মেজ মেয়ে পিঁপিঁ বলল, ওরা আর কি বোকামি করে না?
ওদের কাজকর্মের সবটাই বোকামিতে ভরা। মশারি বলে ওরা একটা জিনিস খাটায় জালের মতো। ছোট ছোট ফুটা। ওদের ধারণা সেই ফুটা দিয়ে আমরা ঢুকতে পারব না। হি হি হি
আমরা কি ঢুকতে পারি?
অবশ্যই পারি। ওরা ঘুমিয়ে পড়লে আমরা করি কি, কয়েক জন মিলে ফুটা বড় করে ভেতরে ঢুকি। রক্তটক্ত খেয়ে ঐ ফুটা দিয়ে বের হয়ে চলে আসি। ওরা ভাবে, আমাদের হাত থেকে খুব বাঁচা বেঁচেছে।
আসলে বাঁচতে পারে না, তাই না মা?
হুঁ। এখন তোমরা সবাই তৈরি হয়ে নাও আমার সঙ্গে যাবে এবং মানুষদের কামড়ানোর সাধারণ নিয়মকানুন শিখবে।
এটার আবার নিয়মকানুন কী?
কঠিন কঠিন নিয়ম আছে সোনামণিরা। নিয়ম না মানলে অবধারিত মৃত্যু। তোমাদের বাবা তো নিয়ম না মানার জন্যেই মারা গেল। শুনবে সেই গল্প?
পিঁ বলল, না শুনব না। বাবার মৃত্যুর গল্প শুনতে ভালো লাগবে না। মন খারাপ হবে।
মন খারাপ হলেও তোমাদের শোনা দরকার। এর মধ্যে শেখার ব্যাপারও আছে। পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখময় ঘটনা থেকেই শিক্ষা নেয়া যায়।
ঠিক আছে মা বলো আমরা শুনছি।
তোমাদের তখনও জন্ম হয়নি। আমার সবেমাত্র তোমাদের বাবার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। তোমাদের বাবা আমাকে বলল–চলো মানুষের রক্ত খাবে। আমার যেতে ইচ্ছা করছিল না। তবু তার উৎসাহ দেখে গেলাম। তোমাদের বাবা বলল–তুমি নির্ভয়ে রক্ত খাবে, আর আমি লোকটাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখব। সে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তোমাকে দেখতেই পাবে না। আমি তোমাদের বাবার কথামতো একটা মানুষের রক্ত খেতে শুরু করেছি। তোমাদের বাবা তাকে ব্যস্ত রাখার জন্যে তার চোখের সামনে খুব নাচানাচি করছে। একবার এদিকে যায়, একবার ওদিকে যায়। মাঝে মাঝে কানের কাছে গিয়ে গান গায়—
তিন তিন তিন
পিন পিন পিন।
বাহ্ বাবার তো খুব সাহস!
হ্যাঁ তার সাহস ছিল। কিন্তু এইসব হলো বোকামি সাহস। বাহাদুরি দেখানোর সাহস। মশাদের যেসব নিয়মকানুন আছে তামধ্যে প্রথম নিয়ম হলো–বাহাদুরি করবে না। বাহাদুরি করেছ কি মরেছ।
দ্বিতীয় নিয়ম— লোভী হয়ো না। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। সাধু-সন্ন্যাসীর মতো নির্লোভ হতে হবে।
কীভাবে হব মা?
রক্ত যখন খাওয়া শুরু করবে তখন লোভীর মতো খাবে না। যতটুকু তোমার প্রয়োজন তার চেয়ে এক বিন্দুও বেশি খাবে না। বেশি খেয়েছ কি মরেছ। শরীর ভারি হয়ে যাবে। উড়তে পারবে না। রক্ত খেয়ে ঐ জায়গাতেই বসে থাকতে হবে। তখন যার রক্ত খেয়েছ সে চড় দিয়ে মেরে ফেলবে।
পিঁপিঁ আঁতকে উঠে বলল, কী ভয়ঙ্কর!
