প্রশ্ন : আপনার স্বপ্নের পুরুষ সম্পর্কে যেসব গুণের কথা আপনি বলেছেন তার কোন কোনটি হিমুর মধ্যে আছে?
কনা : ওই পাগলা হিমুর বিষয়ে দয়া করে কোনো প্রশ্ন করবেন না।
আমরা মিস কনার কিছু ছবি তুলতে চাইলাম। তিনি মাথায় জবজব করে তেল দিয়েছেন বলে ছবি তুলতে রাজি হলেন না। আমাদের অন্য আরেকদিন টেলিফোন করে আসতে বললেন। পত্রিকার পাঠকের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে বললাম। তিনি বললেন—’সৎ হও। এদেশে সৎ মানুষের বড়ই অভাব।’
পাঠকদের নিশ্চয়ই হিমুভক্ত বাদলের কথা মনে আছে। আমরা বাদল সাহেবের ইন্টারভিউ নিতে তার ধানমণ্ডির বাসায় উপস্থিত হলাম। আমাদের বসার ঘরে বসানো হলো। দীর্ঘ সময় (প্রায় ৫০ মিনিট) বসে থাকার পর বাদলের বাবা (হিমুর খালু সাহেব) উপস্থিত হলেন। আমরা কী উদ্দেশ্যে এসেছি শুনেই তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। তিনি বললেন, এই বাড়িতে হিমুর নাম উচ্চারণও নিষিদ্ধ, এটা কি তোমরা জানো না? এ মুহূর্তে তোমরা যদি বাসা থেকে বের না হও, তাহলে তোমাদের কুত্তা দিয়ে কামড় খাওয়াব।
রাগী এই ভদ্রলোকের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কুকুরের গর্জন শোনা গেল। বাদলের বাড়িতে কুকুর থাকে এমন কোনো তথ্য আমরা হিমুর কোনো বইয়ের পাইনি। আমরা পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গেট দিয়ে বেরুচ্ছি– বাদলের বাবার রাগ তখনো কমেনি। তিনি উঁচু গলায় হম্বিতম্বি করছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তিনি দারোয়ানকে বললেন, এই দুই গাধাকে কাপড়-চোপড় খুলে নেংটা করে রাস্তায় ছেড়ে দাও। শিক্ষিত ভদ্র সমাজের একজন প্রতিনিধি এমন ভাষা ব্যবহার করবেন আমরা তা কখনোই কল্পনা করিনি। এ জন্যই হয়তো দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান বলেছেন—’উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’।
যা হোক আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল কোতোয়ালি থানার ওসি জনাব কামরুল সাহেবের কাছে। পাঠক মাত্রই জানেন, হিমু অনেকবার এই থানা হাজতে রাত কাটিয়েছে। ওসি কামরুল সাহেব সুদর্শন মানুষ। গাত্রবর্ণ গৌর এবং হাস্যমুখী। তিনি অত্যন্ত ভদ্র ব্যবহার করলেন। আমাদের চা-শিঙ্গাড়া এবং বিস্কিট খাওয়ালেন। ওসি সাহেবের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হলো :
প্রশ্ন : ওসি সাহেব স্নামালিকুম। ভালো আছেন?
ওসি : পুলিশের চাকরি করে ভালো থাকা কি সম্ভব?
প্রশ্ন : হিমু অনেকবার থানা হাজতে রাত কাটিয়েছেন, এটা কি সত্য?
ওসি : অনেকবার না, দু’তিনবার হতে পারে। থানার রেকর্ড না দেখে বলতে পারব না।
প্রশ্ন : হিমুকে প্রচুর মারধর করা হয়েছে, এটা কি সত্য?
ওসি : পুলিশ সম্পর্কে আপনাদের একটা ভুল ধারণা আছে। আপনারা ধরেই নেন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া মানেই শারীরিক নির্যাতন। পুলিশ জনগণের সেবক।
প্রশ্ন : হিমুকে কখনোই শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি?
