আমার গা মাথা যেন পাক খেয়ে ঘুরতে লাগল। এই আকাশে চন্দ্র সূর্য কি সত্যিই ওঠে? ওঃ মাই গড়। হেল্প মি।
.
আমার মান ইজ্জত চাকুরির নিরাপত্তা সব কিছুই এক লহমায় বিপন্ন হয়ে পড়ল। এক কথায় জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেল আমার। ঐ সুন্দরী কুহকিনী কেন যে এ কাজ করল? কেন যে এইভাবে প্রতিশোধ নিল আমার ওপর তা ভেবেই পেলাম না। এখন ভাবছি কাল রাতে ঐ রকম প্রস্তাব না করে তার কথায় রাজি হলেই ল্যাঠা চুকে যেত। যেহেতু আমার অসহযোগিতায় তাকে মরতে হল সেই রাগে আমারও সর্বনাশ করে গেল সে। পুলিশ ঠিকই বলেছে আমি ভিমরুলের চাকেই হাত দিয়েছি। আমার সাধ্য কি যে মেহবু সাহেব্বে সঙ্গে লড়ি? সাধ্য থাকলেও হেনা আলমের ঐ রকম স্বীকারোক্তির পর আমার বাঁচাও তো অসম্ভব। আইনের চোখে আদালতের বিচারে আমার কি শাস্তি হবে জানি না। তবে মেহবু সাহেব যে আমাকে জ্যান্ত কবর দেবেন তা বুঝতেই পারছি।
থানার লকআপে প্রায় আধ ঘন্টা রাখার পর পুলিশ প্রহরায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হল মেহবুব সাহেবের মার্বেল প্যালেসে। একটি বিলাসবহুল হলঘরের মতো বড় ঘরে আমাকে এনে যখন বসানো হল তখন মেহবুব সাহেবের চেহারার দিকে। তাকিয়ে শিউরে উঠলাম। কী পৈশাচিক মুখ। এর চেয়ে একটা হায়না ভালো। এখানকার পুলিশ প্রশাসন সবাই সন্ত্রস্ত মেহবুব সাহেবের প্রতিপত্তি এবং ব্যক্তিত্বের কাছে।
মেহবুব সাহেবের চোখ কালো চশমায় ঢাকা। ক্রাচ দুটি কৌচের গায়ে ঠেস দিয়ে রাখা। টেবিলের ওপর একটা দোনলা বন্দুক। বাঘ মারা। একটি ব্লাঙ্ক ক্যাসেট লাগানো টেপ রেকর্ডার। সেটা চালিয়ে দিয়ে তিনি বললেন—আপনিই ডাক্তার সে?
—হ্যাঁ।
–বসুন।
ঘরে একটা সঁচ পড়লেও যেন শব্দ হবে।
মেহবুব সাহেব পুলিশ এবং তার লোকেদের বললেন—আপনারা একটু বাইরে যান। আমি না ডাকা পর্যন্ত কেউ এ ঘরে ঢুকবেন না বা এর ধারে কাছে আসবেন না।
ভীত সন্ত্রস্ত সবাই চলে গেল।
মেহবুব সাহেব বললেন বয়স কত? দেখে তো ছেলেমানুষ বলেই মনে হচ্ছে। বিয়ে থা করেছে?
ভয়ে ভয়ে বললেন—না।
—আমার স্ত্রীর সঙ্গে আপনার অবৈধ সম্পর্ক কত দিনের?
আমি অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বললাম—মেহবুব সাহেব! আল্লা কসম। ঈশ্বরের দোহাই। আমি সম্পূর্ণ নিরপরাধ।
—আমার স্ত্রীর ঐ স্বীকারোক্তিটা তাহলে মিথ্যা। কি বলুন? মেহবুব সাহেব এবার বন্দুকটা হাতে নিলেন। তারপর সেটা নিয়ে খেলা করতে করতে বললেন কাল রাত্রেই বোধ হয় আপনি শেষবারের মতন আমার স্ত্রীর দেহটা ভোগ করেছেন, তাই না?
