আমার উপরিউক্ত কথাগুলো অবশ্য সবই মনে মনে। ভাষায় প্রকাশ করলেই এক্ষুণি এমন এক ক্যাঁত করে লাথি কষাবে না। পাক খেতে খেতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে সেই নর্দমায়। তার থেকে চুপ মেরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর তাছাড়া মেয়েছেলের কথায় বেশী কান দিতে নেই। কান দিলেই অশান্তি।
আমি আবার খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাই আমি যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। যাক শ্যামলীর সাথে কথা না বাড়িয়ে একটু চা খাবার প্রস্তাব রাখলাম।
শ্যামলী তাড়াতাড়ি চা তৈরী করতে গেল। হঠাৎ একটা উঃ উঃ করে শব্দ। আমি তাড়াতাড়ি রান্না ঘরের দিকে ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি বাঁ হাত দিয়ে ডানহাত খানা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে যন্ত্রণার ছাপ। চোখ ছলছল।
আমি তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে? কোথাও পুড়ে গেল নাকি?
শ্যামলী ডান হাতের মাঝখানটা দেখিয়ে বলল, এই যে এইখানটা পুড়ে গেছে। জ্বালা করছে।
পুড়ে যাবার বিশেষ লক্ষণ আমার অবশ্য চোখে পড়ল না হাতের মাঝখানে সামান্য একটু ফোঁসকা।
তবুও দরদী কণ্ঠে বললাম, ইস খুব জ্বালা করছে তাই না? কি করে পুড়ল?
—এই একটু পাঁপড় ভাজতে গিয়েছিলাম, আর তেল ছিটকে এসে পড়েছে।
-কি দরকার ছিল। একটু আগেই তো এত সব খেলাম এখন শুধু চা হলেই হতো।
—থাক্ চলুন।
বার্নল জাতীয় মলম আছে?
-হ্যাঁ আছে, কিন্তু ও তো লাগালে খুব জ্বলবে।
–আরে, না না আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।
তারপর আমি শ্যামলীকে রান্নাঘর থেকে এনে ধীরে ঘীরে নরম বিছানায় শুইয়ে দিলাম। সামনের দিকে প্রসারিত হয়ে আছে শ্যামলীর নগ্ন হাত। আমি বার্নলের টিউব থেকে মলম নিয়ে হাতে বার কয়েক ঘষতেই হারে জ্বালাটা কমে গেল। শ্যামলী মিষ্টি হেসে বলল, আপনি বেশ যাদু জানেন দেখছি। আমার জ্বালাটা অনেকটা কমে গেছে।
—আপনার জ্বালা জুড়োবার জন্যই তো আমার বেঁচে থাকা। যেদিন থেকে শুনেছি আপনার প্রেমিক আপনাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে। আর সেই দুঃখে আপনি এখনো বিয়ে করেন নি। সেদিন থেকেই বুঝেছি আপনার কত দুঃখ, কত জ্বালা।
শ্যামলী বলল, নিন্ এবার হাতটা ছাড়ুন, অনেকক্ষণ ধরে আছেন।
—হাতটা ছাড়তে প্রাণ চায় না, মনে হয় চিরকাল ধরে রাখি। কি সুন্দর আপনার হাতখানা, কি নরম। ঠিক মাখনের মতো।
শ্যামলী মুচকি হেসে বলল, তাই নাকি! আপনার স্ত্রী-এর হাতও তো ঠিক এইরকম তাই না।
—কি যে বলেন। সে হাত শিলনোড়ার মতো শক্ত পাথর। আদর করে ধরলে হারে মালিক খ্যাক করে ওঠে।
আমার কথা শুনে শ্যামলী বলল, আপনারও খুব দুঃখ তাই না।
—হ্যাঁ কে আর বুঝলো বলুন।
এদিকে শ্যামলী আমার পাশে এসে, গায়ে গা লাগিয়ে বসেছে। আর তখনই আমার একমাত্র স্ত্রী মধুমতীর কথা মনে পড়ছে। গায়ে গায়ে শ্যামলী। ত্বকে ত্বকে শ্যামলী, দেহের উত্তাপ, চুলের সুগন্ধা, শরীরের পাহাড়-পর্বত উপত্যকায়।
ধ্যাত তেরিকা মধুমতী মোটা, অম্বল, বাতের রুগী। ধীরে ধীরে আমার একটা হাত শ্যামলীর কাঁধ আর খোঁপার ওপর দিয়ে ঘুরে গিয়ে আঙুলগুলো ওপাশের বুকের ওপর খেলা করছে। এদিকে শাড়ির একটা দিক খুলে পড়েছে। শ্যামলীর বিশাল খোঁপাসহ মাথা আমার কাঁধে। উত্তেজিত গরম নিঃশ্বাসে আমার বুক ওঠা নাম করছে, খোঁপা খুলে গেছে, তখন আমি ভাবছি, শ্যামলী কি সুন্দরী।
শ্যামলীর লাল টুকটুকে ঠোঁটের ওপর আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁট। আমার জিভ ক্ষুধার্তভাবে চলে এলো শ্যামলীর সুগন্ধী মুখের ভেতরে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেতে লাগলো সুন্দর সারিবদ্ধ দাঁত, জিভ, ঠোঁটের ভেতরের নরম জমি। এতে শুধু সুখ নয় স্বর্গসুখ। ঘরের বউকে ছেড়ে অন্য মেয়ের সাথে…বেশ ভালই লাগে।
আমি শ্যামলীর কানের কাছে মুখ রেখে বলি, শ্যামলী তুমি কি দারুণ। আমার কথা শুনে শ্যামলী খিলখিল করে হেসে ওঠে।
আর তখনই আমার চুলের পেছনের দিকে একটা প্রচণ্ড টান অনুভব করি। ঐ টানেই আমার দেহখানি শ্যামলীর দেহ থেকে আলাদা হয়ে সোজা মাটিতে দাঁড়িয়ে পড়ি। তারপর পিছনে ফিরে দেখি আমার বিয়ে করা একমাত্র স্ত্রী মধুমতী।
মধুমতী আমায় শ্যামলীর সাথে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে ব্যাস! শুরু করে দিলেন—
ও শ্যামলীর সাথে এত দূর। আমাকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি। আজই আমি গায়ে কোরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন দিয়ে দেবো। তখন বুঝবে ঠ্যালা। কত ধানে কত চাল, স্ত্রী হত্যার দায়ে জেলের ঘানি টানতে হবে বারো বছর।
তা অবশ্য ঠিক কথা। স্ত্রী এখন জনগণের সম্পত্তি। গায়ে একটু আঁচড় লাগলেই প্রথমে জনগণের প্যাদানি। তারপর আদালতের কাঠগড়া। কিন্তু ওনারা আমার মাকে কাশীবাসী করাবেন। আমাকে সারা জীবন হামনদিস্তেয় ফেলে পিষবেন। কিন্তু কিছু বলা যাবে না। সারাজীবন শুধু বলির পাঁঠার মতো ব্যা ব্যা করে চল।
অতঃপর কি আর করা যাবে। সুবোধ বালকের মত আমি আবার হতাশ মনে আমার স্ত্রীর হাত ধরে বাড়ীর মুখে চললাম।