ওসি : অবশ্যই না। তদন্তের স্বার্থে আমরা জেরা করি, এর বেশি কিছু নয়।
প্রশ্ন : ডিবি পুলিশের পানির ট্যাংকিতে একবার একটা ডেডবডি পাওয়া গেল–এই বিষয়ে কিছু বলবেন?
ওসি : কেন বলব না? ওই লোকটা পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করতে গিয়ে পা পিছলে ট্যাংকির ভেতর পড়ে যায়। এই ছিল ঘটনা। বাকিটা পত্রিকাওয়ালাদের বাড়াবাড়ি।
প্রশ্ন : হিমু সম্পর্কে কিছু কি বলবেন?
ওসি : এখন বলতে পারব না ভাই। কিছু মনে করবেন না। জরুরি কাজে যেতে হবে। সরি।
পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে গত বইমেলায় জনৈক বিশালদেহী যুবক এবং একজন লাক্স সুন্দরী হিমু এবং হিমুর স্ত্রী সেজে অনেক ক্যারিকেচার করেছিল। মেলার ভাবগাম্ভীর্য এবং পরিবেশ নষ্ট করেছিল। আমরা এই দু’জনের ইন্টারভিউ নেওয়ার চেষ্টা করি। লাক্স সুন্দরীকে পাওয়া যায়নি। তিনি চ্যানেল আইয়ের শুটিংয়ে ব্যাংকক ছিলেন (নাটকের নাম ‘যদি মন কাঁদে’ নায়ক ফেরদৌস)। বিশালদেহী যুবককের দেখা পাই। তিনি ‘উন্মাদ’ অফিসে বসে পরাটা, গরুর মাংস খাচ্ছিলেন। ‘উন্মাদ’ পত্রিকার সম্পাদক কার্টুনিস্ট আহসান হাবিবও তখন উপস্থিত ছিলেন। আমরা তাকে দু’ একটা প্রশ্ন করি। কারণ হিমুর লেখক আহসান হাবীবের বড় ভাই।
প্রশ্ন : আপনি কি হিমুর স্রষ্টা বিষয়ে দু-একটা কথা বলবেন?
উত্তর : উনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই বিষয়ে আর কিছু বলব না।
প্রশ্ন : পাঠকরা শুনতে চায় একটা কিছু বলুন।
উত্তর : আমার বড় ভাইয়ের হাতে একটা দামি ক্যামেরা আছে। এই ক্যামেরায় তিনি শুধু জন্মদিনের ছবি তোলেন এবং জানেন না যে, তার ক্যামেরায় ফিল্ম নেই।
প্রশ্ন : এটা কি আপনার কথা?
আহসান হাবীব : জি না, আমার মেজো ভাইয়ের কথা। উনি আবার অনেক জ্ঞানী।
আমরা বিশাল বপু যুবকের সঙ্গে কথা বললাম। তার খাওয়া তখনো শেষ হয়নি। তিনি দ্বিতীয় দফায় গোশত-পরাটা আনিয়েছেন।
প্রশ্ন : ভাই কী করছেন?
উত্তর : দেখতেই তো পাচ্ছেন, গোশত-পরাটা খাচ্ছি। অকারণে প্রশ্ন করেন কেন?
প্রশ্ন : হিমু কি আপনার মতো মোটা?
উত্তর : হিমু আণ্ডার ওয়েট, তার ওজন ৫০ কেজির নিচে, এমন কথা কি কোনো বইয়ে লেখা আছে? প্রশ্ন
প্রশ্ন : ভাই রেগে যাচ্ছেন কেন?
উত্তর : খাওয়ার সময় বিরক্ত করছেন, এ জন্য রেগে যাচ্ছি। খাওয়ার সময় কোনো ইন্টারাপশান আমি পছন্দ করি না।
প্রশ্ন : বইমেলায় হিমু সেজে আপনি গেলেন, কেন গেলেন হিমুর প্রতি মমতাবশত?