আমাদের বলা হল মুসলামনরা ঘৃণ্য জাতি। সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েদের মুক্ত করব। তাহলে ঈশ্বর যদি সত্য হন আমার বোনকে জালেম খ্রীষ্টানের কব্জা থেকে মুক্তি দিবেন।
ফৌজি অফিসার পুরস্কারের বিনিময়ে একজন মুসলমান রাজাকে হত্যা করার কথা বলল। আমি রাজি হলাম। বলল, ‘টাকার পরিমাণ এমন হতে হবে যাতে আমার পরিবারকে ভাবতে না হয়।’
ওরা কথা দিল। বলল, ‘তুমি সাগরের ওপারে নিহত হলে সরকার তোমার পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেবেন।’
এরপর মারইউস দু’জন লোককে দেখিয়ে বলল, ‘এরাও আমার সাথে কারাগারে ছিল। এ দলে শরীক হতে রাজি হল ওরাও। অনেক প্রশ্ন করা হল আমাদের। জবাবে আশ্বস্ত করলাম। বললাম, আপন ধর্ম এবং জাতির সাথে প্রতারণা করব না। আসলে পরিবারের ভরণ পোষণের জন্যই আমার জীবন আমি বিক্রি করে দিয়েছি।
কারাগার থেকে বের করে এক পাদ্রীর কাছে নেয়া হল। তিনি বললনে, ‘একজন মুসলমানকে হত্যা করলে জীবনের সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। মেয়েদেরকে মুক্ত করতে পারলে স্বর্গ নিশ্চিত।’
পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘খোদা কোথায় থাকেন?’
তার জবাব আমার মনঃপুত হয়নি। ক্রুশে হাত রেখে শপথ নেয়ার পর ছাড়া পেলাম। বাড়ী গেলাম। ওরা আমার পরিবারকে প্রচুর অর্থ সম্পদ দিল। আমি চিন্তামুক্ত হলাম। বন্ধুরা; আমার শপথ পূর্ণ করতে দাও। দেখতে চাই খোদা কোথায় আছেন? একজন মুসলামন বাদশাকে হত্যা করলে কি আমি খোদাকে দেখতে পাব?’
‘তুমি একটা পাগল।’ কমাণ্ডার বলল, ‘এতক্ষণ যা বলেছ তা নিরেট পাগলের প্রলাপ।’
‘ও অনেক মূল্যবান কথা বলেছে।’ একজন বলল, ‘আমি তার সাথে থাকবো।’
‘আমার একটা মেয়ে প্রয়োজন।’ মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বরল মারইউস। ‘ওর জীবন এবং ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব আমার। মেয়ে ছাড়া আইয়ুবী পর্যন্ত পৌঁছা যাবে না। আসার সময় থেকে তার সাথে একা দেখা করার কথা ভাবছি।’
মুবি দাঁড়াল। মারইউসের পাশে গিয়ে বলল, ‘আমি ওর সঙ্গে যাব।’
‘তোমাকে অনেক কষ্টে মুক্ত করেছি।’ কমাণ্ডার বলর, ‘এমন বিপজ্জনক অভিযানে যাবার অনুমতি আমি তোমাকে দেব না।’
‘আমি সতীত্ব হারিয়েছি। এর প্রতিশোধ আমি নেব। আইয়ুবীর শোবার ঘরে ঢোকা আমার জন্য সহজ। মুসলামন যত ক্ষমতাবানই হোক, সুন্দরী নারী দেখলে ওদের মাথা ঘুরে যায়। ও কল্পনাও করতে পারবে না, আমি হব তার জীবনের শেষ নারী।’
অনেক তর্কবিতর্কের পর মারইউস একজন সংগী এবং মুবিকে নিয়ে যাবার জন্য তৈরী হল। সবাই প্রার্থনা করল তাদের সাফল্যের জন্য।
রওয়ানা হল তিনজনের কাফেলা। সাথে দুটো উট। একটাতে মুবি, অন্যটাতে দু’জন পুরুষ।
