শুনলেন তো, আমার স্ত্রীর কথা। সব সময়ই বাঁকা বাঁকা কথা। কোথায় একটু আমায় যুবক বলে প্রেরণা দেবে, তা না, শুধু ব সময় খোঁচা মেরে কথা।
আজকাল একটু স্মার্ট হয়ে চলতে চেষ্টা করি। মেয়েরা আবার একেবারে ল্যালাক্যাবলা ছেলে একেবারেই পছন্দ করে না। তাই ধুতির বদলে একটু প্যান্ট সার্ট সঙ্গে বুট পরে অফিসে বেরই। এই দেখেও স্ত্রী-এর মনে জ্বালা। হঠাৎ একদিন বলল, কি হয়েছে বলতো। তোমায় আজকাল প্রায়ই লক্ষ্য করি বুড়ো বয়সে ছোঁড়া সাজবার সখ হয়েছে। প্রেমে টেমে পড়লে নাকি।
আমি একগাল হেসে বললাম, ঘরে এমন সুন্দরী থাকতে, অন্যদিকে কি করে তাকাই। আর তাছাড়া এখন কি আর প্রেমের বয়স আছে। অমনি গিন্নী মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, ছ্যা প্রেমের আবার বয়স। তোমাদের পুরুষ জাতটাকে একদম বিশ্বাস করি না। যত বুড়ো হয় তত বেশী বজ্জাত হয়।
অমনি আমার মাথাটা টগবগিয়ে ফুটে উঠল। দেখ জাতটাত তুলে কথা বলবে না। আর তাছাড়া তোমার মতো এরকম খিটির-মিটির করা বউ ঘরে থাকলে, স্বামীরা তো বিগড়ে যাবেই।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই আমার মধুমতী গর্জে উঠে এমন বলল, কি আমি তোমার সাথে খিটির মিটির করি। এই আওয়াজে পাড়ায় যেন একটা ছোটখাটো ভূমিকম্প হয়ে গেল।
থাক পরদিন অফিসে বেরোচ্ছি, ঠিক এই সময় আমার গিন্নী আবার গ্যাসের চোতাটা ধরিয়ে দিল, যাওয়ার সময় একটু বুক করে যেতে। ব্যাস্! অফিসের বারোটা, ভাগ্যিস সরকারী অফিরে কেরানী।
তারপর নাচতে নাচতে গিয়ে হাজির হলাম গ্যাস দাদার কাছে। পাড়ার কাছে একটা বাড়ির গ্যারেজ ঘরে গ্যাস ঘর। ঐ ঘরে একটা টেবিল চেয়ারে নিয়ে বসে আছেন। আমাদের গ্যাস দাদা, আর তার সামনে এক বিশাল লাইন। গ্যাসের লাইনে বাই প্রশ্ন কর্তা আর সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে চলেছে গ্যাস দাদা। সব প্রশ্ন কর্তারই একই প্রশ্ন দাদা কবে পাঠাচ্ছেন? বাচ্চারা কাদলে যেমন বড়রা টফি নিয়ে বলে আর কেঁদো না সোনা! আর কেঁদো না।চ ঠিক তেমনি গ্যাস দাদা বাইকে বলে চলেছেন এই দু-চার দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। ছেলেদের লাইনের সাথে ফুরফুরে সব সুন্দরী মহিলাদের লাইন। সব নতুন সংসার করছে। স্বামীরা সব অফিসে বেরিয়েছে। আর গিন্নীরা সুন্দর পারফিউম মেখে গ্যাসের দোকানে লাইন। হঠাৎ দেখি লাইনে সেই আমার পাশের বাড়ির শ্যামলী।
শ্যামলীকে দেখেই মনটা কি রকম পাক দিতে শুরু করল। কি করে শুরু করি কথা, যদি কথা বলতে গিয়ে কোন অসংলগ্ন কথা বলে ফেলি, তাহলে তো আর রক্ষা নেই। এই বয়সে পাবলিকের হাতে মার খেয়ে আমাকে এই ধরাধাম ত্যাগ করতে হবে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি আমার পায়ের সামনে একটা সুন্দর রুমাল পড়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি তুলে শ্যামলীর দিকে হাসি হাসি মুখ করে বললাম, এটা কি আপনার?
শ্যামলীও হাসির বিনিময়ে হাসি দিয়ে বলল, হ্যাঁ আমার। তারপর আমার হাত থেকে রুমালটা নিল। রুমালটা নেওয়ার সময় শ্যামলীর নরম নরম হাতের ছোঁয়ায় আমার শরীরের রক্তে এক শিহরণ খেলে গেল।
তারপর ধীরে ধীরে শ্যামলীর সাথে আলাপ জমাতে শুরু করলাম। আর মনে মনে আমার মধুমতীকে ধন্যবাদ দিলাম। মধুমতী যদি আমায় আজ এই গ্যাসদাদার কাছে না পাঠাত তাহলে শ্যামলীর সাথে আলাপ করার সুযোগই পেতাম না। কিছুক্ষণের মধ্যই আমাদের দুজনেরই গ্যাসদার সাথে কথা চুকে গেল। তারপর ঐ গ্যারেজ ঘর থেকে কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে এবং দিয়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়ালাম।
শ্যামলী আমায় জিজ্ঞাসা করল, আপনি কোথায় যাবেন?
