*
আমরা পাঠকদের কথা দিয়েছিলাম ঈদ সংখ্যায় হিমু এবং মিসির আলি সাহেবের একান্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হবে। দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, মিসির আলি অসুস্থ হয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল, তবে তিনি এখন ভালো আছেন। তারপরেও তার চিকিৎসকরা তাকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে বলছেন। তার কোনো সাক্ষাৎকার এ কারণেই প্রকাশ করতে পারছি না।
হিমুর সাক্ষাৎকারটি পত্রস্থ করা হলো। তার কোনো ছবি দেওয়া গেল না। আমাদের নিজস্ব ফটোগ্রাফার সৈয়দ সদরুল তাকে নিয়ে ফটোসেশন করিয়েছিলেন। অজ্ঞাত কারণে একটি ছবিও প্রিন্ট হয়নি। আমরা পাঠকদের আশ্বস্ত করছি, অতি শিগগিরই হিমুকে নিয়ে আরেকটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। সেখানে তিনি পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন। শ্রেষ্ঠ প্রশ্নকর্তা পাবেন এক হাজার টাকার প্রাইজবও। এর সঙ্গে তিনি পাবেন আমাদের পত্রিকার ছয় মাসের ফ্রি গ্রাহক সুবিধা। একজন প্রশ্নকর্তা একটির বেশি প্রশ্ন করতে পারবেন না। সেই প্রশ্ন হতে হবে শালীন। প্রশ্ন পাঠানোর শেষ তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০০৭। প্রশ্নকর্তা অবশ্যই তার পূর্ণ ঠিকানা পাঠাবেন। ঠিকানাবিহীন প্রশ্ন গণ্য করা হবে না।
.
প্রতিবেদকের ভাষ্য
হিমুর সন্ধানে ঢাকা শহরের অলিগলিতে এক সপ্তাহব্যাপী অনুসন্ধান চালানো হয়। যে মেসে হিমু থাকেন বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল, সেখানেও কয়েক দফা অনুসন্ধান চালানো হয়। মেসের পরিচালক জনাব আজিজুর রহমান জানান, হিমু কখন আসে কখন যান তা কেউ বলতে পারেন না। হিমুর পরিচিত জন, যেমন মাজেদা খালা এবং মিস রূপার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। মিস রূপা টেলিফোনে জানান, গত তিন বছরে হিমুর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। টেলিফোনে মিস রূপা অসহযোগিতামূলক আচরণ করেন এবং এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে আমাকে ‘ইউ স্টুপিড’ বলেও গালাগাল করেন।
মাজেদা খালা যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন। আমাকে এবং আমাদের ফটোজার্নালিস্ট সৈয়দ সদরুলকে চা এবং নিজের হাতে বানানো ডিমের হালুয়া দিয়ে আপ্যায়ন করেন। তার সঙ্গে আমাদের যে কথাবার্তা হয় তা সংক্ষেপে আপনাদের জানানো হচ্ছে :
প্রশ্ন : মাজেদা খালা, কেমন আছেন?
মাজেদা খালা : বাবা, ভালো আছি।
প্রশ্ন : আমরা হিমু বিষয়ে আপনার কাছে জানতে এসেছি।
মাজেদা খালা : বলো, কী জানতে চাও?
প্রশ্ন। : তার পছন্দের খাবার কী?
মাজেদা খালা : যা দিই তাই তো খায়। আলাদা কোনো পছন্দের খাবার আছে কি-না জানি না।
প্রশ্ন : নাটক-সিনেমা এইসব নিয়ে তার কোনো আগ্রহ আছে?
মাজেদা খালা : অবশ্যই আছে। একবার দুপুরে আমার বাসায় এসেছে আমার সঙ্গে পুরো একটা বাংলা ছবি দেখেছে।
প্রশ্ন : ছবির নাম বলতে পারবেন?
মাজেদা খালা : অবশ্যই বলতে পারব। ছবির নাম ‘বাবা কেন ড্রাইভার?’ সোশ্যাল অ্যাকশন ছবি।
প্রশ্ন : হিমুর বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভাবছেন?
মাজেদা খালা : অবশ্যই ভাবছি। আমি ছাড়া হিমুর আর কে আছে! তাকে জোর করেই বিয়ে দিতে হবে। একটা মেয়েকে মনে মনে পছন্দ করে রেখেছি, তার নাম কনা।
প্রশ্ন : হিমু কি মিস কনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন?
মাজেদা খালা : এই বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি। দেখা যাক কী করে! বাবা, তোমরা যদি তার দেখা পাও তাহলে যেভাবেই হোক আমার এখানে নিয়ে আসবে। তোমাদের দোহাই লাগে।
মাজেদা খালার কাছ থেকে মিস কনার ঠিকানা নিয়ে আমরা তার কলাবাগানের বাসায় উপস্থিত হই।
মিস কনা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে বর্তমানে ইন্টারে পড়ছেন। আমরা যখন তার বাসায় উপস্থিত হই, তখন তিনি কদবেলের ভর্তা খাচ্ছিলেন। তার পরনে ছিল ফিরোজা রঙের একটা কামিজ। মিস কনার উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। ওজন ৫৮ কেজি। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। তিনি ধনু রাশির জাতিকা। তার পছন্দের রং সবুজ। পছন্দের খাবার শুঁটকি। চলচ্চিত্র জগতে তার পছন্দের নায়ক রিয়াজ। নায়িকা পূর্ণিমা। নাট্যজগতে তার প্রিয় অভিনেতা মাহফুজ, অভিনেত্রী শমী কায়সার। তিনি লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। থার্ড রাউণ্ডে দর্শকদের এসএমএসে বাদ পড়ে যান। তার প্রিয় কবি শেক্সপিয়ার। প্রিয় ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন। হিমুর সঙ্গে তার বিবাহ বিষয়ে যে কথাবার্তা হয় তা পত্রস্থ করা হলো :
প্রশ্ন : হিমুর সঙ্গে আপনার বিয়ের বিষয়ে যে কথাবার্তা হচ্ছে তা কি জানেন?
কনা : কেন জানব না? মাজেদা খালা আমার বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন।
প্রশ্ন : বিয়েতে আপনার মত আছে?
কনা : পাগল হয়েছেন? হিমুকে বিয়ে করে সারারাত আমি খালি পায়ে পথে পথে হাঁটব? আমি থাকব কোথায়? মেসে? সে আমাকে খাওয়াবে কী? সে এর-ওর বাড়িতে খেয়ে আসে। আমিও কি তাই করব? আমি ফকিরনি না।
প্রশ্ন : কী ধরনের স্বামী আপনার পছন্দ? অর্থাৎ আপনার স্বপ্নের পুরুষ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
কনা : সে হবে একজন হৃদয়বান আদর্শ সৎ মানুষ। তার সেন্স অব হিউমার থাকবে। বুদ্ধি থাকবে। আমাকে সে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসবে। আমার ইচ্ছাই হবে তার ইচ্ছা। আমি ফাস্টফুড খেতে পছন্দ করি, সেও আমার সঙ্গে ফাস্টফুড খাবে। তাকে বেড়াতে পছন্দ করতে হবে। প্রতি বছর আমাকে নিয়ে একবার সে দেশের বাইরে যাবে।