অবশ্যই দূর হবে। মন্ত্র পাঠ করলে রানি উইপোকা মারা যাবে। উইপোকার বংশবৃদ্ধি হবে না।
আপনি কি আগেও উইপোকা দূর করেছেন?
হা করেছি। আপনি পরীক্ষা করে দেখুন। পরীক্ষা করতে তো আপত্তি নেই।
আমি বললাম, এক শর্তে আমি পরীক্ষা করতে রাজি আছি–মন্ত্রটা আপনি কাগজে লিখে দিবেন। তারপর মন্ত্র পাঠ করবেন। ভদ্রলোক রাজি হলেন না। মন্ত্র নাকি শেখাতে নেই। এতে মন্ত্রের জোর কমে যায় এবং যে মন্ত্র প্রকাশ করে দেয় তার ক্ষতি হয়।
যা-ই হোক, আমি উইপোকা তাড়াবার মন্ত্র জোগাড় করেছি। যাদের বাসায় উইপোকা আছে তারা এই মন্ত্রের ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। মন্ত্র পাঠের নিয়ম হলো, উইপোকার কিছু মাটি হাতে নিতে হবে, তাতে সমপরিমাণ লবণ মিশাতে হবে। মাটি এবং লবণ মাখতে মাখতে মন্ত্র পাঠ করতে হবে। অবশ্যই মন্ত্র পাঠের সময় শরীর শুদ্ধ হতে হবে। চোখ থাকবে বন্ধ। মন্ত্র পাঠ হলে–লবণ মাখা মাটি উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমে ছড়িয়ে দিতে হবে।
মন্ত্রে কাজ হয় কি?
আমার বেলায় হয় নি। তবে আমি অবিশ্বাসী লোক, আমার বেলায় কাজ না হওয়ারই কথা। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর।
(মন্ত্র)
উত্তর দক্ষিণ সান
বজরং প্রমাণ
উই উই সান।
বজরং প্রমাণ
পূর্ব পশ্চিম সান
উই উই প্রমাণ।
কালীর দিব্যি ধরি
অহমন্তি ধাম
দুর্জনং বন্দেৎ
পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণ সান।
উই উই প্রমাণ।
হিজ মাস্টারস ভয়েস
কুকুর সম্পর্কে আমাদের নবীর (তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) একটি হাদিস আছে। হাদিসটি হলো নবী তাঁর সাহাবীদের বলেছেন, কুকুর যদি আল্লাহর সৃষ্টির কোনো প্রজাতি না হতো তাহলে আমি কুকুর হত্যার নির্দেশ দিতাম।
এই হাদিসটি আমাকে বলেন আমার একজন প্রকাশক–কারেন্ট বুকস-এর মালিক–বইপাড়ায় যিনি হুজুর নামে পরিচিত। একদিন তিনি আমার শহীদুল্লাহ হলের বাসায় এসেছেন। আমি কথায় কথায় তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম–কুকুর সম্পর্কে আমাদের ইসলাম ধর্ম কী বলে? হুজুর আমাকে এই হাদিসটি শোনালেন।
কুকুর সম্পর্কে নবীজি এমন কঠিন মনোভাব প্রকাশ করেছেন–আমার জানা ছিল না। অবশ্যি ছোটবেলায় মাকে দেখেছি কুকুর ঘরে ঢুকলেই দূর দূর করে উঠতেন। কুকুর ঘরে ঢুকলে নাকি ঘর অশুচি হয়। ঘরে ফেরেশতা আসে না। এই প্রসঙ্গে একটা মজার গল্পও আছে। ভয়ংকর পাপী এক লোক–তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সে চি চি করে বলল, ওরে, আমি মরতে চাই না রে। তোরা তাড়াতাড়ি একটা কুকুর এনে আমার পায়ের সঙ্গে বেঁধে দে। লোকটির স্ত্রী অবাক হয়ে বলল, কুকুর বেঁধে রাখলে কী হবে? লোকটি বিরক্ত গলায় বলল, আরে বোকা মাগি, কুকুর বাঁধা থাকলে ফিরিশতা আসবে না। ফিরিশতা না এলে জান কবজ হবে না। সহজ হিসাব।