- বইয়ের নামঃ অঁহক
- লেখকের নামঃ হুমায়ূন আহমেদ
- প্রকাশনাঃ সাগর পাবলিশার্স
- বিভাগসমূহঃ গল্পের বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
ইন্টার গ্যালাকটিক স্পেসশিপ
ইন্টার গ্যালাকটিক স্পেসশিপগুলির পরিচালনা নীতিমালায় তিনটি না-সূচক সাবধান বাণী আছে। স্পেসশিপের ক্যাপ্টেনকে এই তিন না মেনে চলতে হবে।
১. স্পেসশিপ কখনো নিউট্রন স্টারের বলয়ের ভেতর দিয়ে যাবে না।
২. ব্ল্যাকহোলের বলয়ের ভিতর দিয়ে যাবে না।
৩. অঁহক গোষ্ঠীর সীমানার কাছাকাছি যাবে না। ভুলক্রমে যদি চলে যায়। অতি দ্রুত বের হয়ে আসবে।
সমস্যা হল নিউট্রন স্টার এবং ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব আগেভাগে টের পাওয়া যায়। সময় মতো ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু অঁহকদের ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন। আগেভাগে তাদের উপস্থিতি জানার কোন উপায় নেই।
অথচ অঁহকরা মহাশূন্যের বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে সবচে দয়ালু। বিপদগ্রস্ত মহাশূন্যযানের সাহায্যের জন্যে অতি ব্যস্ত। তাদের কর্মক্ষমতাও অসাধারণ। যে কোন যন্ত্রাংশ তারা অতি দ্রুত ঠিক করতে পারে। এই অনন্ত মহাবিশ্বের যে কোন শ্রেণীর প্রাণীর যে কোন ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গ ঠিক করে ফেলতে পারে। তারপরেও এদের কাছে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। এদেরকে ব্ল্যাকহোল কিংবা নিউট্রন স্টারের মতই বিপজ্জনক ভাবা হয়।
অঁহকদের সম্পর্কে পরিপূর্ণ কোন তথ্য কোথাও নেই। গ্যালাকটোপিডিয়াতে লেখা আছে–
অঁহক।
অতি উন্নত বুদ্ধিমত্তার প্রাণী। ছোট ছোট দলে এরা অনন্ত মহাশূন্যে ভেসে বেড়ায়। অসংখ্য বাহু বিশিষ্ট প্রাণী। এদের খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতি অজ্ঞাত। ধারণা করা হয় এরা খাদ্য গ্রহণ করে না। মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে এরা প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করে। অন্য সব বুদ্ধিমান প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে চায়। তবে বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের সাহায্যে অতি দ্রুত ছুটে আসে। ভগ্ন যন্ত্রাংশ ঠিক করা এবং আহত প্রাণীদের চিকিৎসায় এদের দক্ষতা সীমাহীন।
অন্য বুদ্ধিমান প্রাণীদের কাছাকাছি এলে এরা নিজেদের অদৃশ্য রাখতে পছন্দ করে। এই ক্ষমতা তাদের আছে। তারা টেলিপ্যাথিক মাধ্যমেও বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম। আহত বুদ্ধিমান প্রাণীদের চিকিৎসা দান কালে তারা এই ক্ষমতা ব্যবহার করে আহতের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেয়। তবে নিজেদের সম্পর্কে কিছুই বলে না।
তাদের যান্ত্রিক কোন কিছু নেই। কারণ তাদের যন্ত্রের কোন প্রয়োজন নেই। মহাকাশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে তারা ছোটাছুটি করতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে অঁহকরা অতি শান্তি প্রিয়। সিরাস নক্ষত্রের গ্রহ ভি থ্রির অতি উন্নত প্রাণী মায়রাদের একটি দল একবার অঁহকদের লক্ষ্য করে আণবিক ব্লাস্টার, লেজার-নিও ব্লাস্টার এবং পজিট্রন ব্লাস্টার নিক্ষেপ করে। সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার মতো অবস্থা তৈরি হয়। এর উত্তরে অঁহকরা তাদের যাত্রাপথ থেকে সরে যায় এবং তাদের কাছে একটি বার্তা পাঠায়। বার্তায় বলা হয়–
