‘এদের আমি ভীষণ ভয় করি আলী। ইসলাম নিশ্চিহ্ন হলে এসব নামধারী মুসলমানের হাতেই হবে। আমাদের ইতিহাস এখন বিশ্বাসঘাতকের ইতিহাস, ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। আমার মন বলছে, এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ নামে থাকবে মুসলমান, কিন্তু চিন্তা করবে শত্রুর মস্তিষ্ক দিয়ে। মসজিদের চেয়ে পতিতালয় বেশী থাকবে, অথবা ওদের ঘরগুলোই হয়ে উঠবে একেকটা পতিতালয়।
অমুসলিমরা মুসলমানকে সে পথেই নিয়ে এসেছে। মিসরে দেখা যাচ্ছে ঝড়ের পূর্বভাস। তোমার সংস্থাকে আরও শক্তিশালী কর, শত্রুর এলাকায় গিয়ে কমাণ্ডা হামলা এবং সংবাদ সংগ্রহের জন্য সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং বুদ্ধিমান যুবকদের বাছাই কর। গুপ্তচর বৃত্তির ময়দানে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হও আলী।’
‘আপনি দোয়া করুন, নতুন করে যে সব যুকব ভর্তি হচ্ছে তাদের মধ্যে আমি প্রাণের স্পন্দন দেখতে পাচ্ছি। তাদের নিষ্ঠা ও আগ্রহ আমাকে আশাবাদী করে তুলছে। এখানকার খবর কি?’
বেলাভূমিতে কুড়িয়ে পাওয়া বন্দীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তুমি ওদের সাথে একাবর দেখা করো।
প্রহরীকে ডাকলেন আইয়ুবী। বললেন, ‘আমাদের নাস্তা দাও।’
নাস্তা নিয়ে এল প্রহরী। খেতে খেতে কথা বলছিলেন আইয়ুবী, ‘গতকাল আরো কিছু আহত খৃষ্টান সৈনিককে এখানে আনা হয়েছে। এদের একজনকে আমার সন্দেহ হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে সাধারণ সৈনিক নয়। এছাড়া ঘটনাচক্রে একদল মেয়েকেও এখানে আশ্রয় দিতে হয়েছে। ওদের নিয়ে এসেছে পাঁচজন ব্যবসায়ী। এদের সাথেও একটু দেখা করো।
‘মেয়েরা এখানে কিভাবে এল?’
মেয়েদের ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা যা বলেছিল সুলতান আলীকে তা শোনালেন। বললেন, ‘আসলে ওদের আশ্রয় দিয়ে আমার আওতায় নিয়ে এলাম। ওরা গরীব, দীর্ঘদিন জাহাজে ছিল। কিন্তু দেখে তা মনে হয়না। ওদের আলাদা তাঁবুতে রাখা হয়েছে। তুমি নাস্তা সেরে আগে ওদের সাথেই দেখা করো।
এরপর মৃদু হেসে বললেন, ‘কাল উপকূলে হাঁটছিলাম। হঠাৎ কোত্থেকে একটা তীর এসে দু’পায়ের ফাঁকে বালিতে গেঁথে গেল। রক্ষীরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে, কোন তীরন্দাজ পায়নি। ওরা ওই এলাকা থেকে পাঁচজন ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে এসেছিল। ওরাই মেয়েগুলোকে এখানে রেখে গেছে।’
ওদের চলে যেতে দেয়া হয়েছে শুনে অবাক বিস্ময়ে সুলতানের দিকে তাকিয়ে রইলেন আলী।
‘আপনি তাদের যেতে দিলেন! রক্ষীরা ওদের মালপত্তর তল্লাশী নিয়েছে? সন্দেহ করা যায় এমন কিছু পাওয়া যায়নি ওদের কাছে?’
গভীর মনোযোগ দিয়ে তীরটা দেখলেন আলী। বললেন, ‘এক গোয়েন্দার দৃষ্টি আর সুলতানের দৃষ্টিতে অনেক পার্থক্য। সবার আগে ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করব।’
তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেন আলী বিন সুফিয়ান। একজন প্রহরী সালাম দিয়ে বলল, ‘আপনার সাথে একজন কমাণ্ডার কথা বলতে চাচ্ছেন।’
‘কি ব্যাপার?’
