমার পড়শুনাটা কদ্দুর?
–নাউ য়ু আর টকিং, প্রফেসর! পড়াশুনা! অব এ প্রস্টিট্যুট!! হাঃ!
-–ঠিক আছে। পড়াশুনার কথা থাক। তোমাদের বিবাহিত জীবন কতদিনের?
–লেস দ্যান আ ইয়ার। কেন? সে কথা কেন?
–মাত্র এক বছর! প্রেম করে বিয়ে!
মেয়েটি দৃঢ়ভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বলল, ওসব কথা থাক– লেটস গো টু দ্য বেডরুম। ওখানে ফ্যান আছে। ড্রিংস যখন করবেই না।
–কী দরকার? আমার তো গরম লাগছে না?
–আমার লাগছে।
–একটা হাত-পাখাটাখা নিয়ে এস তাহলে।
ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইল দেড় মুহূর্ত! তারপর বললে, বাট হোয়াই? প্রস্ কোয়ার্টার্সে আসতে পারলে, আর তার বেডরুমে গেলেই জাত যাবে?
-–’জাত যাবে’ তা তো আমি বলিনি।
–বলনি, বাট য়ু আর বিহেভিং…ওয়েল, আমি গা গেকে ব্লাউজটা খুললে তুমি মূৰ্ছা যাবে না তো? সত্যিই আমার এখানে গরম লাগছে….
প্রফেসর তালুকদার হেসে ফেলেন।
বলেন, না মালিনী! তুমি গা থেকে ব্লাউজটা খুললে আমি মূৰ্ছা যাব না। ইন ফ্যাক্ট, ঐ অবস্থাতেই তো তুমি ফটোটা তুলিয়েছিলে, তাই নয়?…ঐ পত্রিকায়?..দেখে আমি তো মূৰ্ছা যাইনি….
মেয়েটি দুম্ দুম্ করে উঠে গেল বেডরুমে। প্রফেসর তালুকদার অন্যমনস্কের মতো পাশের টি-পয়ে রাখা একটা ফটো-অ্যালবাম তুলে নিলেন। পাতা উলটেই বুঝতে পারলেন, সেটা বিশেষ উদ্দেশ্যে ওখানে অবিন্যস্তভাবে সুবিন্যস্ত। ফটো-অ্যালবামে মেয়েটির একাধিক আলোকচিত্র। নানান মাপের। ও নিশ্চয় কোনো ফটোগ্রাফারের মডেল।
পত্রিকায় তবু নচের আড়াল ছিল। এখানে একাধিক ন্যূড-ফটোগ্রাফ। ‘খদ্দের’কে ওয়র্ম-আপ করার অ্যাপিটাইজার।
নিঃশব্দে অ্যালবামটা স্বস্থানে নামিয়ে রাখলেন।
ঘরের ভিতর থেকে প্রশ্ন হল, সরবতে আপত্তি আছে? লিমন্ স্কোয়াশ? নাকি আমার ছোঁওয়া খাওয়া যাবে না?
তালুকদার বেডরুমের দিকে মুখ করে নেপথ্যচারিণীকে বললেন, তুমি অহেতুক আমাকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করছ, মালিনী। নিয়ে এস। লিমন-স্কোয়াশ নয়, ‘জিন-উইথ লাইম স্কোয়াশ’। দু পাত্ৰই এনো। তুমিও খাও নিশ্চয়?
একটু পরে শয়নকক্ষের পর্দা সরিয়ে মালিনী এ ঘরে এল। তার দুহাতে কাঁচের গ্লাস। উপরে বরফের কিউব। শুধু ব্লাউস নয়, অধোবাসটিও সে ঘরের ভিতর খুলে রেখে এসেছে।
একটা গ্লাস টেবিলে নামিয়ে রেখে সে মুখোমুখি বসে বললে, এই যে বললে ‘মদ্যপান’ কর না।
–গুড হেভেন্স। ‘জিন’ মদ নয় গো, জনপদকল্যাণী। আপনার প্রফেশনাল ছদ্মনামটা কী, দয়া করে জানাবেন? ‘জিন’কে যিনি ‘মদ’ বলেন, তিনি কী-জাতের রতিরঙ্গকুহক রচনা করতে সক্ষম, আমি জানতে কৌতূহলী!
–দ্যাটস্ এ গুড ওয়ান! জিন আগে কখনো পান করেছ?
–করিনি! ইতিপূর্বে কোনো জনপদকল্যাণীর প্রমোদভবনে…বাই দ্য ওয়ে… ‘জনপদকল্যাণী’ কাকে বলে জান তো?
ওর হাতের গ্লাসে গ্লাসটা ঠেকিয়ে বললে, চিয়ার্স! জানি।
একটা চুমুক দিয়ে প্রফেসর তালুকদারের মনে হল, ও গুল মারছে। প্রশ্ন করেন, অজন্তা-গুহায় একটি জনপদকল্যাণীর ছবি আছে, কোথায় তা জান?