পৃথিবীতে যত বিষ, গলায় সব মিশিয়ে সুব্রতদা দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, তুমি আবার ফিরে এসেছো? লজ্জা করে না? গায়ত্রী আমার দিকে তাকালো না, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, কাঁদতেই লাগলো, আমি ঠায় দাঁড়িয়ে— গায়ত্রীর দিকে আমার দু-চোখ। গায়ত্রী চোখ মুছলো, আমাকে দেখলো না, সুব্রতদার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো, আমাকে ক্ষমা করো, না ফিরে আমার উপায় নেই, আমাকে ক্ষমা করো।
সম্পর্ক – চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
এই বলো না, আমাকে করে দেবে তো!
সবসময় খালি বলবে না তো, আমাকে করে দেবে তো, করে দেবে তো–। কথাটা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল।
ওরকম করো কেন! তুমি না, আমাকে একদম ভালোবাস না।
করে দিলেই বুঝি ভালাবাসা হয়! আর করে না দিলে বুঝি ভালবাসা হয় না, তাই যদি হত তবে ছেলেরা আর কোন মেয়েকে ভালবাসতে যেতো না। এই জন্যেই বলেছিলাম— বিয়ে করার দরকার নেই। বিয়ে করেছ কি মরেছ! বিয়ে করা মানেই “ভালবাসার অপমৃত্যু!”
বাবা! তোমার কি মুখ!
আমি তোমায় কি এমন খারাপ কথা বলেছি!
এটা খারাপ কথা না? কিছুদিন ধরে দেখছি তুমি ঐ একই কথা বলে চলেছ।
তোমাকে কি, আমি করে দিই-ই না নাকি! তোমার হঠাৎ হঠাৎ বায়নাক্কা, তোমার ঐ বায়নাক্কা সামলাতে গিয়ে আমার প্রাণটা একেবারে ওষ্ঠাগত হয়ে গেল!
আহাঃ রে কি ফুলের মতন প্রাণ তোমার!ইস, টোকা লাগলেই পাপড়িগুলো ঝরেঝরে পড়ছে।
এই সুতপা, তুমি আমাকে একেবারে ইনসাল্ট করে কথা বলবে না, বোলে দিলাম! তুমি যখনই কথা বল, আমাকে ইনসাল্ট করে কথা বল। এটা ঠিক নয়, বোলে দিলাম।
তোমাকে কি এমন ইন্স্যাল্ট করে কথা বলেছি। করে দিতে বললে—ইসাল্ট করে কথা বলা হয় নাকি! এতো আগে জানতাম্ না।
এই সুতপা, সুতপা, আগে জানলে—তুমি কি করতে হা! কি করতে!
না না, চাদু, কি আবার করব! তোমায় ফুল দিয়ে পুজো করতাম্।
তুমি আমায় চাদু বললে কেন? তুমি আমার নাম জান না?
হ্যাঁ জানি বৈ কি, নিশ্চয়ই জানি!
স্বামীকে নাম ধরে ডাকা যায় না কিনা, তাই তোমার একটা ওরফে নাম দিয়েছি চাদু।
চাঁদু নাম দিয়ে আমাকে ভোলানো যাবে না, আমি কিছুতেই করে দেবো না। পাশের বাড়ীর স্বপনদা যে করে দিয়েছে।
বেশ করেছে, করে দিয়েছে। আমি করে দেবো না। আমার কাছে থাকতে হয় থাক, না হলে স্বপনদার কাছে চলে যাও।
ছিঃ! সমীরণ, তুমি কি নোরা ব্যাটাছেলে। তোমার মুখটা এত বাজে আগে জানতাম না।
এই সুতপা তুমি আবার বাজে কথা বলছ! বলেছি না, তুমি একদম বাজে কথা বলবে না।
এই কি এমন বাজে কথা বোললাম্ গো!
বাজে কথা না, ওটা বাজে কথা না!
কোনটা বাজে কথা বল, তোমাকে বলতেই হবে।
ঐ যে বললে আগে জানতাম না, আগে জানলে কি করতে!
