‘কিন্তু না খেলে যে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।’
তীর্যক কটাক্ষ হেনে মেয়েটা বলল, ‘আমি অসুস্থ হলে আপনার কি? আমি কি আপনার ইয়ে…’ বলেই লজ্জায় আরক্তিম হয়ে ওখান থেকে সরে পড়ল। মেয়েটার এই কটাক্ষ গেঁথে রইল ওর মনে।
নিশুতি রাত। সবাই ঘুমিয়ে আছে। আলগোছে উঠল কমাণ্ডার। মেয়েটার কাছে গিয়ে আলতো করে টোকা দিল তার গায়ে। চোখ মেলে ওকে দেখেই হাসল মেয়েটা। ওরা সরে এল নিরিবিলি জায়গায়।
মেয়েটা বলর, ‘আমি এক অসহায় তরুণী। ভাগ্য খারাপ বলে আজ এই করুণ পরিণতি। খৃস্টান সৈন্যরা আমাকে অপহরণ করে নিয়ে তুলেছে জাহাজে। অন্য মেয়েদের সাথে জাহাজেই পরিচয় হয় আমার। তাদেরকেও অপহরণ করা হয়েছে। হঠাৎ জাহাজে আগুন লাগায় আমাদের তুলে দেয়া হল একটা নৌকায়। নৌকা তীরে ভিড়ল। গোয়েন্দা ভেবে আমাদেরকে বন্দী করল সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর সৈন্যরা।
কমাণ্ডার জানত না সুলতানকেও এ কল্পকাহিনীই শুনিয়েছে ওরা।
কমাণ্ডারকে শুধু বলা হয়েছে, ‘এরা অত্যন্ত বিপজ্জনক বন্দী। কায়রোর গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ওদের হস্তান্তর করতে হবে।’
কমাণ্ডার তাকে তার অপারগাতর কথা জানিয়ে বলল, ‘এ ব্যাপারে আমি তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারছি না।’
মেয়েটা মাত্র তুনীর মাত্র একটা তীর ছুঁড়েছে। এখনো অনেক তীর বাকী। বলল, ‘আমি তোমার কাছে কোন সাহায্য চাইনা। তুমি সাহায্য করতে চাইলেও আমি বাঁধা দেব। জানিনা তোমাকে কেন এত ভাল লাগে। আমার জন্য তুমি কোন বিপদে পড়বে, তা আমি হতে দেবনা। আমার সমব্যাথী কেউ নেই। মেয়েরা আমার আপন কেউ নয়, পুরুষদের চিনিনা। মনে হল তোমার মনটা বড় ভাল এজন্য তোমার কাছে আমার দুঃখের কথা বলে মনটা হালকা করছি।’ যুবতি কমাণ্ডারের আরো কাছে সরে এল।
কাজ হল এতে। যুবতীর কাঁধে হাত রেখে সহানুভূতির সুরে বলল কমাণ্ডার, ‘তোমাদের জন্য আমার কষ্ট হয়। কিন্তু এ অবস্থায় তোমার জন্য আমি কিইবা করতে পারি।
আরেকটা তীর ছুঁড়ল ও। বলল, তোমাদের সুলতানকে আমার এ দুঃখের কাহিনী শুনিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তিনি দয়া করে আমাদের দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তিনি আমাকে তার তাঁবুতে ডেকে নিলেন। মদে মাতাল হয়ে সারারাত আমার দেহ নিয়ে খেলা করলেন। ও আস্ত একটা জানোয়ার। মদ খেলে সে আর মানুষ থাকে না। আমার হাড়গোড় সব ভেঙে দিয়েছে।’
কমাণ্ডারের রক্তে আগুন লাগল, জেগে উঠল তার পশু শক্তি। মিসরীয় পৌরুষ নিয়ে সমবেদনার সুরে তার গায়ে, মুখে হাত বুলাতে বুলাতে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ‘আমাদের বলা হয়েছে আইয়ুবী একজন খাঁটি মুমিন। একজন ফেরেস্তা। মদ এবং নারীকে তিনি ঘৃণা করেন। অথচ….’