—আমি ডালহাউসী।
—ভালই হলো আমিও ঐ পথেই যাব। চলুন একসাথে যাওয়া যাক। দুজনে হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ালাম বাস স্ট্যাণ্ডে তখন লোকে লোকারণ্য। সবাই বাসে উঠবে। বাস আসছে, কিন্তু তাতে খুব কম লোকই উঠতে পারছে। বেশীর ভাগ বাসই বাদুড় ঝোলা।
তারপর অনেক কষ্টে একটা বাসের মধ্যে আমি আর মধুমতী দেহের কসরৎ দেখিয়ে উঠলাম। বাসে আর তিল ধারণের জায়গা নেই। শ্যামলীর শরীরটা আমার শরীরের উপর লেপটে আছে। আমার বুকের উপর পড়ে আছে ওর সুগন্ধী একরাশ কালো চুল। তার গন্ধে আমি মোহিত হয়ে উঠেছি। জীবনটা যেন মনে হচ্ছে কবিতা। হঠাৎ মনে হয় একি করছি আমি। এ পাপ। ঘরে আমার স্ত্রী আছে। শ্যামলীর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাই। কিন্তু নিরুপায়। বাসের ভীড়ে এপাশ থেকে ওপাশ হবার উপায় নেই। কি সুন্দর নরম তুলতুলে শরীর। মনে হয় যেন ভগবান মোম আর মাখন মিশিয়ে শ্যামলীর শরীর তৈরী করেছেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে হাজির হলাম ডালহাউসী। সময় যেন হুহু করে চলে গেল। রোজ বাসে যেতে যেতে জ্যামে পড়তে হয়। কিন্তু আজ একদম জ্যাম নেই। বাস থেকে আগে নেমে রাস্তায় পা রেখেছি। শ্যামলী নামতে গিয়ে হঠাৎ দেখি পড়ে যাচ্ছে, আমি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে হাতটা এগিয়ে দিলাম। আমার হাতের উপর ভর দিয়ে টালটা সামলে নিল। এদিকে আমার হাতটাও ধন্য হলো।
তারপর দুজনে নেমে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলাম। আমি আমার অফিসে ঢুকে গেলাম, আর আমার অফিসের পাশের বিল্ডিং-এ একটা প্রাইভেট ফার্মে কাজ করে শ্যামলী। সত্যি একথা ভাবা যায় না। যাক আসবার সময় আবার আমরা দুজনে। ফিরি। শ্যামলীর অফিসে রোজ নটায় হাজিরা। কিন্তু আমার সরকারী অফিস যখন হোক গেলেই হয়। বডিটাকে একসময় অফিসের মধ্যে শো করতে পারলেই ব্য। মাঝে মাঝে অবশ্য অফিসের হেডক্লার্ক যাকে আমরা সম্মান দিয়ে বড়বাবু বলি তিনি আমায় অনেকদিন বলেছেন যে একটু তাড়াতাড়ি আসবেন। কিন্তু আমি ওসব কথা কোনদিনই কর্ণপাত করিনি। এ পৃথিবীতে বাঁচতে গেল সব কথা কানে শুনতে নেই। যদিও তা ঢোকাই তা অপর কান দিয়ে আবার বাতাসে ছেড়ে দি। আমার দেরীতে আসার সুবাদে অনেকই আমায় মাঝে মাঝে রঙ্গ রসিকতা করে (অর্থাৎ যার অপর কথা টিপ্পনী কেটে) আমার নাম দিয়েছিল ‘লেটুবাবু’। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি যেমন চলছি তেমন চলব। চাকরীতে যাওয়ার কোন ভয় নেই। এতো আর প্রাইভেট ফার্ম না। যে একটু দেরী হলেই মাইনে কাটা। তার পরেও যদি বেয়াদপি করি, চাকরী নট। এ হচ্ছে সরকারী অফিস। একদিনের কাজ দশদিনে করবো, মাঝে মাঝে ওভারটাইম করবো। আর মাঝে মাঝে অফিস থেকে মাইনে বাড়ানোর দাবীতে বিরাট মিছিল করে সারা কলকাতার বুকে ট্রাফিক জাম করে অবশেষে এসপ্ল্যানেড ইষ্টে বিরাট জনসমাবেশে যোগ। বড় বড় নেতাদের বড় বড় বুলি। আমি অবশ্য বড় বড় নেতা না হলেও ন্যাতা তো বটে। অফিসে রাজনীতি করি। তাই রাজনীতি নেতাদের আজকাল খুব একটা কেউ খাটতে চায় না। একটা প্রচলিত কথা আছে যে বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা, আর আজকাল রাজনীতির দাদারা ছুঁলে একশ ঘা।