আপনার খাওয়া শেষ হয়েছে না?
হুঁ।
বেয়ারাকে বিল দিতে বলুন। আমি বিল দেব।
তুমি কেন বিল দিবে?
আমি দেব। আপনাকে এই বিল কিছুতেই দিতে দেব না।
আর শুনুন আমাকে তুমি করেও বলবেন না।
তুমি তো বয়সে আমার ছোট।
বয়সে ছোট হলেও তুমি বলবেন না।
তুমি রেগে গেছ কেন?
রেগে যাওয়ার অনেক কারণ আছে আপনি বুঝবেন না। এত বুদ্ধি আপনার নেই।
এটা অবশ্য সত্য কথা বলেছ। আমার বুদ্ধি খুবই কম। তোমার বুদ্ধি ভালো। বুঝা যায়।
আবার তুমি?
অনেকক্ষণ ধরে তুমি তুমি বলেছি অভ্যাস হয়ে গেছে। মানুষ অভ্যাসের দাস।
মানুষ অভ্যাসের দাস না। অভ্যাস মানুষের দাস। প্লেটে হাত ধুচ্ছেন কেন?
অসুবিধা কী?
অসুবিধা অবশ্যই আছে। আপনি কি জীবনে কখনো ভালো রেস্টুরেন্টে খাননি।
খেয়েছি। সবচেয়ে বেশি খেয়েছি ম্যাগডোনাল্ডে। ঐখানে কাজ করতাম। ফ্লোর পরিষ্কার করতাম।।
ঝাড়ুদার ছিলেন।
তারা বলে ক্লিনার।
আপনার লজ্জা করত না?
লজ্জা করবে কী জন্যে? আমার সঙ্গে একজন ছিল— নাম ক্লিফর্ড। সে ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করত। এখন সে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির লেকচারার।
আপনি তো নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির লেকচারার হননি। আপনি এখনো ঝাড়ুদার।
সুজাত বিব্রত গলায় বলল, এখন কিন্তু ঝাড়ুদার না।
মিলি বলল, আপনার একমাত্র যোগ্যতা আপনি অন্য দেশের নাগরিক। ডলার রোজগার করেন। যে দেশের নাগরিক সেই দেশের কিছুই জানেন না। শুধু রাস্তাঘাট চেনেন। ক্যাব চালাতে হয় রাস্তা না চিনলে হবে না।
সেই দেশের কিছুই চিনি না তা ঠিক না। চিনি তো।
রবার্ট ফ্রস্টের নাম শুনেছেন?
না। উনি কে?
মিলি কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে।
বেয়ারা বিল নিয়ে এসেছে। দুই হাজার তিন শ টাকা বিল। মিলির ব্যাগে আছে সতেরো শ টাকা। লজ্জায় তার চোখে পানি এসে যাচ্ছে। সুজাত বলল, টাকা কি কম পড়েছে?
মিলি কিছু বলল না। হতাশ গলায় ব্যাগের দিকে তাকিয়ে রইল। সুজাত বলল, কত কম পড়েছে বল বাকিটা আমি দিয়ে দেই? পরে আমাকে রিটার্ন করলেই হবে।
মিলির চোখে পানি এসে গেল। সে চোখের পানি নিয়েই বাসায় ফিরল।
মিলির বড় খালা বললেন, তোকে বুদ্ধিমতী জানতাম, তুই তো বিরাট গাধা। ছেলে তোর সঙ্গে আগাগোড়া ফাজলামি করে গেছে তুই বুঝলি না? এই ছেলে অড জব করে, ক্যাব চালায় সবই সত্যি কিন্তু তার ফাঁকে পড়াশোনা করে কম্পিউটার সায়েন্সে MS করেছে। সে এখন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির লেকচারার। আমি কোনো কিছু না জেনে শুনে এমন আয়োজন করব? তুই বোকা হতে পারিস আমি তো বোকা না।
তুই রেস্টুরেন্টের বিল দিতে গেলি ছয়শ টাকা কম পড়ে গেল। সেই টাকা দিল সুজাত। আবার বলল বাকি টাকা রিটার্ন করতে। তখনও কিছু বুঝতে পারলি না? তুই রেস্টুরেন্ট থেকে কেঁদে-কেটে বের হলি সঙ্গে সঙ্গে সুজাত আমাকে টেলিফোন করল। সে হাসতে-হাসতে মারা যাচ্ছে। মিলি শোন, সুজাতের তোকে খুবই পছন্দ হয়েছে। সে আমাকে অনুরোধ করেছে যেভাবেই হোক তোকে যেন রাজি করাই। প্রয়োজন সে না-কি বাড়ির সামনে অনশন করবে। এখন তাকে বলবটা কী?
