নিঃশেষ হয়ে গেল সুদানী বাহিনী।
ওদিকে জংগীর পাঠানো ফৌজ কায়রো এসে পৌঁছল। ইচ্ছে করলে সুলতান আইয়ুবী সুদানীদের নির্বিচারে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন। সুদানী কমাণ্ডাররা বুঝেছিল তারা অপরাধী, নিঃশেষ হয়ে গেছে ওদের সামরিক শক্তি। ওরা যে অপরাধ করেছে তাতে একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই ওদর প্রাপ্য।
কিন্তু সুলতান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। সৈন্যদেরকে সরকারী জমি দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হল। এরপর ঘোষণা করা হল মিসরের সেনাবাহিনীতে ভর্তিচ্ছুদের স্বাগত জানানো হবে।
জংগীর পাঠানো সৈন্য, মিসরের ফৌজ এবং সুদানী বাহিনীর নতুন লোকদের নিয়ে সুলতান আইয়ুবী এক সুশৃখল এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুললেন।
আলী বিন সুফিয়ান তৈরী করলেন দুঃসাহসী কমাণ্ডো এবং গেরিলা বাহিনী।
খৃস্টানরাও অপরূপা সুন্দরী তরুণী এবং গুপ্তচরদেরকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিল। দু’পক্ষেরই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন প্রায়।
সুলতান এসব সুন্দরী তরুনীদের বিষাক্ত ছোবল কিভাবে মোকাবেলা করবেন আর খৃস্টানরাই বা কিভাবে মোকাবেলা করবে সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর সুশৃঙ্খল বাহিনীর উভয় পক্ষ তা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে রইল।
কিন্তু এ পায়তারা শেষ হতে বেশী দিন সময় লাগল না। অল্পদিনের মধ্যেই ভয়ংকর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল ওরা।
রোমের এক উপশহর। জরুরী সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন খৃস্টান নেতৃবৃন্দ। এর মধ্যে রয়েছেন সম্রাট অগাস্টাস, সম্রাট রিমাণ্ড, এলমার্ক, সপ্তম লুইয়ের ভাই রবার্ট।
এদের মধ্যে সবচেয়ে ক্রুদ্ধ দেখাচ্ছিল এমলার্ককে। খৃস্টানদের সম্মিলিত নৌবাহিনীর প্রধান তিনি। সুলতান সালাহউদ্দীনের হাতে পর্যুদস্ত হয়ে মেজাজ বিগড়ে গেছে তারা। বিজয় দূরে থাক, উপকূলের কাছেও ঘেঁষতে পারেনি সে। যারাই মিসর উপকূলে পা রাখার দুঃসাহস দেখিয়েছে, তারা হয়েছে বন্দী, নয়তো নিহত।
সুলতান আইয়ূবীর গোলন্দাজদের তোপের আঘাতে পুড়ে গেছে জাহাজের পাল এবং মাস্তুল। ভাগ্য ভাল যে সিপাইরা তার জাহাজের আগুন নিভাতে সক্ষম হয়েছিল।
পাল ছেঁড়া জাহাজ ঢেউয়ের দোলায় এগিয়ে গিয়ে পড়ল সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে। অনেক জাহাজ এবং নৌকা ঝড়ে ডুবে গেল। তার জাহাজের মাঝি মাল্লা সাহসিকতার সাথে ঝড়ের মোকাবিলা করল। একদিন পৌঁছল সমুদ্র উপকূলে। তীরে নেমেই মাঝি মাল্লাদের পুরস্কৃত করল এমলার্ক।
খৃস্টান নেতারা তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সম্মেলনের উদ্দেশ্য পরাজয়ের কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করা। কেউ কি তাদের সাথে প্রতারণা করেছে? কে সে, নাজি?