আমি মাথা নত করে বললাম না না না। আপনি বিশ্বাস করুন আমি তার কোন ক্ষতি করিনি।
মেহবুব সাহেবের পৈশাচিক মুখে হিংস্রতা যেন প্রকট হয়ে উঠল। বললেন রাতের অন্ধকারে ঐ রকম একজন সুন্দরী যুবতী আপনার ঘরে গেল আর আপনি তাকে ভোগ না করেই ছেড়ে দিলেন? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
—আপনি তো সবই জানেন দেখছি।
—আমার স্ত্রীর ব্যাপারে আমি জানব না তো কি অন্য তোক জানবে? রাতের অন্ধকারে সে বেরিয়ে গেল, কোথায় গেল আমি জানব না? বলতে বলতেই বন্দুকে গুলি পুরে মেহবুব সাহেব বললেন—এটা কার জন্য তৈরি করলাম বলুন তো?
জানি না।
—আপনার জন্য। রাতের অন্ধকারে যে যুবক এক অসামান্যা সুন্দরীকে। নাগালের মধ্যে পেয়েও তাকে ভোগ করতে পারে না এটা তরা জন্যই খরচা করা উচিত। আপনিই বলুন না তাকে গুলি করে মারাটা উচিত কি না?
—আপনার কথার আমি কোন ঘের পাচ্ছি না মেহবুব সাহেব।
–না পাবার তো কিছু নেই। একজনকে ভোগকরার জন্য মেরেছি একজনকে করার জন্য মারব।
—মারবেন। তবে তার আগে ওর পোেস্টমর্টেম রিপোর্টটা একবার দেখুন। আমার রক্ত পরীক্ষা করান। মনে কোন সন্দেহ রাখবেন না মেহবুব সাহেব। আমি ওকে ভোগও করিনি। ওর গর্ভে আমার সন্তানও নেই!
—আমি জানি ডাক্তার। সব জানি। ওর গর্ভে এ অবৈধ সন্তানের বীজ যে বপন করেছে আমি তাকে নিজে হাতে গুলি করে মেরেছি। ও কিন্তু সেটা বুঝতে পারে নি। মানে আমি বুঝতে দিই নি। ওর প্রেমিককে মারবার আগে তাকে ভয় দেখিয়ে এমন একটা চিঠি আমি লিখিয়ে নিয়েছি যাতে ওর ধারণা হয়েছে ওর প্রেমিক ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ও তো আপনাকে অনেক কিছু দিতে চেয়েছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি ওর অ্যাবরশানটা করালেন না কেন?
—আমি কখনো ও কাজ করিনি সাহেব। টাকার লোভে ঐ পাপ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তাছাড়া ওতে ওর জীবনের ঝুঁকি ছিল।
–আপনি খুব ধর্মভীরু লোক দেখছি। ভ্রূণ হত্যা করেন না। সুন্দরী যুবতীকে রাত্রিবেলা বেডরুমে একা পেয়েও তাকে জোর করে ভোগ করেন না। টাকার লোভ করেন না। আপনাকে দিয়ে এ জগতের কোন কাজটা হবে শুনি। এক্কেবারে যা তা লোক মশাই আপনি। যাক। আমার তরফ থেকে একটা সামান্য উপহার আপনাকে দিচ্ছি। এই নিন। এটা বাড়ি নিয়ে খুলে দেখবেন।
–কী আছে এতে?
—একটা বিশাল অঙ্কের টাকার চেক। আমি জানি এই ঘটনার পর আপনি আর এখানকার হাসপাতালে চাকরি করবেন না। নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে যাবেন। তাই সাময়িকভাবে যাতে আপনার কোন অসুবিধা না হয় সেইজন্যে এটা আপনাকে আমি দিচ্ছি। বলে একটি বড় খাম এগিয়ে দিলেন মেহবুব সাহেব। তারপর কি ভেবে যেন সেটা আবার চেয়ে নিয়ে তার ওপর নিজের নাম সই করে আমার নামটা খস খস করে লিখে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম—শুনেছিলাম আপনি অন্ধ। কিন্তু আশ্চর্য। যেভাবে আপনি লেখালিখি করছেন বা এত কিছুর ওপর নজরদারি করছেন তাতে তো আপনাকে অন্ধ বলে মনেই হচ্ছে না।