বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

দুই বাংলার দাম্পত্য কলহের শত কাহিনী – ইমদাদুল হক মিলন

Dui Banglar Damptyo Kaloher Shato Kahani by Imdadul Haq Milan

শ্রাবণী কোনও পথ পাচ্ছিলেন না। চিন্তার সব পথগুলোর মাঝখানে কে যেন ‘নো-এনট্রি’ বোর্ড লাগিয়ে দিয়ে চলে গেছে। কান্না পাচ্ছিল। ভয় হচ্ছিল। নিদারুণ সেই অসহায়তাকে শ্রাবণী এক ঢোকে গিলে ফেললেন। এখানে ঘড়ি নেই। শ্রাবণী ঘড়ি পরে আসেননি। সময় যে কতটা বয়ে গেছে বুঝতেই পারলেন না।

দুড়দাড় করে শ্রবণা উঠে এল। পেছনে মল্লিকবাবু আর দোকানের দুজন কর্মচারী। শ্রবণা মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, মা। শ্রাবণী সেই নার্সটির নকলে ফিসফিসিয়ে বললেন, আস্তে। জোরে কথা বলো না। তোমার বাবার হার্ট অ্যাটাক। নাকে নল গুঁজে শুয়ে রয়েছে। আমার সঙ্গেও কথা বলেনি।

শ্রবণা মাকে দেখল। যা বোঝবার নিজেই বুঝল। কথা বাড়ায়নি।

মাঝে মাঝে গম্ভীর মুখের এক একজন ডাক্তার আই সি ইউতে ঢুকে যাচ্ছেন। অনিলের মুখের দিকে এক পলক চেয়েই, খাটের সঙ্গে লাগানো চার্টটায় চোখ বুলিয়ে বেরিয়ে আসছেন। অনিলের চোখের পলক পড়ছে না। একই ভাবে বোজা। কাঁচের জানালার এপাশ থেকে শ্রাবণী সব কিছুই লক্ষ্য করে যাচ্ছিলেন।

সন্ধের মুখে দুজন কমবয়সি ডাক্তার একসঙ্গে ঢুকলে, শ্রাবণী কেমন যেন সাহস পেয়ে তাদের পেছনে পেছনে ঢুকে পড়লেন। তারা বেরিয়ে আসার সময় জিজ্ঞেস করলেন—আচ্ছা ও কখন কথা বলবে? দুজন ডাক্তারই একসঙ্গে থমকে গেল। একজন বলল, কথা? বলবে? অপরজন বলল,–হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই বলবে। তবে এখন তো…।

মল্লিকবাবু অনেকদিনের কর্মচারী। সেই শশুরের আমল থেকে। অনিলকেই নাম ধরে ‘তুমি’ বলেন। এতক্ষণ পর এগিয়ে এসে বললেন—বৌমা, এবার তুমি ওঠো। আমরা সকলে তো রয়েছি। কাঁধের ব্যাগটা আমাকে দাও। আমি তোমাদের পৌঁছে। দিয়ে আসছি।

ব্যাগটা অনিলের। হাসপাতালে ঢোকার মুখে সেই ছেলে দুটো শ্রাবণীকে দিয়ে যায়।

‘ব্যাগটা আমাকে দাও’, শুনে শ্রাবণীর দাঁত কিড়মিড় করে উঠল। দুহাত দিয়ে ব্যাগ জড়িয়ে ধরে তীব্র গলায় বললেন—না। না। আমার কাছে থাক।

অমন হিংস্র হয়ে ওঠার দরকার ছিল না। শ্রাবণী এখন বেখেয়ালি। হঠাৎ বোধহয় ভাবলেন স্বামীকে কেউ কেড়ে নিতে চাইছে।

মায়ের মুখ-চোখের অবস্থা দেখে শ্রবণা আজ এই ঘরে শুতে চেয়েছিল। শ্রাবণী বড় বড় করে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,—ওমা! না, না, ঠিক আছে। কিছু হবে না। সারাদিন তোর এত ধকল গেল। যা, শুয়ে পড়।

মেয়ে আড়চোখে মাকে দেখল।—কোথায় যেন অঙ্ক মিলছে না। নিঃশব্দে নিজের ঘরে ফিরে গিয়েছিল।

শ্রাবণী নিজেও জানেন না। জানেন না? হয়তো জানেন। কিন্তু এ মুহূর্তে কোন কিছুই তো ঠিকঠাক কাজ করছিল না। শ্রাবণী তাই বুঝতেই পারলেন না, নিজেকে বড় বেশি একা পেতে চাইছেন। একদম একা।

