হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) এই আয়াতের ব্যাখা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘লু’ র আগুনের অর্থ খুবই সুন্দর আগুন। হযরত উমার বিন দীনার (রঃ) বলেছেন, জ্বিন জাতি সৃষ্টি করা হয়েছে সূর্যের আগুন থেকে।
জ্বিনদের প্রকারভেদঃ তিন শ্রেণীর জ্বিন আছে—
১. এরা হাওয়ায় উড়ে বেড়ায়। খাদ্য গ্রহণ করে না। নিজেদের মধ্যে বিয়ে হয় না। সন্তান উৎপাদন করে না।
২. এরা মানুষের সংস্পর্শে আসে। খাদ্য গ্রহণ করে। বিয়ে করে। সন্তান উৎপাদন করে।
৩. সাদা রঙের সাপ এবং সম্পূর্ণ কালো কুকুরও জ্বিন।
জ্বিনদের খাদ্যঃ নবীজি (সঃ) বলেছেন, তোমাদের খাদ্য এমন সব হাড় যার প্রতি আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা-ই জ্বিনের খাদ্য। (তিরমিযী)
(আমরা শুনি জ্বিনরা মিষ্টি খেতে পছন্দ করে। তার কোনো উল্লেখ পাই নি।)
জ্বিনদের সঙ্গে মানুষের বিয়েঃ এই নিয়ে আলেমদের মতভেদ আছে। এক দল বলছেন, জ্বিন যেহেতু সম্পূর্ণ অন্য প্রজাতির, কাজেই তাদের সঙ্গে মানুষের বিয়ে অবৈধ।
আলেমদের আরেক দল বলছেন, পবিত্র কোরান শরিফে আল্লাহ শয়তানকে বলেছেন, ‘তুই মানুষের সম্পদে ও সন্তানে শীরক হয়ে যা।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৬৪)।
সন্তানে শারীক হতে হলে বিবাহ বাঞ্ছনীয়। কাজেই জ্বিনের সঙ্গে মানুষের বিয়ে হতে পারে।
মানুষ এবং জ্বিনের যৌনক্রিয়ায় যেসব সন্তান জন্মায় তারাই হিজড়া। (হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)) এদের আরবি নাম খুন্নাস।
পাদটিকা
নিউজিল্যান্ডের এক বাড়িতে দু’টা ভূত ধরে বোতলবন্দি করা হয়েছে। একটি অল্পবয়সী দুষ্ট ভূত। অন্যটি শান্ত-ভদ্র ভূত। দু’টি ভূতই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়েছে।
সূত্র : কালের কণ্ঠ, ইন্টারনেট
জ্বিনের বাদশাহ্
জ্বিনের বাদশাহর সঙ্গে বিশেষ সখ্য আছে এমন একজন আমার সামনে বসে আছে। তার নাম ছালাম। বাড়ি ফরিদপুর। মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ। মাথায় বাবরি চুল, মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখে যাত্রার সখীদের মতো টেনে টেনে সুরমা দেওয়া। পরনে নীল লুঙ্গির উপর ধবধবে সাদা হাফহাতা গেঞ্জি। মানুষটার দিকে তাকালে সাদা গেঞ্জি প্রথমে চোখে পড়ে। মনে হয় মূর্তিমান সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপন।
আমি তখন সুখাইয়ের জমিদার বাড়ির ঘাটে বসা। ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’র শুটিং করতে গিয়েছি। ছাদের রেলিংয়ে শুটিং হবে। ঘেঁটুপুত্র রেলিংয়ের উপর দিয়ে হাঁটবে।
ক্যামেরাম্যান মাহফুজ বলল, ক্রেন বসাতে দেরি হবে। স্যার, আপনি রেস্ট নিন। চা-সিগারেট খান। সব রেডি হলে আপনাকে ডাকব।
আমি ঘাটে বসে সময় কাটানোর জন্যে বই পড়ছি। বইয়ের নাম Unnecessary informations (অপ্রয়োজনীয় তথ্য)। বিচিত্র সব তথ্য পড়ে যথেষ্টই আনন্দ পাচ্ছি। স্পেনের রানী ইসাবেলা সমগ্র জীবনে দুবার মাত্র স্নান করেছেন, এই তথ্য যখন পড়ছি তখনই জ্বিনের বাদশাহর উপদ্রব। এই উপদ্রব থেকে রক্ষার উপায় হচ্ছে ধমক দিয়ে ছালাম নামধারীকে বিদায় কর। আমি তা না করে মুখের উপর বই ধরে থাকলাম। আমার কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে ছালাম নিজ থেকেই বিদায় হবে। দিনের শুরুতেই ধমকা-ধমকি করতে ইচ্ছে করছে না।
স্যারের কাছে আমি একটা আবদার নিয়া আসছি।
আমি বই থেকে মুখ সরামাম না। বই থেকে অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে থাকলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ডাকটিকিটে প্রথম যে মহিলার ছবি ছাপা হয় তিনি স্পেনের রানী ইসাবেলা।
স্যার, আপনার নিকট একটি আবদার করেছিলাম।
বই থেকে চোখ না সরিয়েই আমি বললাম, কী আবদার?
