যাক্ আপনাদের সামনে আমার উপর বৈপ্লবিক চরিত্রের পরিচয়টা দিতে চাই না।
এবার আমার ফুলটুসি, আমার প্রাণকুমারী শ্যামলির কথা বলি। এখন রোজই সকাল আটটার মধ্যে বাস-স্ট্যাণ্ডে পৌঁছে যাই। ঐসময় শ্যামলীও বাসে ওঠে। একই সাথে দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কখনো বা ভাগ্যে কুলোলে পাশাপাশি বসে দুজনে সুখ দুঃখের কথা বলতে বলতে অফিসে যাই। এ যে কি থ্রিলিং তা ঠিক মুখে বলা যায় না।
আমাকে এত সকাল সকাল দেখে অফিসের লোকেরা তো একেবারে ‘থ’। কি হলো! আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো এর রহস্য। কিন্তু সত্যি কথাটা বলতে পারলাম না।
অফিসে থেকে ফেরার সময়ও প্রায়ই আমরা একটুখানি হেঁটে আউটট্রাম ঘাটে গিয়ে পাশাপাশি বসতাম। নানারকম কথা বলতাম। সিনেমা হলের অন্ধকারে বসে ওর দিকে হাত বাড়ালাম। শ্যামলী অবশ্য এসব কিছু আপত্তি করত না। মনে হত শ্যামলীও বোধ হয় আমাকে ভালবাসতে চাইছে। কেউ কি কোনদিন একা বাঁচতে পারে। সবাই সঙ্গ চায়, সঙ্গী সঙ্গীনী চায়। প্রায়ই লক্ষ্য করতাম, শ্যামলীর মধ্যে একটা পাপের প্রবল আকর্ষণ আছে।
মধুমতী দু-চারদিনের জন্য তার পিত্রালয়ে গেছেন আমিও একেবারে ঝাড়া হাত পা। একদিন রবিবার শ্যামলী আমায় সকালে চা জলখাবার নিমন্ত্রণ করেছে। সকাল সকালই চলে গেছি। গিয়ে দেখি চারদিক নিস্তব্ধ। কাউকে না ডেকেই ঘুরে ঢুকে দেখলাম। শ্যামলী বড় লোভনীয় ভঙ্গীতে বিছানায় শুয়ে আছে। বুকের ওপর থেকে শাড়ির আঁচলখানা সামান্য সরানো। পরনে লাল রঙের ব্লাউজ। শরীরটা যেন সেই ব্লাউজ ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে। উত্তেজনায় বুকের ভেতরটা কিরকম ওঠা-নামা করছে। কি করব বুঝতে পারছি না। হঠাৎ আমার পায়ের আওয়াজ শ্যামলী চোখ মেলে তাকাল। তাকিয়েই আমার জিজ্ঞেস করল, কি কতক্ষণ এসেছেন?
-এই এইমাত্র আপনি ঘুমোচ্ছেন দেখে আমি আর ডাকিনি। এই একটাই তো ছুটির দিন।
তারপর শ্যামলী এক মারাত্মক ভঙ্গীতে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল। আমি সেই সুযোগে শ্যামলীর গোপন জায়গাগুলো দেখবার অবকাশ পেলাম। আমাকে বসিয়ে রেখে শ্যামলী কলঘরে গেল। তারপর বেশ ফ্রেস হয়ে এসে আমায় জিজ্ঞেস করল, কি চা না কফি? আমি উত্তর দিলাম কফি আমার উত্তর নিয়ে আবার জোরাল গতিতে কিচেনে চলে গেল। ইতিমধ্যে খবরের কাগজওয়ালা ছুড়ে কাগজখানা ঘরে দিয়ে গেল। একটু হলেই আমার নাকে এসে লাগত। ভাগ্য ভালো লাগেনি। খবরের কাগজখানা তুলে পড়তে লাগলাম। ইতিমধ্যে শ্যামলী চা আর অন্য খাবার নিয়ে এসে হাজির।
শ্যামলী একগাল হেসে বলল, নিন, খেয়ে নিন।
আমি তো খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে অবাক। আমি ভদ্রতার খাতিরে হেসে বললাম, আমার জন্য আবার কষ্ট করে এতসব করতে গেলেন কেন?
