দেখ সমীরণ, ওসব বাজে কথা রাখ। মিষ্টি কথায় চিড়ে ভেজে না, বুঝলে, ভালো চাও তো আমার নামেই বাড়ীটা কিনবে।
কিনব না, তোমার নামে কিনব না, সুতপা।
অসভ্য ব্যাটাছেলে কোথাকার! বৌ-এর নামে সামান্য একটা বাড়ী কিনে দেবে তাও দিতে চায় না। এসো রাত্রে, বিছানায় শুতে; শুইয়ে দেবো একদম।
শোব না সুতপা, দরকার হলে, তোমার সাথে যোব না।
তা শোবে কেন, আমার সাথে শোবে কেন বাইরে তোমার তত শোবার মত লোক আছে!
এই সুতপা, এই সুতপা তুমি একদম্ বাজে কথা বলবে না বোলে দিলাম।
চাদু আমার! আমি কোন কথা বললেই বাজে কথা বলা হয়।
ওটা বাজে কথা নয় সুতপা! বল তুমিই বল, ওটা বাজে কথা নয়!
কোন্টা বাজে কথা, নাকা–!
সুতপা, বল, তুমি বললে কেন, বাইরে আমার শোবার লোক আছে।
আছেই তো! আছে বলেই তো বলেছি। বেশ করেছি। দরকার হলে আবার বলব।
ও, সুতপা, আমি লোকের সাথে শুই!
মরণদশা! ঐ হলো যা! ঐ একই হল! লোক মানে তোমার ঐ মালবিকার কথা বলছি।
তুমি মালবিকার নাম নেবে না, বলে দিলাম। তুমি মালবিকার নোখের যোগ্গী না!
আহাঃ রে চ্যাঁদু! আমি তোমার ঐ মালবিকার নোখের যোগ্নী হতেও চাই না। নোংরা মেয়েছেলে কোথাকার। বাজারের মেয়েছেলে। দশটা ব্যাটাছেলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
সুতপা একদম বাজে কথা বলবে না কিন্তু বোলে দিলাম। খুব খারাপ হয়ে যাবে।
কি করবে সমীরণ, তুমি কি আমাকে মারবে নাকি!
সুতপা তোমার মত মেয়েমানুষকে মারাই দরকার। আমার মত ভদ্রলোকের হাতে পড়েছিলে বলে, এ যাত্রা বেঁচে গেলে। নইলে তোমার মত মেয়েমানুষকে না জ্যান্ত পুড়িয়ে মারত!
সমীরণ তুমি আমাকে পুড়িয়ে মারবে! আমার নামে বাড়ী করে দিতে বলেছি এটাই আমার অপরাধ! দাঁড়াও, আমি বাপীকে বলব।
সুতপা, তোমার বাপীকে তো আমার চেনা আছে। মাঝে মাঝেই বলবে দশহাজার দাও, বিশ হাজার দাও। আর আমাদের দেখবে তো, আমাদের দেখবে তো।
সমীরণ তুমি আমার বাপীকে অপমান করবে না, বলে দিলাম্।
সত্যি কথা বললে আপমান করা হয়, সুতপা। কত ছেলে তো শ্বশুর বাড়ী থেকে কত কিছু পায়! আমাকে তোমরা কি দিয়েছ! তোমাদের কোন ভাই নেই। তুমি তোমার মার সাথে বসে কি ঠিক করলে! বলে কিনা নীচের ছোটঘরটা আর দোতলাটা তোমার মেয়ে টুম্পার নামে হবে। নীচের বাকী সবটা তোমার বোনের নামে হবে আর তার বিনিময়ে তোমার বাবাকে আমি মোটা অংকের টাকা আর সারাজীবন তোমার বাবা-মার ভরণ পোষণের স্ব দায়িত্ব নেবো। বাঃ! কি সুন্দর ব্লাকমেলিং করতে পার; সুতপা!
সমীরণ এটা কে তুমি ব্লাক মেলিং বলে! এটাকে ব্ল্যাক মেলিং বলে।
তবে না তো কি, সুতপা! এটা যদি ব্লাকমেলিং না হয়, তবে ব্লাক মেলিং কোনটা!