ঘড়ির সর-সর। তারপরই ঢং ঢং করে দশটা বাজল। ঘড়ির শব্দে চমকে উঠেছিলেন। কী চুপচাপ! ঘরটা। এত শব্দে ঘোর কেটে গেল। দরজা খোলা। আলোটাও জ্বলছে। সেই জ্বলা আলোয় দেখলেন—ইস। এঁটো ব্যাগটা এখনও খাটেই রেখে দিয়েছি। অনিলের টিফিন নেওয়া কাঁধে ঝোলানো সেই ব্যাগটা।

অলস হাতে নামিয়ে রাখতে গিয়েও বুকের কাছে নিয়ে এলেন।—এমা! টিফিন কৌটো তে ভর্তি। খায়নি।

না খাওয়া টিফিন কৌটো। বার করলেন। একটা ঠোঙা।ঠোঙা আবার কিসের? আঙুরে ভরা ঠোঙা বেরিয়ে এল।—ভরা নয়তো। কে যেন অনেকগুলো

খেয়ে নিয়েছে। এই তো। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। এখান ওখান থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়া। অনিল টিফিন না খেয়ে আঙুর খেয়েছে?

দুপুর দুটোর গরম রাত দশটায় অনেকটা নেমে এসেছে। মাথার ওপর বন বন করে ফ্যান ঘুরছিল। তাও…, শ্রাবণী দেখলেন, তাঁর গলা বেয়ে ঘামের একটা দাগ দরদর করে নেমে যাচ্ছে। হাত দুটো কি কেঁপে গেল? সেই কঁপা হাতে শ্রাবণী আবিষ্কার করলেন। ব্যাগের এক কোণে, গোপাল বড় সুবোধ ছেলের মুখ নিয়ে এক প্যাকেট কনডোম শুয়ে রয়েছে। পুরো প্যাকেট তো নয়। কেউ যেন একটা ছিঁড়ে নিয়েছে। একটা ভয়ংকর বরফের টুকরো শ্রাবণীর হৃৎপিণ্ডে ঝাঁপটা মারল। ঝাঁপটা? না ছোবল। নিমেষের ভেতর সেই সাপের কিলবিলানি শ্রাবণীর পা থেকে মাথার স্নায়ু পর্যন্ত উঠে এসে, ক্লান্ত এই মহিলাকে অসাড় করে দিল।

—আঙুর! কনডোম! অনিল তো কোনদিন এসব জানত না। ফলের ভেতর, আম, পেঁপে আর সবেদা। এই তো খায়। কনডোম নিয়ে কত হাসাহাসি। পরতে গেলেই সময় নষ্ট। সেই লোকের ব্যাগে…। কে শেখাল?

শ্রাবণী কাঁদছেন। নিঃশব্দ। আকুল। সর্বস্বান্ত হওয়ার তীব্র ভয় মেশানো সেই কান্না। কী আশ্চর্য। শ্রাবণী বুঝতে পারছেন না কেন। তবুও এই নষ্ট মুহূর্তে টকটক করে কত সুন্দর সব ছবি উঠে আসছিল। বিয়ের আগের দোকানের সেই লাজুক অনিল। মায়ের ‘ফুলছাদ’ দেখে বলেছিল, এত উঁচু ছাদেও এমন বাগান হয়। এর পরে তো আকাশেও বাগান হবে। বেহালার অন্যতম আদি, ‘লক্ষ্মী শাড়ি সংসার’, বিয়ের পরপরই কেমন ‘শ্রাবণী শাড়ি এম্পোরিয়াম’ হয়ে গেল। যা চেয়েছি তাই হয়েছে। চাইতে তো হয়নি। না চাইতেই সব কিছু পেয়ে গেছে। তুমি যে বড় পোবমানা। আমার হিস্ট্রিতে অনার্স। তোমার কি অনিল? মনে আছে? কেমন মজার মুখ করে বলত,দোকান মালিক হব। আর হিসেব শিখব না? সেই জন্যেই তো পিতাঠাকুর পাশ কোর্সের বি.কম বানিয়ে দোকান ফিট করে দিল। তোমাদের বাড়ির জলখাবার আমার বিয়ের পরেই কেমন ব্রেকফাস্ট হয়ে গেল! মনে পড়ছে? কি হল? বলো না। মনে পড়ছে? মনে পড়ছে।

Page 8 of 403
Prev1...789...403Next
Previous Post

শিউলি বনে গন্ধরাজ – গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

Next Post

ভয় – হুমায়ূন আহমেদ

Next Post

ভয় - হুমায়ূন আহমেদ

মিসির আলি আনসলভ্‌ড - হুমায়ূন আহমেদ

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In