জ্বিনের বাদশাহ্ ফিল্মের শুটিং দেখার খায়েস করেছেন। যদি অনুমতি দেন।
এই কথা শোনার পর আর বইয়ে চোখ রাখা যায় না। আমি বই নামিয়ে রেখে বললাম, কে ছবির শুটিং দেখতে চায়?
জ্বিনের বাদশাহ্। উনার নাম হেকমত শাহ।
ও আচ্ছা।
অনুমতি ছাড়াই উনি শুটিং দেখতে পারেন। তাকে তো কেউ দেখবে না। উনি অদৃশ্য।
তাহলে অনুমতি চাচ্ছেন কেন?
জ্বিনের বাদশাহ্ বলে কথা। উনার একটা ইজ্জত আছে।
আমি বললাম, অনুমতি দিলাম। তাকে শুটিং দেখতে বলো।
তার জন্যে একটা চেয়ারের ব্যবস্থা কি করা যায় স্যার? চেয়ারে বসে শুটিং দেখলেন।
আমি মুখের সামনে বই ধরলাম। একে আর প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। আমি পড়ছি–স্থলভূমিতে এক মাইল হলো ৫২৮০ ফুট, আর পানিতে এক নটিকেল মাইলের দৈর্ঘ্য ৬০৮০ ফুট। এই তথ্যটাকে তেমন অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে না।
স্যার, জ্বিনের বাদশাহ্ আপনাকে সালাম দিয়েছেন। উনি বলেছেন, আসোলামু আলায়কুম। উনার সালামের জবাব যদি দেন উনি খুশি হবেন।
সালামের জবাব দেওয়ার আগেই প্রডাকশন ম্যানেজার কামরুল এসে জানাল শট রেডি হয়েছে। আমি উঠে গেলাম। জ্বিনের বাদশাহ্ হেকমত শাহকে ওয়ালাইকুম সালাম বলা হলো না।
শটটা জটিল ও বিপজ্জনক। ঘেঁটুপুত্র কমলা তিনতলার পিচ্ছিল রেলিং ধরে হাঁটবে। যে-কোনো সময় স্লিপ কেটে পড়ে যেতে পারে। নিচে ত্রিপল ধরে লোকজন আছে। পড়ে গেলে আটকাবে। জটিল শটের সময় তুচ্ছ সব ঝামেলা দেখা যায়, যার জন্যে প্রস্তুতি থাকে না। এখানেও তা-ই হলো। কমলা হাঁটা শুরু করতেই একটা দাঁড়কাক উড়ে এল। কাকটার ভাবভঙ্গি ভালো না। তার চেষ্টা কমলার মাথায় ঠোকর দেওয়া।
‘কাট’ বলে শট এনজি করা হলো। কাক দূর করার চেষ্টা চলতে লাগল। কেউ ঢিল ছুড়ছে, কেউ ক্যানেস্তারা পিটাচ্ছে। কাক ভয় পেয়ে উড়ে চলে গেল, কিন্তু শট শুরু হতেই সে উড়ে এল। নিশ্চয়ই আশপাশের কোনো গাছে তার বাসা। কমলা রেলিং ধরে এগুতেই সে ভাবে তার বাসার ডিম চুরি করতে কেউ আসছে। যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত অনেক ঝামেলা করে এলোমেলোভাবে শট নেওয়া হলো। আমি লব্রেক দিলাম।