করিম নববধূকে বলল, তোমাদের বাড়িতে লেপ নেই?
যমুনা বলল, অবশ্যই আছে। বাপজানে বিয়ার জন্যে শিমুল তুলার নয়া ডাবল লেপ বানাইছে।
তাহলে কাঁথা কেন?
যমুনা অন্যদিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, বলব না।
কাঁথার রহস্য জানা গেল অনেক দিন পর। পুরো ব্যাপারটা করেছেন। যমুনার দাদিজান। তিনি নাতিন জামাই-এর সঙ্গে সামান্য মশকরা করেছেন।
বিয়ের প্রথম রাতে যে পুরুষের শীত লাগে সে না-কি পুরুষের জাতই না। যমুনার দাদিজান পরীক্ষা করে দেখেছেন করিম পুরুষের জাতে পড়ে কি-না। পরীক্ষায় করিম পাস করতে পারে নি। শেষ রাতে যমুনাকে লেপ আনতে বাড়ির ভেতর যেতে হয়েছিল। করিম কথা গায়ে দিয়ে থরথর করে কাঁপছে এই দৃশ্য যমুনা মেনে নিতে পারে নি।
আজ রাত শেষ হবার আগেই করিমের ফাঁসি হবে তার স্ত্রীকে গলা টিপে খুন করার জন্য। অথচ খুনটা সে করে নাই। ঐদিন দুপুরে তার প্রচণ্ড মাথা ধরল। কপালে হাত দিয়ে মনে হল জ্বর আসছে। অফিস কামাই দেয়া তার স্বভাব না। জ্বর নিয়েই সে অপেক্ষা করতে লাগল কখন চারটা বাজবে। এই সময় বাড়িওয়ালার বাসা থেকে তার কাছে একটা টেলিফোন এল। বড় সাহেবের চেম্বারে গিয়ে টেলিফোন ধরতে হল। করিমের খুবই সংকোচ লাগছিল কারণ তার টেলিফোনে কর্মচারীদের কল এলে তিনি খুব রাগ করেন। ভাগ্য ভালো সেদিন বড় সাহেব অফিসে ছিলেন না। যমুনা টেলিফোনে ভীত গলায় বলল, এক্ষুণি বাসায় আসতে পারবে?
করিম বলল, কেন?
যমুন বলল, বলব না। এক্ষুণি বাসায় আস।
কোনো সমস্যা?
বলব না।
অফিস থেকে ছুটি নিয়ে করিম রিকশা করে বাড়ি ফিরল। তার বাসা চারতলার তিন কামরায় একটা ফ্লাটে, সে আর যমুনা থাকে। বারো-তের বছরের একটা কাজের মেয়েও থাকে। মেয়েটার নাম জাহেদা। করিমের শাশুড়ির নাম জাহেদা হবার কারণে মেয়েটাকে ডাকা হতো ফুলি।
করিম সিঁড়ি থেকে চারতলায় উঠল। অনেক্ষণ কলিংবেল টিপল। কেউ দরজা খুলল না। সবসময় একবার কলিং বেল টিপলেই যমুনা ছুটে এসে দরজা খোলে।
করিম দরজায় ধাক্কা দিতে গিয়ে দেখে দরজা খোলা। সে ঘরে ঢুকল। শোবার ঘরে চাদর মুড়ি দিয়ে যমুনা ঘুমিয়ে আছে। তার ঠোঁটে রক্ত জমে কালো হয়ে আছে। কিছুক্ষণ সে হতভম্বের মত যমুনার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর অতি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামল। দারোয়ান গেট খুলে দিল। সে দৌড়ে চলে গেল রাস্তায়।
কোর্টে উকিল সাহেব তাকে অস্থির করে তুলছেন। উকিল সাহেব হালকা পাতলা মানুষ। গায়ের রং গাউনের মতোই কালো। তাঁর দাঁত এবং চোখের সাদা অংশ অস্বাভাবিক সাদা। সব সময় ঝনঝন করছে। তার চোখে চশমা কিন্তু প্রশ্ন করার সময় চশমাটা হাতে নিয়ে নেন। চশমার উঁটি আঙুলের মতো তুলে প্রশ্ন করেন। বেশির ভাগ প্রশ্নেরই কোনো আগামাথা নেই।
আপনার বাসার কাজের মেয়েটির বয়স কত?
