আমি আমার কোলের ওপর থেকে হেনা আলমের মাথাটা তুলে নিলাম। বললাম–ভারী মুশকিলে ফেললেন দেখছি।
—একটা উপায় বার করুন ডাক্তার।
—কোন রকমে আপনি কি একবার আমার সঙ্গে এই শহরের বাইরে যেতে পারবেন?
—ক্ষেপেছে? যেখানে রাতের অন্ধকারে গোপনে আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছি সেখানে কি করে আমি শহরের বাইরে যাবো? আমাকে এখানকার
বাই চেনে। আমি যখন ঘর থেকে বেরোই তখন বেয়ারা দরোয়ানরা আমাকে ঘিরে থাকে। এ কাজ এখানে করতে হবে ডাক্তার। তার জন্য আপনি যা চান যত টাকা চান দেবো। আমার শরীর খারাপের অছিলায় আমার লোক দিয়ে আপনাকে ডাকিয়ে নিয়ে গিয়ে আমার বাড়িতেই এই কাজ করাব আমি।
—সেকি।
–এছাড়া উপায় নেই।
এতক্ষণ নেকাবের ঢাকা সরিয়ে রাখলেও সেই সুদৃশ্য বোরখার আড়ালে ছিলেন হেনা আলম। এবার বোরখা মুক্ত হয়ে গলার বহুমূল্য নেকলেসটি খুলে আমাকে দিলেন। বললেন—এর সবগুলিই হীরে। এটা অগ্রিম হিসেবে দিলাম। আর টাকা। কত টাকা চাই আপনার? যা চাইবেন তাই পাবেন।
আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না।
হেনা আলম আমার খুব কাছে এগিয়ে এলেন। এসে ঠিক গত রাতের মতোই আমার হাত দুটি ওঁর বুকের ওপর নিয়ে বললেন—একবার শুধু আমাকে দেখুন। তাকান আমার মুখের দিকে। আপনি দয়া না করলে আমাকে অকালেই ঝরে যেতে হবে। হেনা আলমের পরশে কি যাদু আছে? হয়তো। আমি যেন মোমবারি মতো গলে যেতে লাগলাম। এই অনিন্দ্যসুন্দরীকে আমার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে এই মুহূর্তে ওর মুখ চুম্বন করতে ইচ্ছে হল। কি যে হয়ে গেল আমার তা জানি না। হঠাৎ ওর হাত দুটি আমি নিজের মুঠোয় ধরে নিয়ে বললাম আমি রাজি।
সেই মুহূর্তে হেনা আলমের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল উনি যেন স্বর্গ জয় করে ফেলেছেন। আমরা হাত দুটিতে আলতো করে প্রেমিকার মতো চুমু খেয়ে আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে বললেন—আমি জানি ডাক্তার, রাজি আপনি হবেনই। সত্যি, কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেবো। তাহলে শুনুন! এই নেকলেসটির দাম কম করেও এক লাখ টাকা। এবার নগদ আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম টাকা আমি চাই না মিসেস আলম। আর ঐ নেকলেসেও আমার প্রয়োজন নেই। ওটা আপনি নিয়ে যেতে পারেন।
–সেকি! হেনা আলম লঘু পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তারপর ঠিক সেই আগের মতোই আমরা হাত দুটি ধরে বললেন—এত টাকার প্রলোভন আপনি কি জন্য ছেড়ে দেবেন?
—শুধু মাত্র আপনার জন্য।
—তার মানে?
—আমি আপনাকে চাই। আপনার রূপে আমি এমনই মুগ্ধ যে আপনার যৌবনের উত্তাপ আমাকে পেতেই হবে। এই মুহূর্তে আপনার চেয়ে লোনীয় আমার কাছে আর কিছুই নেই। যদি আপনি কোন রকম সংকোচ না করে আমার বিছানায় চলে আসতে পারেন তাহলে আমি আপনার প্রস্তাবে এক কথায় রাজি।
হেনা আলমের দু’চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠল। বললেন ডাক্তার! আপনি আগুন নিয়ে খেলা করতে চাইছেন। আমার দেহটা বাদ দিয়ে আপনি অন্য কিছু চান।
—দেখুন, যে কাজ আমি করতে চাই না, যে কাজে আমার বিপদ এবং আপনার জীবনের ঝুঁকি আছে সে কাজ যদি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হয় তাহলে তা এমন কিছুর জন্য করব যা দুর্লভ।
—এই আপনার শেষ কথা?
—হ্যাঁ।
হেনা আলম নেকলসেটা গলায় পরে বোরখা মুড়ি দিয়ে যেমন এসেছিলেন ঠিক তেমনি চলে গেলেন।
আমি দরজা বন্ধ করে আবার বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। আমার সর্বাঙ্গ তখন কামনার আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে। এঃ। আমি কি বোক। কেন যে ওকে যেতে দিলাম। এই নিঝুম রাতে জোর করে ওকে আমার বিছানায় শোয়ালে নিশ্চয়ই ও চেঁচামেচি করত না। সুন্দরী রমণীকে জোর করেই ভোগ করতে হয় এই চিরকালের নিয়মটা ভুলে গিয়েই ভুল হল। তাই সারারাত বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে লাগলাম।
.
পরদিন সকালেই সেই মর্মান্তিক সংবাদটা কানে এলো। মিসেস হেনা আলম আত্মহত্যা করেছেন। ধ্বরটা শুনেই শিউরে উঠলাম আমি। উঃ কি ভয়ঙ্কর। হেনা আলম মৃত্যুকে বরণ করে নিয়ে তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছে। কিন্তু ওর গর্ভের সেই সস্তানটা! সেটাও যে দম বন্ধ হয়ে মরে গেল। হায় ভগবান! সেই অসহায় মহাপ্রাণ, যেটা মাতৃগর্ভ থেকে একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল …!
।এমন সময় হঠাৎ আমার সামনে যারা এসে দাঁড়াল তাদের দেখব বলে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। ভয়ে আমার মুখ কাগজের মতো সাদা হয়ে গেল।
—ইউ আর আণ্ডার অ্যারেস্ট মিঃ সেন।
আমি মড়ার মতো ফ্যাকাসে মুখে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম—হোয়াই?
—সেটা থানায় গেলেই জানতে পারবেন। —কেন এখন পারি না?
–আপনি কি শুনেছেন মিসেস আলম সুইসাইড করেছেন?
–শুনেছি। কিন্তু তার সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক!
—আছে বৈকি। মরবার আগে তিনি একটি চিঠি লিখে গেছেন। তাতে লিখেছেন তার মৃত্যুর জন্য আপনি দায়ী। তার স্বলতার সুযোগ নিয়ে আপনি তার গর্ভে সন্তান উৎপাদন করে তাকে প্রতারণা করেছে। এবং তাকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা করেছে।
আমি চিৎকার করে উঠলাম না না না। সী ইজ এ লায়ার। এঘ সত্যি নয়। এ মিথ্যা। আমি সম্পূর্ণ নিরপরাধ। আপনারা বিশ্বাস করুন।
–আমাদের বিশ্বাস অবিশ্বাসে কিছুই যায় আসে না মিঃ সেন। আপনার সততা প্রমাণ করার জন্য আদালত আছে। আপনি ভিমরুলের চাকে হাত দিয়েছেন। এখন ঠ্যালা সামলান। থানায় চলুন। মেহসুর সাহেব আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।