আমি বলেছি, পাশের বাড়ীর স্বপনদা ওঁর বৌকে করে দিয়েছে। এটা কি এমন বাজে কথা হল, শুনি!
পাশের বাড়ীর স্বপনদা ওর বৌকে করে দিয়েছে বলে আমাকেও করে দিতে হবে নাকি! পাশের বাড়ীর স্বপনদা তো অফিস থেকে দুনম্বরী পয়সা আয় করে, আমি করি নাকি!
আহা রে, একেবারে সতী নাম্বার “ওয়ান”! আমি ওসব শুনব না। আমাকে করে দিতেই হবে। করে দিতে না পারলে বিয়ে করেছিলে কেন, শুনি! তোমার রূপ ধুয়ে জল খাব নাকি। শুনে রাখ সমীরণ, রূপ দেখে বেশীদিন চলে না। ছেলেদের অলংকার শুধু টাকা, বুঝলে!
হ্যাঁ, বুনা, বুঝেছি, বেশ বুঝেছি। এই জন্যেই লোকে বলে, “মা দেখে ছেলের পেট” ছেলেটা দুটো খেতে পেল নাকি আগে দেখে, আর তোমরা, তোমরা দেখ স্বামীর পকেট, পকেটটা কত ভারী!
তা মা কে নিয়েই থাকলে তো পারতে! আমায় বিয়ে করার দরকার কি ছিল!
বাব্বা! সুতপা, তুমি আমার মাথাটা না খেয়ে আর ছাড়বে না দেখছি! একজনের মাথা তো খেয়েছে। আমার মাথাটা না খেলে তোমার আর শান্তি হচ্ছে না বুঝি! এই তো কদিন হল, কত কষ্ট করে, ধার দেনা করে তোমার বায়নাক্কা মেটালাম, রঙীন টিভি কিনে দিলাম।
বাব্বা! কি মিথ্যেবাদী তুমি! সমীরণ, তুমি এত মিথ্যা কথা বলো, আগে জানতাম নাতো, টিভি কিতে আমি তোমায় টাকা দিই নি বুঝি!
এই সুতপা, তুমি কত টাকা দিয়েছ, বল, বল। সত্যিকথা বল।
সত্যিই তো বলছি সমীরণ। এই মাসের পুরো পেনশনের টাকাটা ধরে দিইনি তোমায়! বাব্বা! তুমি এত মিথ্যা কথা বলো। সত্যিই বাবা আগে জানতাম না।
এই সুতপা, তুমি আবারও বাজে কথা বলছ।
বেশ করেছি বলেছি। একশ বার বলব। টাকা দিয়েছি, তাই বলেছি। তোমার মত আমি মিথ্যাবাদী নাকি!
বেশ তো বেশ, সুতপা তুমিই বল, কোন যুক্তিতে আমি তোমার নামে বাড়ী করে দেবো! আমি তো বেশ ভালো রকম জেনে গেছি যা তোমার নামে দেবোঐ সবই তো তোমার মেয়ের জন্য ড্রেনেজ হবে!
কি বললে, সমীরণ! আমার মেয়ের নামে ড্রেনেজ হবে! বল, এ পর্যন্ত কি ড্রেনেজ হয়েছে।
ড্রেনেজ হয়নি, সুতপা! এই তো তুমি তোমার নাম করে গয়না বানাও, মেয়ের জন্য ড্রেনেজ। শালোয়ার কামিজ বানাও, নিজে পরো না মেয়ের জন্য ড্রেনেজ, ভালো ভালো শাড়ী কেন, মেয়ের নামে ড্রেনেজ।
বাঃ সমীরণ বাঃ। এই জন্যই বৃটিশ অনেক দিন আগে আমাদের দেশ ছেড়ে চলে গেছে। ওরা বুদ্ধিমান, তাই ওরা আগে থেকেই বুঝে ছিল, তোমার মত আকাট মূখের হাতে পড়ে ইংরেজী ভাষাটার কি দুর্দশা হবে! “মেয়ের নামে ড্রেনেজ!” কি সুন্দর ইংরেজী!
এই সুতপা, দেখলে তো, দেখলে তুমি আমাকে কি ভাবে ইল্লাল্ট কর!