উত্তর : আমি একজন কবি। কবিতা লিখি। একটা কবিতার বই বের করা দরকার। প্রকাশক পাচ্ছি না। হিমু সেজে হৈচৈ করার জন্য প্রকাশক সাহেব খুশি হয়ে আমার কবিতার বই ছাপবেন, এই আশায় ফালতু কাজটা করেছি।
প্রশ্ন : বই কি উনি ছেপেছেন?
উত্তর : জি না। এখন উনি আমাকে চিনতেই পারেন না।
প্রশ্ন : আপনার কবিতার বইয়ের নামটা জানতে পারি?
উত্তর : পারেন—’একটা কালা বিড়াল আমার সিম কার্ডটা দুধে ভিজিয়ে খেয়ে ফেলেছে’। প্রশ্ন : নাম তো খুব আধুনিক।
উত্তর : আমি আধুনিক কবি, আমার কবিতার নাম কি ঐতিহাসিক হবে?
প্রশ্ন : ভাই, আপনি কোন রাশির জাতক?
উত্তর : আমি মোটা রাশির জাতক।
প্রিয় পাঠক! আধুনিক কবি সাহেব আমার সঙ্গে তামাশা করলেন। তিনি বললেন, আমি মোটা রাশির জাতক। অনুসন্ধানে জেনেছি তিনি মেষ রাশির জাতক। এই দেশে সৎ সাংবাদিকতা করা কত কঠিন তা কি বুঝতে পারছেন? আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ কারণেই বলেছেন, ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’।
আমরা হিমু গ্রন্থের লেখকের বাড়িতে এক সকালে উপস্থিত হলাম। লেখক সাহেব খালি পায়ে লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমরা তাকে কয়েকটি প্রশ্ন করে বড়ই আহত হয়েছি। আপনাদের কাছে পুরো কথোপকথন তুলে দিচ্ছি–বিচারের ভার আপনাদের।
প্রশ্ন : স্যার, ভালো আছেন?
লেখক : কী বলতে এসেছ, বলে বিদায় হও। ভালো আছি না মন্দ আছি দিয়ে কী করবে? তুমি ডাক্তার না। তোমার সঙ্গী কম্পাউণ্ডার না।
প্রশ্ন : হিমু হলুদ পাঞ্জাবি পরে কেন?
লেখক : হিমু খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করে বলে প্রায়ই বিষ্ঠায় পা দেয়। বিষ্ঠার রং হলুদ। হিমু বিষ্ঠা পছন্দ করে বলেই হলুদ তার প্রিয় রং। বিষ্ঠা কি জানো তো? বিষ্ঠা হলো ‘গু’।
এই ধরনের উত্তরের পর আর কিছু বলার থাকে না। তারপরেও আমি অতি ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করলাম স্যার, আপনার তিন মেয়ের মধ্যে বড়টির বিবাহ হয়ে গেছে বলে শুনেছি। যে দু’জন বাড়ি আছে তাদের কারো সঙ্গে কি আপনি হিমুর বিবাহ দিতে রাজি আছেন? আপনি হিমুর শ্বশুর ভাবতেই ভালো লাগছে।
লেখক খানিকক্ষণ কটমট করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, গাধা মানুষকে কী বলে তুমি জানো?
আমি বললাম, জানি না স্যার।
লেখক বললেন, গাধা মানুষকে বলে গা-মানুষ। তুমি একজন গা-মানুষ। আমি নিজেও একজন গা-মানুষ। গা-মানুষ না হলে কেউ হিমুকে নিয়ে এতগুলো বই লেখে না। এত যন্ত্রণা মাথায় নেয় না। এখন বিদায় হও।
এই পর্যায়ে লেখকের স্ত্রী (দ্বিতীয় স্ত্রী) শাওন ম্যাডাম আমাদের অন্য ঘরে নিয়ে চা-নাশতা খেতে দেন এবং বলেন, লেখকের কথায় কিছু মনে করবেন না। সকালবেলায় তার মেজাজ খারাপ থাকে। শাওন ম্যাডামকে চিনেছেন তো? তাকে নিয়ে আমি একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপিয়েছিলাম। শিরোনাম ‘কালনাগিনীর প্রেমকথা’। আশা করি আপনাদের চোখে পড়েছে, যদিও অনেক দিন আগের কথা।
অত্যন্ত বিষণ্ণ হৃদয়ে আমরা লেখকের বাসস্থান ত্যাগ করি এবং ‘অন্যরাত’ প্রকাশনার কর্ণধার জনাব আজহারুল ইসলাম সাহেবের অফিসে উপস্থিত হই। তিনি সমস্ত ঘটনা শ্রবণ করে দুঃখভারাক্রান্ত হন। তিনি লেখকের উগ্র মেজাজের কঠিন সমালোচনা করেন। তার বক্তব্য ছিল বাস্তব এবং যুক্তিসম্মত। তিনি বলেন, হিমুবিষয়ক বই আমাদের চালু আইটেম। হিমুকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য। লেখককে আমরা অনেক অনুরোধ করেছি যেন অন্তত বর্ষাকালে হিমু রাবারের জুতা পরতে পারে এই ব্যবস্থা করা হয়। বর্ষাকালে নগরীর নালা নর্দমার দূষিত পানির ওপর খালি পায়ে কেউ হাঁটে না। একবার পা কেটে গেলে গ্যাংগ্রিন ফ্যাংগ্রিন কত কিছু হতে পারে। তখন পা কেটে ফেললে কী অবস্থা হবে লেখক স্যার কি বুঝতে পারছেন? ল্যাংড়া হিমুর বই কেউ পড়বে?
পৌষ-মাঘ মাসের শীতে হিমু বেচারাকে একটা পাঞ্জাবি পরে ঘুরতে হয়। ঠাণ্ডা লেগে নিউমোনিয়া বাধালে উপায় আছে? লেখক স্যারকে আমরা কত বুঝিয়েছি পৌষ-মাঘ মাসের শীতে তিনি যেন হিমুর জন্য চাদর বা কোটের ব্যবস্থা করেন। তিনি তাতেও রাজি না।
আমি আজহারুল ইসলাম সাহেবের প্রতিটি কথায় একমত হয়েছি। উনার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানতে পেরেছি, লেখক স্যার হিমুকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কীভাবে মারবেন ঠিক করতে পারছেন না বলে এখনো মারেন নি। তার মাথায় যে কোনো সময় আইডিয়া চলে আসবে হিমুর জীবনাবসান হবে। কী ভয়ঙ্কর কথা!
প্রিয় পাঠক! স্থানাভাবে হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার এবার দিতে পারছি না। আগামী যে কোনো বিশেষ সংখ্যায় সাক্ষাৎকার পত্রস্থ করা হবে। পাঠক সমাজের অবগতির জন্য জানাচ্ছি আপনারা হিমু সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। যেমন তার রাজনৈতিক মতাদর্শ (বিএনপি না আওয়ামী লীগ)। রূপচর্চা বিষয়েও তিনি আমাদের মূল্যবান মতামত দিয়েছেন। অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরি করে চামড়ার যে ক্ষতি হয় সেই ক্ষতিপূরণে কী করা উচিত ইত্যাদি।
হিমু-রূপার প্রণয় বিষয়েও তিনি মুখ খুলেছেন। যদিও তিনি বলেছেন, এই বিষয়টা অফ দ্য রেকর্ড, তারপরেও কিছু কাটছাঁট না করে আমরা আপনাদের জানাব। পাঠকের কৌতূহল মেটানো আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
আপনাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে। আল্লাহ হাফেজ।