ঠিক আছে বাবা, ঠিক আছে, চাই না আমার বাড়ী চাই না। তোমার কাছে কিছু চাই না। আমার বহুদিনের সখ ছিল আমার নিজের নামে একটা বাড়ী থাকবে, রোজ ফুলের গাছ থেকে কুড়ি করে ফুল তুলব—আর ঠাকুর পুজো করব।
হ্যাঁ, তা তো করবেই। ঠাকুর পুজো করবে। ঠাকুরের সামনে বসে কাদবে। আর আমার নামে অভিসম্পাৎ করবে। তবে যা সুতপা জেনে রাখো চালাকি করে সব সময়ে জেতা যায় না। তা ছাড়া আজকাল ছেলেদের অত সহজে ব্লাকমেলিং করাও যাবে না। তোমাদের ঐ মহিলা সমিতির মতো ছেলেরাও “পীড়িত পুরুষ পতি পরিষদ” তৈরী করে ফেলেছে। তুমি আমাকে ব্লাকমেলিং করলেই, ওরা তোমাকেও ছেড়ে কথা কইবে না, হ্যাঁ।
সমীরণ, ছেলেরা আবার “পীড়িত” হয় নাকি! পীড়িত পুরুষ বলতে তোমাদের লজ্জা হয় না! ছিঃ!
সুতপা, তুমি আমাকে পীড়িত করছ না! ছেলেরা তোমাদের মত ঐ রকম ব্যাঙের কান্না কাঁদতে পারে না বলেই ওদের উপর পীড়নটা লোকের চোখে পড়ে না। তুমি আমাকে করে দাও, আমাকে করে দাও বলে বলে আমার ওপর পীড়নের সৃষ্টি করছ না বল। তোমাকে আমি ঘরে আনলাম, সম্মান্ দিলাম। এখন তুমি আমায় বল কিনা আমার বংশ খারাপ, বউ ধরা আর ছাড়া, নাকি আমার পেশা। তুমি আমার ছেলেকে বললে কিনা খারাপ মেয়েছেলের ছেলে। বললে, তোমার মেয়ে নাকি উঁচু বংশের মেয়ে। ঠিক আছে সুতপা আমরা যখন খারাপ তখন তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে যেখানে ইচ্ছা যাও। আমিও আমার ছেলেকে নিয়ে ঐ খারাপ মেয়ে ছেলেটার কাছেই চলে যাব। আমি জান্তাম। ঠিক জানতা—এই হবে। আমার ভুল হয়ে গেছে, আবার বিয়ে করাটাই ভুল হয়ে গেছে।
সমীরণ সত্যিই তো, তুমি তোমার ঘর ছেড়ে যাবে কেন! তার চেয়ে রং আমিই আমার মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ীতে চলে যাচ্ছি!
চল্, টুম্পা চল, রেডি হয়ে নে! যা আছে ভাগ্যে তাই-ই হবে। আমি জীবনে যা হারিয়েছি তার চেয়ে বড় হারাবার আমার জীবনে আর কি আছে!
সুতপা জানো তো, এই জন্যেই মা বলতেন এক গাছের ছাল, এ অন্য গাছে লাগে না রে! জীবনে মা’র কথা না শুনে বড় ভুল করেছি। আর ঐ তোমাদের কথায় কথায় বাপের বাড়ী যাচ্ছি! বাপের বাড়ী না থাকলে তোমাদের মেয়েদের যে কি দশা হত কে জানে!
ছেলেদের তো আর বাপের বাড়ী বলে কিছু নেই, আছে শুধু নিজের বাড়ী, নইলে যমের বাড়ী। চল টুম্পা চল—
হুঁ হুঁ–একি তুমি চলে কোথায়?
বাবা মা কে ডাকো না—
দেখলি তো টুকাই, তোর বাবা কত নিষ্ঠুর!
না সুতপা না, তুমি আমায় চিনলে না গো, চিনলে না। চল ঘরে চল, তুমি চলে গেলে আমরা কার কাছে থাকব! আমরা যে তোমার কাছে একটু ভালো ভাবে থাকব বলে এসেছি।