ধ্বংসে আনন্দ নেই।
আনন্দ সৃষ্টিতে।
অঁহকদের মোট সংখ্যা, তাদের জীবনকাল কিংবা বাসস্থান সম্পর্কে কিছুই জানা যায় নি। খুব সম্ভব তাদের নির্দিষ্ট কোন বাসস্থান নেই। তাদের শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া এবং জৈব রসায়ন বিষয়ক কোন কিছুই জানা যায় নি। স্পেকট্রোগ্রাফিতে প্রাপ্ত সামান্য তথ্যে অনুমান করা হয় তারা মেঘ সদৃশ প্রাণী। তাদের বলয় থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে গামা রশ্মি এবং এক্স রশ্মির বিকিরণ হয়। এই বিকিরণ অনিয়মিত বলেই তাদের উপস্থিতি আগেই বোঝা যায় না।
গ্যালাকটোপিডিয়াতে অঁহকদের সম্পর্কে খারাপ কিছু নেই। মহাবিশ্বের অন্যসব বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গেই তাদের যুক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের স্থান হয়েছে রেড বুকে। রেড বুকে নাম ওঠার অর্থ এদের কাছে যাওয়া অতি বিপজ্জনক।
স্পেসশিপ লি-২০১
স্পেসশিপ লি-২০১ একটি সাধারণ ফেরি শিপ। এর কাজ সৌরমণ্ডলের ভেতরের গ্রহ এবং উপগ্রহ থেকে খনিজ দ্ৰব্য মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যাওয়া। খনিজ দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির সব বড় বড় কল-কারখানাই মঙ্গল গ্রহে করা হয়েছে।
স্পেসশিপ লি-২০১-এর মাল বহনের ক্ষমতা অসাধারণ। এর ইঞ্জিন। ইলেকট্রন এমিশন ইঞ্জিন। পুরনো ধরনের ইঞ্জিন হলেও ভারি ইঞ্জিন এবং কার্যকর ইঞ্জিন। সাধারণত .2c [c আলোর গতিবেগ গতিতে চলে। প্রয়োজনে এই গতিবেগ বাড়িয়ে .6c পর্যন্ত যাওয়া যায়।
লি সিরিজের স্পেসশিপ পরিচালনার জন্যে কোন মহাকাশ নাবিকের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ এনারবিক রোবট কম্পিউটারের সাহায্যে এই কাজ সুন্দরভাবে করতে পারে।
তবে লি সিরিজের দুশর উপরের নাম্বার শিপে অবশ্যই একজন মহাকাশ নাবিক লাগে। কারণ এই সিরিজ তৈরি করা হয়েছিল মিল্কিওয়ে গ্যালিয়াম ভেতরের মাইনিং-এর জন্যে। ইলেকট্রন এমিশন টেকনোলজি ছাড়াও এই জাতীয় মহাকাশযানে হাইপার স্পেস জাম্পের ব্যবস্থা আছে। দুশ সিরিজের এটি দ্বিতীয় মহাশূন্যযান। প্রথমটি লি-২০০ মহাশূন্যে বিধ্বস্ত হয়েছিল। বিধ্বস্ত হবার কোন কারণ জানা যায় নি। ধারণা করা হয় কোন বিচিত্র কারণে মহাশূন্যযানটি হাইপার স্পেসে জাম্প দেয়। সেট কোঅর্ডিনেট না থাকায় সেটা চিরদিনের জন্যে। হারিয়ে যায়।
এক হাজার টন গ্যালিয়াম ধাতু নিয়ে মহাকাশযান লি ২০১ বৃহস্পতির একটি উপগ্রহ থেকে মঙ্গলের দিকে রওনা হয়েছে। কনট্রোল প্যানেলে যে বসে আছে তার নাম নিম। বয়স মাত্র ২৭। মেয়েটি তিন মাস আগে মহাকাশ যান পরিচালনার সার্টিফিকেট পেয়েছে। তবে ট্রেনিং পিরিয়ড এখনো শেষ হয় নি। তাকে এক হাজার ঘণ্টার একা ফ্লাইং টাইম সংগ্রহ করতে হবে। নিম এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে দুশ একুশ ঘণ্টা। আজকের ফ্লাইট শেষ হলে আরো এগারো ঘণ্টা যুক্ত হবে।