মা-মশা বললেন, এই ব্যাপারটা সবাইকে প্রথমেই শেখানো হয়। তারপরেও অনেকের মনে থাকে না। লোভীর মতো রক্ত খেতে শুরু করে। ফল হলো মৃত্যু।
সবচেয়ে ছোট মেয়ে পিঁপিঁপিঁ বলল, আমি কখনো লোভীর মতো রক্ত খাব। অল্প একটু খেয়েই উড়ে চলে আসব। শুধু ঠোট ভেজাব।
সবাই এই কথা বলে কিন্তু কাজের সময় আর কারোর কিছু মনে থাকে না।
রক্ত খেতে কি খুব মজা মা?
অসম্ভব মজা। একবার খাওয়া শুরু করলে ইচ্ছা করে খেতেই থাকি, খেতেই থাকি, খেতেই থাকি।
মা, আমার খুব খেতে ইচ্ছা করছে।
চল যাওয়া যাক। শুধু একটা কথা তোমরা মনে রাখবে— আমরা কিন্তু বেড়াতে যাচ্ছি না, আমরা যাচ্ছি এক ভয়ঙ্কর অভিযানে। আমাদের যেতে হবে খুব সাবধানে।
মা-মশা তার চার পুত্র-কন্যা নিয়ে এলিফ্যান্ট পার্ক এপার্টমেন্টের আট তলায় শীলাদের বাসায় এসে উপস্থিত হলো। শীলারা তিন বোন তখন টিভি দেখছে। তাদের ছোট ভাইটা খাটে ঘুমুচ্ছে। শীলার বাবা চেয়ারে বসে কী যেন, লিখছেন। শীলার মা ছোট বাবুর পাশে বসে গল্পের বই পড়ছেন।
পি ফিসফিস করে বলল, মা, আমরা কাকে কামড়াব? বড় মেয়েটাকে কামড়াব মা? ও দেখতে সবচেয়ে সুন্দর।
মা-মশা বললেন, প্রথমেই কামড়াবার কথা ভাববে না। প্রথমে পরিস্থিতি দেখে অবস্থা বিবেচনা করবে।
পরিস্থিতি কীভাবে দেখব? ওদের কাছ থেকে ঘুরে আসব?
অসম্ভব। ওদের কাছে গিয়ে ভনভন করলেই ওরা সজাগ হয়ে যাবে। ওরা বুঝবে যে ঘরে মশা আছে। বলা যায় না মশার ওষুধও দিয়ে বসতে পারে। ওদের কিছুতেই জানতে দেয়া যাবে না যে আমরা আছি।।
পিঁ বলল, আমি কাকে কামড়াব তা তো তুমি এখনো বললে না। তিন বোনের কোন বোনটাকে কামড়াব?
ওদের কাউকেই কামড়ানো যাবে না। দেখছ না–ওরা জেগে আছে, টিভি দেখছে? টিভির প্রোগ্রামও বাজে। কেউ মন দিয়ে দেখছে না। ওদের কামড়ালেই ওরা টের পেয়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো ঘুমন্ত কাউকে কামড়ানো।
বড় মেয়ে বলল, মা, ওদের ছোট ভাইটা ঘুমুচ্ছে। ওকে কামড় দিয়ে আসি?
মা-মশা গম্ভীর গলায় বললেন, ভুলেও এই কাজ করবে না। বাচ্চার মা পাশে বসে আছে— বাচ্ছাকে কামড়ালেই মা টের পাবে। মায়েরা কিভাবে কিভাবে যেন টের পেয়ে যায়। একটা কথা খেয়াল রেখো, মা পাশে থাকলে ছোট শিশুর গায়ে কখনো বসবে না।
মাকে কামড়ে আসি মা?
হ্যাঁ, তা পারা যায়। মা বই পড়ছেন–খুব মন দিয়ে পড়ছেন। তাঁর এক হাতে বই, কাজেই এই হাতটা আটকা আছে। অন্য হাতটা খালি। এমন জায়গায় বসতে হবে যেন খালি হাত সেখানে পৌঁছতে না পারে। আমাদের আদরের বড় মেয়ে পিঁ তুমি যাও–ঐ মার রক্ত খেয়ে আস। খুব সাবধান। লোভী হবে না। মনে থাকবে?