—না কষ্ট কিসের, আমার আবার নিত্যনতুন খাবারদাবার তৈরী করতে খুব ভালো লাগে। তখন আমার মধুমতীর কথা মনে পড়ল। মধুমতীর কাছে সকালে সামান্য একটু চা চাই। তার বদলে পাই এক কাপ ঘৃণা।
আমার চোখ দুটো ঐ খাবরের প্লেটের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। ধীরেধীরে খাবারগুলোকে আমার নরম আঙুল দুটো মুখের ভেতরে চালান করে দিতে লাগল। তারপর এল রসবড়া। আমি মুখে পুরে দিয়ে বললাম দারুণ হয়েছে। এ যেন ঠিক মনে হচ্ছে প্রেমের রসবড়া।
আমার কথা শুনে শ্যামলী তো হেসে কুটি পাটি।
-কেন ভুল কথা বললাম।
—না তা কেন! আপনি বেশ মজার মজার কথা বলতে পারেন বটে।
তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ। এবার আমি আর শ্যামলী গল্পের পর্বে বসেছি। শ্যামলী বিছানায় আর আমি হাত কয়েক দূরে সোফাতে গাটাকে এলিয়ে বসেছি। গল্পের মাঝ মাঝে শ্যামলী বিছানায় গড়াতে গড়াতে এমন এক একটা ভঙ্গী করছে, যেটা অনেক সময় বাজারের কোন চালু বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। আর উত্তেজনায়। আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন ভরাট হয়ে উঠছে। আমি তাড়াতাড়ি একটা সিগারেট ধরিয়ে উত্তেজনা কাটাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ফল হলো না।
আবার কথা একথা থেকে সে কথা, আর সে কথা থেকে একথা। শ্যামলীর বুকের নীচে একটা নরম বালিশ। দু কনুই বিছানার উপর গেঁথে রাখা। হাতের চেটোয় মুখখানাকে ধরে রাখা। ঘাড়ের পাশ দিয়ে কালো চুলের ঢল নেমে এসে গড়িয়ে পড়েছে বালিশের উপর। পা দুটোকে ভঁজ করে একটু একটু করে দোলাতে শুরু করেছে শ্যামলী। শাড়িটা কুঁচিয়ে হাঁটু অবধি এগিয়ে আসায় শুভ্র নরম পা দুটোকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে। ও দুটোকে জড়িয়ে ধরে খেলা করতে ইচ্ছে করছিল। অথচ নড়বার ক্ষমতা তখন হারিয়ে ফেলেছি। বুকের ভেতরটা টেনশনে দপদপ কেমন যেন একটা উত্তেজক শব্দ শুরু হয়ে গিয়েছিল। শ্যামলী শরীর দেখাতে জানে। অপরের শরীরে আগুন ধরাতেও জানে।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। আর ঠিক সেই সময় শ্যামলী আবার অন্য পোজ দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাঁকা হয়ে একপাশে নিজেকে ঝুলিয়ে দিয়ে দুষ্ট-মিষ্টি ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হাঁ করে তাকিয়ে কি দেখছেন?
আমি যে শ্যামলীর কাছে ধরা পড়ে গেছি তা আর বুঝতে দেরি হলো না। আমি তাই আমার…ঢাকবার জন্য আমতা আমতা করে বললাম, কৈ কিছু না তো।
—কিছু না তো মানে, এতক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে দেখছিলেন। আপনার না বয়স হয়েছে। আপনার ঘরে স্ত্রী আছে।
একথা শুনে না আমার মাথা দিয়ে আগুন বেরোতে শুরু করল। ঘরে স্ত্রী আছে ঠিক কথা। কিন্তু আমার বয়স তুলে কথা বললে ভীষণ খারাপ লাগে। আমার কি এমন বয়স হয়েছে। দু-একটা চুল পেকেছে। কিন্তু সে তো আমি কলপ করে চুল কালো করে দিয়েছি। তুমিই বা কি এমন কচি খুকি? তোমার বয়সও তো পেকেছে। চামড়ার চেকনাইকে কসমেটিক দিয়ে বাড়াতে হয়। যেসব জায়গায় তোমার যৌবন, সে সব জায়গাগুলোও সামান্য ঝুলে পড়েছে। তুমি কি ভাব তোমার আর সে বাজার আছে। যে তোমাকে দেখে দুনিয়ার যুব সমাজ হামলে পড়বে। আমার বউটা নেহাত আমায় গাল-মন্দ দেয়। একটু সোহাগ টোহাগ করে না। তার উপর অনেকদিনের পুরনো মাল। তাই একটু নূতনের স্বাদ পাবার জন্য তোমার কাছে আসা। না হলে, তোমার কাছে আমার আসতে বয়েই গেছে।