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাণী হিসেবে কুকুর গ্রহণযোগ্য না, বিড়াল গ্রহণযোগ্য। ছোটবেলায় নানীজান বলতেন, খবরদার, বিড়ালের গায়ে হাত তুলবি না। বিড়াল নবীজির খুব পেয়ারা জানোয়ার। নবীজি বেড়ালের গায়ে হাত বুলাতেন। ধর্মীয় ট্যাবু সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে কিন্তু কুকুরের আদর বিড়ালের চেয়ে বেশি।
গ্রামের একটি প্রচলিত গল্পে তার প্রমাণ মেলে। গল্পটি হলো, কুকুর সব সময় প্রার্থনা করে গৃহস্থের সাত ছেলে হোক। সাত সাতটা ছেলে হলে তারা ফেলে-ছড়িয়ে ভাত খাবে! সেখান থেকে সে ভাগ পাবে। আর বিড়াল বলে, গৃহস্থ অন্ধ হোক। অন্ধ হলে গৃহস্থ বুঝবে না–কোন খাবার কোথায়। এই ফাঁকে সে খেয়ে যাবে।
কুকুর প্রাণীটির প্রতি আমার তেমন কোনো মমতা নেই। র্যাবিজ ক্যারিয়ার হিসেবেই আমি কুকুরকে দেখি। বগুড়ায় আমি জলাতঙ্কের এক রোগীকে দেখেছিলাম। না দেখলেই ভালো ছিল। ভয়াবহ দৃশ্য! রোগীর কষ্টের বর্ণনা দিচ্ছি না। দেওয়া সম্ভবও না। মনে আছে রোগীর বাবা কাঁদতে কাঁদতে সবাইকে বলছিলেন, আপনারা দোয়া করেন যেন আমার ছেলেটা তাড়াতাড়ি মরে যায়।
পঁচিশ বছর আগের দেখা ছবি এখনো দুঃস্বপ্নের মতো মনে পড়ে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। যে প্রাণী এই ভয়াবহ ব্যাধির ভাইরাস বহন করে তার প্রতি মমতা থাকার কথাও না। তারপরেও কিছু গোপন ভালোবাসা এই প্রাণীটির প্রতি আমার আছে। আমার সবচেয়ে ছোট ভাইটির জীবন একটি কুকুর তার নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়েছিল। সেই স্মৃতি ভোলা বা ভোলার চেষ্টা করা অন্যায়।
.
অরণ্যচারী মানুষের প্রথম সঙ্গী হলো কুকুর। মানব জাতির ঊষালগ্নে এই সাহসী পশু তার পাশে এসে দাঁড়াল, মানুষকে শক্তি ও সাহস দিল। মানুষকে বলল, আমি আছি। আমি তোমার পাশেই আছি। এখনো গভীর রাতে কোনো নিঃসঙ্গ মানুষ রাস্তায় হাঁটলে কোত্থেকে একটা কুকুর এসে তার পাশে পাশে চলতে থাকে।
কুকুর প্রসঙ্গে আমার নিজের অভিজ্ঞতার দুটি গল্প বলি :
শহীদুল্লাহ হলে থাকাকালীন ঘটনা। একদিন দুপুরবেলা ঠিক ভাত খাবার সময় কে যেন দরজা ধাক্কাতে লাগল। কলিংবেল টিপছে না, দরজা ধাক্কাচ্ছে–কাজেই ধরে নিলাম ভিক্ষুক। দুপুরবেলা ভাত ভিক্ষা চাওয়ার জন্যে খুব ভালো সময়। আমি দরজা খুলে দেখি বিশাল এক কুকুর। আমাদের দেশি কুকুর এত বড় হয় না। আমি কুকুটাকে কিছু খাবার দিতে বললাম। খাবার দেওয়া হলো। সে খাওয়াদাওয়া করে চলে গেল। পরদিন আবার এল–সেই দুপুরবেলা। আবারও খাবার দেওয়া হলো। তারপর সে আসতেই থাকল। আমার ছোট মেয়ে একদিন বলল, বাবা দেখ, কুকুটা ঠিক দুটোর সময় আসে।