তার চিঠি পেয়েই নৌসেনা পাঠানো হয়েছিল। নাজির চিঠি তাদের কাছে নতুন নয়। আগের লেখাগুলোর সাথে এ লেখার হুবুহ মিল আছে।
ওরা আবার চিঠি খুলে বসল। কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। কায়রো থেকে গোয়েন্দারা কোন সংবাদ দেয়নি। নাজি কোথায় তাও ওরা জানেনা।
রাগে কাঁপছিল এমলার্ক। আইয়ুবীকে হাতে পায়ে শিকল পরিয়ে নিয়ে আসবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল সে। তার দর্প চুর্ণ হয়ে গেছে। এমলার্ক পরাজিত, ক্লান্ত।
কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলো না ওরা। সম্মেলন পরদিনের জন্য মুলতবী ঘোষণা করা হল।
রাতে মদের আসর চলছে। এক অপরিচিত মুখ ভেতরে এল। শুধু রিমাণ্ড চেনে তাকে। বিশ্বস্ত গোয়েন্দা। আক্রমণের দিন সন্ধ্যায় তাকে মিসরের উপকূলে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। তার চোখের সামনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে খৃস্টানদের নৌবহর।
রিমাণ্ড গোয়েন্দার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিল। ভিড় জমে উঠল তার চারপাশে। গোয়েন্দা বলল, ‘আহত হওয়ার ভান করে রবিন আইয়ুবীর ছাউনিতে পৌঁছে গেছে। রবিনের সহযোগী পাঁচজন ছিল। ব্যবসায়ীর পোশাকে। তাদের একজন ক্রিস্টোফার। সে তীর ছুঁড়েছিল আইয়ুবীকে লক্ষ্য করে। লাগেনি।
ধরা পড়েছে পাঁচজনই। সাথে সাতটা মেয়ে। ওরা চমৎকার গল্প ফেঁদেছিল। আইয়ুবী মেয়েগুলোকে রেখে ছেড়ে দিয়েছিল বাকী পাঁচজনকে। কিন্তু এদের গোয়েন্দা প্রধান আলী বিন সুফিয়ান এসে সবাইকে গ্রেফতার করল। কথা আদায় করতে গিয়ে অত্যাচার করে মেরে ফেলল একজনকে। অপরাধ স্বীকার করল অন্যরা।
আমি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়েছিলাম। সুলতান আমাকে আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব দিলেন। শুনেছি সুদানীদের বিদ্রোহ দমন করা হয়েছে। বড় বড় অফিসারদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিনসহ এগারজন বন্দী করা হয়েছে। সুবিনা আর তালাশকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছাউনিতে আইয়ুবীও নেই, নেই আলী বিন সুফিয়ানও। অনেক টাকার বিনিময়ে একটা নৌকা জোগাড় করে আমি পালিয়ে এসেছি।
রবিন এবং অন্যদের উদ্ধার না করলে মারা পড়বে। ছেলেদের না হলেও মেয়েগুলোকে মুক্ত করা জরুরী। ওরা শুধু সুন্দরী ও যুবতীই নয়, মুসলমান আমীর ওমরাদের ফাঁসানোর জন্য ওদেরকে দীর্ঘদিন ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। এরকম সাতটা চৌকস মেয়ে তৈরী করতে অনেক সময় ও কাঠখড় পোড়াতে হবে আমাদের। মুসলমানরা তাদের কি অবস্থা করেছে কল্পনাও করতে পারবেন না।’
‘এ ধরনের সেক্রিফাইস তো আমাদের করতেই হবে।’ সম্রাট অগাস্টাস বললেন, ‘মেয়েদের মেরে ফেলা হবে এ নিশ্চয়তা তোমাকে কে দিল?’
রিমাণ্ড বলল, ‘কিন্তু তাই বলে মুসলমানরা ওদের সাথে পশুর মত আচরণ করবে আর আমরা চুপ করে বসে থাকব, তা হয়না। আমি ওদের মুক্ত করার চেষ্টা করব।’