ওদের কাছে ছিল মিসরের দিরহাম এবং স্বর্ণমূদ্রা। পরণে জুব্বা। মারইউসের দীর্ঘ দাড়ি। অত্যাধিক পরিশ্রমে শরীরের রং কিছুটা কালো। দেখলে ইটালীর লোক মনে হয়না, ইইরোপীয় বলে সান্দেহ করবে যে কেউ। কিন্তু সমস্যা ছিল একটি, আরবী জানত না মারইউস। মুবি এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি মিসরে ভাষায় পারদর্শী।
রাতে রওয়ানা হল ওরা। মুবির পরিচিত পথ। ওড়নায় মুখ ঢেকে রেখেছে ও।
ভোরে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই পাওয়া গেল ট্র্যাক। ঘোড়ার পায়ের পরিচিত চিহ্ন। অনেকগুলো ঘোড়া গেছে এ পথে।
খৃস্টানদের কাফেলা দ্রুত চলছিল। মাঝ রাত পর্যন্ত থামেনি খৃস্টানরা। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে ভোর রাতে আবার যাত্রা শুরু করেছে।
মারইউস ঘোড়া নেয়নি। উট দীর্ঘপথের ক্লান্তি সইতে পারে। না খেয়ে থাকতে পারে অনেকক্ষণ।
ট্র্যাক না পাওয়ায় রাতে পথ চলতে পারেনি মুসলমানরা। দিনের বেলা তই যতদূর সম্ভব দ্রুত ছুটছিল। সূর্য ডোবার এখনও সামান্য বাকী, সামনে দেখা গেল লাশের সারি।
বালিয়ানকে চিনতে পারল আলী বিন সুফিয়ানের সহকারী। পাহাড়ী জন্তু তার সংগীদের লাশের বেশীর ভাগ গোশত খেয়ে ফেললেও তার চেহারা ছিল অক্ষত। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল ওরা। বুঝতে পারছিল না কি হয়েছে। রক্ত বলছে বেশী দিন আগে নিহত হয়নি। বিদ্রোহের দিন মৃত্যু হলে রক্তের দাগ থাকত না।
ট্রাক ধরে আবার এগিয়ে চলল কাফেলা। আধমাইল পর উটের পায়ের চিহ্নও দেখা গেল। সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলল ওরা।
সামনে উঁচুনীচু টিলা। এঁকে বেঁকে চলে গেছে পাহাড়ী পথ। অন্য কোন রাস্তা নেই। এ পথেই গেছে খৃষ্টান কাফেলা।
পাহাড় শ্রেণী পেরিয়ে এল ধাওয়াকারীরা। সামনে বিস্তীর্ণ মাঠ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বাধ্য হয়ে ওদের থামতে হল।
ভোরেই রওয়ানা হল আবার। খানিক চলার পর সাগরের নির্মল বাতারের স্পর্শ পেল ওরা দেহে। বুঝল, সাগরের কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা। কিন্তু খৃস্টানদের দেখা যাচ্ছে না এখনো।
এক জায়গায় দেখা গেল খাবারের উচ্ছিষ্ট পড়ে আছে। রাতে এখানে কেউ বিশ্রাম করেছে।
ট্র্যাক ধরে আবার ঘোড়া ছুটল। সূর্য মাথার ওপর থেকে সামান্য নুয়ে পড়েছে। ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম দেয় হল খানিক। রওয়ানা হল আবার। সাগরের বাতাস জোরালো হচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে কাফেলা। চোখের সামনে ভেসে উঠল সাগর পাড়ের টিলা আর বালিয়াড়ি।
ট্র্যাক দেখে মনে হচ্ছে অনেকগুলো ঘোড়া এগিয়ে গেছে। টিলার প্রায় কাছে এসে পড়েছে ওরা। টিলার ওপর দু’জন লোক। এদিকেই তাকিয়ে আছে। ওদের দেখে দ্রুত বেলাভূমিতে নেমে গেল লোক দু’টি।
ঘোড়ার গতি আরও তীব্র হল। থামতে হল পাহাড়ের কাছে এসে। ওপাশে যাওয়ার কয়েকটি পথ। একজনকে পাঠানো হল পথ দেখার জন্য।