শিশু পুষ্প আঁখি মেলি হেরিল এ ধরা
শ্যামল, সুন্দর, স্নিগ্ধ, পীতগন্ধ-ভরা;
বিশ্বজগতেরে ডাকি কহিল, হে প্রিয়,
আমি যতকাল থাকি তুমিও থাকিয়ো
আমাদের লীলাবতী পৃথিবীর সৌন্দর্য এক পলকের জন্যেও দেখতে পেল না,— এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি?
হিমু সড়ক
হিমুদের প্রধান কর্মকাণ্ড রাস্তায় রাস্তায় হাঁটা৷ কাজেই যুক্তিসঙ্গতভাবেই তাদের নামে একটা রাস্তার নাম হতে পারে৷ হিমু সড়ক কিংবা হিমু এভিনিউ৷ সেই সম্ভাবনা কীভাবে তৈরি হলো তার গল্প বলি৷
আমার মাথায় একবার ভূত চাপল অতি আধুনিক রেসিডেন্সিয়াল স্কুল করার৷ স্কুলটা হবে কুতুবপুরে আমার গ্রামের বাড়িতে৷ আদর্শ স্কুল – যা হবে এ দেশের রোল মডেল৷ আমি বেলাল বেগ নামের এক উদ্যোগী এবং স্বপ্নস্রষ্টা মানুষকে যাবতীয় দায়িত্ব দিলাম৷ স্কুলের জন্য জমি কিনতে শুরু করলাম৷
বেলাল বেগ ঢাকা-কুতুবপুর ছোটাছুটি করতে লাগলেন৷ মেহের আফরোজ শাওন স্কুলের ডিজাইন করতে বসল৷ আমাদের সবার মধ্যে বিপুল উৎসাহ৷ এর মধ্যে বেলাল বেগ আমাকে নিয়ে গেলেন এলজিইডি অফিসে৷ সেই অফিস প্রধান কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীও একজন কর্মযোগী মানুষ৷ তাকে বলেকয়ে স্কুলের রাস্তাটা পাকা করানো যায় কি না৷
কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব আমাদের বসিয়ে রেখে বেশ কিছু মিটিং সারলেন৷ বসে থাকতে থাকতে আমি নিজে ক্লান্ত এবং কিছু পরিমাণে বিরক্ত৷ যতবার চলে আসতে চাই বেলাল বেগ আমার হাত চেপে ধরেন৷ নিচু গলায় বলেন, আরেকটু অপেক্ষা করুন৷ আমাদের কন্যাদায়৷
এক সময় অতি ক্লান্ত মুখে সিদ্দিকী সাহেব এলেন৷ বেলাল বেগ নানা যুক্তি দিয়ে তাকে বোঝাচ্ছেন স্কুলের জন্য পাঁচ কিলোমিটার পাকা রাস্তা যে কত জরুরি৷ সিদ্দিকী সাহেব খুব যে মন দিয়ে তার কথা শুনছেন এরকম মনে হলো না৷ এক সময় তিনি বেলাল বেগের কথার মাঝখানেই তাকে থামিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হিমু ব্যাপারটা কী বলুন তো?
আমি গেলাম হকচকিয়ে৷ সিদ্দিকী সাহেব বললেন, আমার বড় ছেলেটা কিছুদিন হলো হিমু হয়েছে৷ হলুদ পাঞ্জাবি পরে ঘুরছে৷
আমি হেসে ফেললাম৷ হিমু ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলাম৷ সিদ্দিকী সাহেব বললেন, আপনারা খাবার না খেয়ে যেতে পারবেন না৷ বাসা থেকে টিফিন কেরিয়ারে করে আমার জন্য খাবার আসে আসুন তিনজন মিলে খাব৷ হয় যদি সুজন তেঁতুল পাতায় নয়জন৷
খাবার টেবিলে সিদ্দিকী সাহেব বললেন, এক মাসের মধ্যে যদি রাস্তাটা পাকা করে দেই তাহলে কি চলবে?