বারো তের হবে। সঠিক জানি না।
তার সঙ্গে আপনার যৌন সম্পর্ক কত দিনের?
ছিঃ জনাব। মেয়েটা আমাকে চাচা ডাকে।
এ দেশে প্রচুর চাচা আছে যারা নিকট এবং দূরের ভাতিজিদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করে। করে না?
জনাব আমি জানি না।
আপনাদের এই যৌন সম্পর্কের বিষয়টি আপনার স্ত্রী কখন জানতে পারেন?
এই জাতীয় কোনো কিছুই হয় নাই।
আপনার স্ত্রী অকারণেই আপনাকে সন্দেহ করতেন।
আমার বিষয়ে কখনোই তার কোনো সন্দেহ ছিল না।
ঘটনার আগের দিন আপনি কাজের মেয়েটিকে ছুটি দেন। সেটা কি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সুবিধা হয় এই কারণে?
মেয়েটার বাবা অসুস্থ। সে দেশের বাড়িতে যাবে এই কারণে ছুটি চেয়েছিল। আমার স্ত্রী তাকে ছুটি দিয়েছিলেন। আমি না।
উকিল সাহেব বললেন, আপনার স্ত্রীকে আদালতে এনে জিজ্ঞাসা করা যাবে না যে ছুটি কে দিয়েছে। এটাই সমস্যা। সমস্যা না?
জি জনাব।
উকিল সাহেব এই পর্যায়ে জজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, পুলিশ জাহেদা নামের মেয়েটাকে শ্যামগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে। সে বলেছে সে কখনো ছুটি চায় নাই। তাকে হঠাৎ ছুটি দেয়া হয়। মেয়েটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে যে আসামির সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল। আমরা যথাসময়ে মেয়েটিকে উপস্থিত করবো। এখন আমরা আসামির কাছে ফিরে যাই।
আপনি বলতে চাচ্ছেন যে আপনি ঘরে ঢুকে দেখেন যে আপনার স্ত্রী খুন হয়েছে?
জি।
এত বড় একটা ঘটনা ঘটার পর আপনার উচিত ছিল প্রতিবেশীদের জানানো। তা না করে আপনি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন। রাত তিনটায় পুলিশ আপনাকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করে। এটা কি সত্যি?
জি সত্যি।
তখনো আপনার হাতে রক্তের দাগ লেগেছিল এটা কি সত্যি?
জি সত্যি। যমুনার ঠোঁটে রক্ত ছিল সেই রক্ত হাতে লেগে গিয়েছিল।
আপনার বাসা থেকে কোনো কিছুই খোয়া যায় নাই এটা কি সত্যি?
জি সত্যি।
তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে ডাকাতির উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় নাই। আমার যুক্তি ঠিক আছে?
জি।
আপানার স্ত্রী যমুনার পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল এমন আলামত পাওয়া যায় নি। হত্যাকারী টাকা-পয়সার লোভেও হত্যা করে নি আবার ধর্ষণের জন্যও হত্যা করে নি। তার মোটিভ ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। যাই হোক হত্যাকাণ্ডের পর আপনি কমলাপুর রেলস্টেশনে বসে ছিলেন কেন?
জানি না।
কেন জানবেন না? আপনার পকেটে বাহাদুরাবাদ ঘাটের একটা টিকিট পাওয়া গেছে। টিকিট কাটা হয়েছে ময়মনসিংহ পর্যন্ত। আমি ভুল বলছি?