মিলি কাঁদতে কাঁদতে ফল, তাকে অনশন করতে বল।
সুজাত সত্যি সত্যি মিলিদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। হাসিমুখে হাঁটাহাঁটি করছে। মিলি তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। সে অবাক হয়ে লক্ষ করল ছেলেটার চেহারা তার কাছে সুন্দর লাগছে। বুদ্ধিমান, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর একজন যুবক। যার চোখে মায়াভাব প্রবল।
ভালোবাসার গল্প
নীলু কঠিন মুখ করে বলল, কাল আমাকে দেখতে আসবে।
রঞ্জু নীলুর কথা শুনল বলে মনে হল না। দমকা বাতাস দিচ্ছিল। খুব কায়দা করে তাকে সিগারেট ধরাতে হচ্ছে। কথা শুনবার সময় নেই।
নীলু আবার বলল, আগামী কাল সন্ধ্যায় আমাকে দেখতে আসবে।
কে আসবে?
মাঝে-মাঝে রঞ্জুর বোকামিতে নীলুর গা জ্বালা করে। এখনো তাই করছে।
রঞ্জু আবার বলল, কে আসবে সন্ধ্যাবেলা?
নীলু থেমে থেমে বলল, আমার বিয়ের কথা হচ্ছে। পাত্র দেখতে আসবে।
রঞ্জুকে এ খবরে বিশেষ উদ্বিগ্ন মনে হল না। সে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, আসুক না।
আসুক না মানে? যদি আমাকে পছন্দ করে ফেলে?
রঞ্জু গম্ভীর হয়ে বলল, পছন্দ করবে না মানে? তোমাকে যেই দেখবে সেই ট্যারা হয়ে যাবে।
নীলু রেগে গিয়ে বলল, তোমার মতো যারা গাধা শুধু তাদের চোখই ট্যারা হবে।
রঞ্জু রাস্তার লোকজনদের সচকিত করে হেসে উঠল। নীলু বলল, আস্তে হাঁটো না, দৌড়াচ্ছ কেন?
রঞ্জু এ-কথাতেও হেসে উঠল। কী কারণে জানি তার আজ খুব ফুর্তির মুড দেখা যাচ্ছে। গুনগুন করে গানের কী একটা সুর ভাজল। সচরাচর এরকম দেখা যায় না। রাস্তায় সে ভারিক্কি চালে হাঁটে।
নীলু সিনেমা দেখবে নাকি একটা?
না।
চল না যাই।
নীলু চুপচাপ হাঁটতে লাগল।
কথা বল না যে? দেখবে?
উহুঁ। বাড়িতে বকবে।
কেউ বকবে না। মেয়েদের বিয়ের কথাবার্তা যখন হয় তখন মায়েরা তাদের কিছু বলে না।
কে বলেছে তোমাকে?
আমি জানি। তখন মায়েদের মন খুব খারাপ থাকে। মেয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। এইসব সেন্টিমেন্টের ব্যাপার তুমি বুঝবে না। চল একটা সিনেমা দেখি।
না।
বেশ তাহলে চল কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে বসে চা খাওয়া যাক।
নীলু সৰু চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, খুব পয়সা হয়েছে দেখি।
রঞ্জু আবার হেসে উঠল, পরক্ষণেই গম্ভীর হয়ে বলল, কী ভেবেছ তুমি? রোজ তোমার পয়সায় চা খাব? এই দেখ।