মেয়েটা তার দেহের ভার কমাণ্ডারের বুকে ছেড়ে দিতে দিতে বলল, ‘আমাকে তো এখন তার কাছেই নিয়ে যাচ্ছ। বিশ্বাস না হলে রাতে দেখো আমি কোথায় থাকি? আমাকে সুলতান জেলে দেবে না, রাখবে তার নিজস্ব হারেমে। ভয়ে এখনি আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।’
এ ধরনের কথায় সুলতানের ওপর কমাণ্ডারের মন বিষিয়ে উঠছিল। কমাণ্ডার জানতো না, যুবতী গোয়েন্দারা এ হাতিয়ার দিয়েই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে। মেয়েটার প্রেমে হাবুডুব খেতে লাগল সে।
‘যদি তুমি আমাকে এ অপমানকর জীবন থেকে মুক্তি দাও, আমি চির জীবনের জন্য তোমার হয়ে যাব। আমার পিতা বিত্তশালী। আমাকে এ অপমানকর জীবন থেকে উদ্ধার করেছ জানতে পারলে তিনি তোমাকে আনন্দের সাথেই গ্রহণ করবেন। চলো আমরা সাগরের ওপারে পালিয়ে যাই।’
‘কিন্তু…’
‘শোন, কোন কিন্তু নয়। দেশে গিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করব। বাবা তোমায় বাড়ী দেবেন, সম্পদ দেবেন। তুমি নিশ্চিন্তে ব্যবসা করে হেসেখেলে জীবনটা পার করতে পারবে।’
কমাণ্ডার বলল, ‘কিন্তু আমি আমার ধর্মত্যাগ করতে পারব না।’
মেয়েটা কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল, ‘আমি আমার ধর্ম ছেড়ে দেব।’
এরপর ওরা বিয়ের পরিকল্পনা করতে লাগল। মেয়েটা বলল, ‘আমি তোমাকে বাধ্য করছিনা, ভাল করে ভেবে দেখো কি করবে। আমি শুধু একটা কথা জানতে চাই, আমি তোমাকে যেমন ভালবাসি, তুমিও তেমনটি বাস কিনা। যদি তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও, তবে কায়রো যেতে দেরী করো। একবার কায়রো গেলে তুমি আমার গন্ধও পাবে না।’
মেয়েটা সফর দীর্ঘায়িত করতে চাইছিল, কারণ পলানোর পরিকল্পনা করছিল রবিন। তিনদিনে সফর শেষ হয়ে গেলে তা সম্ভব নয়। ঘুমন্ত প্রহরীদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের হত্যা না করলে পালানো যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের। ওরা নিশ্চিন্ত না হলে ও সুযোগ পাওয়া যাবে না।
এ জন্য মেয়েটাকে কমাণ্ডারের পেছনে লাগিয়েছে ওরা। প্রথম সাক্ষাতেই মেয়েটা সফল। যৌবন পুষ্ট দেহটা কমাণ্ডারকে উজাড় করে দিয়েছে সে। কমাণ্ডার উচ্চপদস্থ কোন অফিসার নয়। এমন সুন্দরী যুবতী সে কখনও দেখেনি। কল্পনা দেবী তার হাতের মুঠোয়। ভুলে গেল সে কর্তব্য এবং ধর্ম।
সকালে কমাণ্ডার ঘোষণা করল, ‘পশুগুলো ক্লান্ত, আজ সফর করব না।’
ঘোষণা শুনে সবাই খুশী। ময়দানের কঠিন নিয়ম কানুনে ওরা হাঁফিয়ে উঠেছিল। কায়রো পৌঁছনোর কোন তাড়া ওদের নেই।
বিশ্রাম আর গল্পগুজবে কেটে গেল দিন। কমাণ্ডারের সময় কাটল মেয়েটার কাছে।
রাত নামল। ঘুমিয়ে পড়ল সবাই। মেয়েটাকে নিয়ে দূরে সরে এল কমাণ্ডার। সুখের অতলে হারিয়ে গেল দু’জনে।