কমাণ্ডার এগিয়ে এসে বলল, ‘কালকে সাতজন মেয়ের মধ্যে একজন পালিয়ে গেছে। এ ছাড়া কাল রাতের ডিউটি কমাণ্ডার ফখরুল মিসরীকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রহরী বলছে, ডিউটি বদলের সময় তিনি তা চেক করতে বেরিয়ে ছিলেন। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি। সুলতানকে এ খবরটি দেয়া জরুরী।’
গভীর ভাবনায় ডুবে গেলেন আলী বিন সুফিয়ান। কমাণ্ডার তার কাছে এসে অনুচ্চ কণ্ঠে বলল, ‘একটা খৃস্টান মেয়ে চলে যাওয়ার ঘটনা কি খুব গুরত্বপূর্ণ?’
খানিকটা ভেবে নিয়ে আলী বললেন, ‘শোন, সুলতানকে এখন কিছু বলার দরকার নেই। ফখরুল যখন টহল দিতে বেরিয়েছিলেন তখনকার সব প্রহরীদের ডেকে নিয়ে এস। কাল যেসব রক্ষী সুলতানের সাথে সাগর পারে গিয়েছিলেন তাদেরও ডাকবে।’
খবর পেয়ে চারজন প্রহরী এসে হাজির হল। আলী বললেন, ‘কাল যেখানে ব্যবসায়ী এবং মেয়েদের পেয়েছ সেখানে যাও। ব্যবসায়ীরা না গিয়ে থাকলে আমার না আসা পর্যন্ত যেতে দেবে না। না পেলে জলদি ফিরে এস।’
রক্ষীরা চলে গেল। মেয়েদের তাঁবুর কাছে পৌঁছলেন আলী। তাঁবুর বাইরে বসে আছে মেয়েরা। পাশে দাঁড়িয়ে আছে পাহারাদার। আলী মেয়েদের মুখোমুখি হয়ে আরবীতে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমরা এখানে ছ’জন কেন, আরেকজন কোথায়?’
ওরা পরস্পরের দিকে চাইতে লাগল। আলীর দিকে তাকিয়ে মাথা এপাশ ওপাশ করে বোঝালো তারা আরবী জানেনা।
‘তোমরা সবাই আমার ভাষা বোঝ।’
ওরা হতবাক দৃষ্টিতে আলীর দিকে তাকিয়ে রইল। ওদের সহজ সরল চেহারা দেখে দ্বিধায় পড়লেন গোয়েন্দা প্রধান। এরপর মেয়েদের পেছেনে গিয়ে আরবী ভাষায় বললে, ‘এদের উলংগ করে বারজন কাফ্রী সেপাই ডেকে নিয়ে এস।’
ওরা সবাই এক সঙ্গে পেছনে ফিরল। আতংকিত কণ্ঠে দু’তিনজন একসঙ্গে বলে উঠল, ‘মেয়েদের সাথে তোমরা এমন ব্যবহার করতে পারনা। আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিনি।’
হেসে ফেললেন আলী বিন সুফিয়ান। ‘তোমাদের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করব। এক ধমকেই আরবী বলতে শুরু করেছ। এবার ধমক ছাড়াই বল সপ্তম মেয়েটা কোথায়?’
ওরা অজ্ঞতা প্রকাশ করলে আলী বললেন, ‘এ প্রশ্নের জবাব অবশ্যই তোমরা দেবে। একটু আগেও তোমরা বলেছ আরবী জানোনা, এখনতো দিব্বি আরবীতে কথা বলতে পারছ। ঠিক আছে, প্রশ্নের জবাব কি করে পাওয়া যায় আমি দেখছি। সেন্ট্রি, ওদের তাঁবুর ভিতরে নিয়ে যাও।
রাতের প্রহরী এল। ওদের অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন গোয়েন্দা প্রধান। মেয়েদের তাঁবুর প্রহরী বলল, ‘আমাকে দাঁড় করিয়ে তিনি বন্দীদের তাঁবুর দিকে গেলেন। কিছুক্ষণ পর একটা শব্দ শুনলাম, ‘কে তুমি, নেমে এস।’ মনে হল টিলার ওপর একটা ছায়াও দেখেছি। তবে খুবই অস্পষ্ট।