আমি হতভম্ব৷ এক মাসে রাস্তা৷ এও কি সম্ভব? ভদ্রলোক সম্ভব করলেন৷ এক মাসের আগেই রাস্তা পাকা হয়ে গেল৷ আমি ঠিক করলাম, রাস্তার নাম দেব হিমু সড়ক৷ কারণ রাস্তা পাকা করার পেছনে হিমুর সামান্য হলেও ভূমিকা আছে৷
হিমু সড়ক নাম রাখা হলো না৷ অঞ্চলের লোকজন মিটিং করে রাস্তার নাম রাখল ফয়জুর রহমান আহমেদ সড়ক৷ ফয়জুর রহমান আহমেদ আমার বাবা৷ সেই অর্থে রাস্তা হলো হিমুর দাদাজানের নামে৷ এইটাই বা খারাপ কী?
হিমু হওয়ার নিয়মাবলি
বইমেলার ওই ঘটনার পর আমি হিমু হওয়ার নিয়মকানুন নিয়ে ভেবেছি৷ কিছু নিয়ম এখানে দিয়ে দিলাম৷ আরও কিছু মনে এলে সংশোধনী দেওয়া হবে৷
হিমু হওয়ার নিয়মাবলি :
১৷ বয়স আঠারোর উপর হতে হবে৷ আঠারোর নিচে হিমু হওয়া যাবে না৷ বিশেষ ব্যবস্থায় আঠারোর নিচেও হিমু হওয়া যাবে, তখন বাবা-মা এবং স্কুলের হেডমাস্টার সাহেবের অনুমতি লাগবে৷
২৷ হলুদ পাঞ্জাবি বাধ্যতামূলক৷ শীতকালে হলুদ চাদর পরা যেতে পারে৷ বাংলাদেশের সীমানার বাইরের হিমুরা হলুদ পাঞ্জাবির বদলে হলুদ শার্ট বা জ্যাকেট পরতে পারবে৷
৩৷ খালি পা বাধ্যতামূলক না৷ কম দামি চামড়ার স্যান্ডেল পরা যেতে পারে৷ শীত প্রধান দেশের হিমুরা জুতা-মোজা পরতে পারবে৷
৪৷ প্রতি পূর্ণিমায় পূর্ণচন্দ্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকা বাধ্যতামূলক৷ মেঘ-বৃষ্টির কারণে চাঁদ দেখা না গেলে কল্পনায় চাঁদ দেখতে হবে৷
৫৷ বৃষ্টি বাদলার দিনে ছাতা ব্যবহার করা যাবে না৷ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যেতে হবে৷ ঠাণ্ডা লেগে গেলে চিকিৎসা নিতে হবে৷ হিমুরা শরীর ঠিক রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে৷ এতে কোনো বাধা নেই৷
৬৷ রাতে নির্জন রাস্তায় হাঁটার বিধান শিথিলযোগ্য৷ বইপত্রে দেখা যায়, হিমুরা সন্ত্রাসী এবং পুলিশের সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করে৷ নব্য হিমুদের এই কাজ করতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হচ্ছে৷ র্যাবের হাত থেকে শত হস্ত দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়৷
৭৷ হিমুরা কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থনকারী হতে পারবে না৷ তাদের একটাই নীতি হিমুনীতি, রাজনীতি নয়৷
৮৷ হিমুদের জন্য সপ্তাহে দুইদিন নিরামিষ আহার বাধ্যতামূলক৷ বাকি দিনগুলোতে মনের সুখে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে৷
ঌ৷ হিমুদের পাঞ্জাবিতে পকেট থাকে না৷ তবে কেউ যদি পকেট রাখেন তবে দোষ হবে না৷
১০৷ হিমুরা কখনোই মানিব্যাগ ব্যবহার করতে পারবে না৷
১১৷ তারা সব সময় হাস্যমুখে থাকবে, সবার সঙ্গে ঠাট্টা ফাজলামি ধরনের কথা বলবে, তবে পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যদের সঙ্গে কখনো না৷ তারা ঠাট্টা ফাজলামি বুঝে না৷
১২৷ আদি হিমুর পিতা যেসব নীতিমালা হিমুর জন্য লিখে গেছেন সেইসব নীতিমালা নিয়মিত পাঠ করতে হবে৷ সেই মতো জীবনচর্যাও পরিচালিত করতে হবে৷