shoe john.
ইউরোপ আমেরিকায় জন মানে বাথরুম। তাহলে তার নামের অর্থ দাঁড়াচ্ছে জুতা বাথরুম। আরো খারাপভাবে বললে– জুতা টাট্টিখানা।
বোকাটা 6R সাইজের দুটা ছবি নিয়ে এসেছে। আগ্রহ করে ছবি দেখিয়েছে। ছবি দেখে কিছুক্ষণের জন্যে তিনি বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। কারণ একটা ছবিতে প্রেসিডেন্ট বুশ সুজনের গলা জড়িয়ে ধরে আছেন। অন্য ছবিতে প্রেসিডেন্ট কেনেডি আরবি কায়দায় সুজনের গালের সঙ্গে গাল লাগিয়ে আছেন। তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, ব্যাপার কী?
সুজন বলল, ফটোশপে করে দিয়েছে। হানড্রেড পারসেন্ট রিয়েল মনে হয়। একশ ডলার করে নিয়েছে। দুটা ছবিতে দুশ ডলার চলে গেছে। টেন পারসেন্ট ডিসকাউন্ট পাওয়ায় টোটাল একশ আশি ডলার লেগেছে।
তিনি বললেন, একশ আশি ডলার খরচ করে এই জিনিস বানানোর মানে কী?
ড্রইংরুমে সাজিয়ে রাখব। লোকজন দেখবে। অবাক হবে।
নুরুল হক কঠিন গলায় বললেন, আমার বাড়িতে এই ছবি টাঙাবে না।
না কেন?
আমি লোকজনকে অবাক করতে পছন্দ করি না। তুমি নিউইয়র্কে একটা মুদির দোকান চালাও। তোমার গালে প্রেসিডেন্ট কেনেড়ি চুমু খাচ্ছেন ব্যাপারটা কতটা হাস্যকর সেটা কি তুমি জানো? আমার মেয়ে নায়লা কী করে এটা অ্যালাউ করল তা তো বুঝলাম না।
নায়লা ব্যাপারটা খুব স্পোর্টিংলি নিয়েছে। সে নিজেও একটা ছবি তুলেছে টম হ্যাংসের সাথে।
টম হ্যাংসটা কে?
ফিল্মের হিরো। পলিটিক্যাল কেউ না। সুপার হিরো।
সেই ছবি কোথায়?
সেই ছবি দেখলে আপনি রাগ করতে পারেন এইজন্যে আপনাকে দেখানো হয় নি। তবে রাগ করার কিছু নাই। পুরোটাই তো Fake, আব্বা কি ছবিটা দেখতে চান?
হ্যাঁ চাই।
একটা সেকেন্ড, আমি নিয়ে আসছি।
ছবি দেখে নুরুল হক হতভম্ব। ছবিতে বোকা বোকা চেহারার এক যুবক নায়লাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে।
হঠাৎ নুরুল হকের অস্থির লাগা শুরু হয়েছে। বুড়ো আঙুলের যন্ত্রণাটাও বাড়ছে। তিনি জটিল আর্গুমেন্ট থামিয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, আদালত আজকের মতো শেষ।
তিনি এজলাস ছেড়ে খাস কামরার দিকে এগুচ্ছেন, পেছনে পেছনে আসছে হামিদ।
হামিদ বলল, স্যার কি কোনো কারণে আমার ওপর বিরক্ত?
মিথ্যা কথা বলার জন্যে সামান্য বিরক্ত।
মিথ্যা কথা কখন বললাম? ও আচ্ছা, পান খাওয়ার বিষয়টা বলছেন? মনের ভুলে এক খিলি পান মুখে দিয়ে ফেলতেও পারি। সরি ফর দ্যাট। এরকম আর হবে না।
ঠিক আছে।
স্যার, আমার আর্গুমেন্ট কেমন দেখলেন? ব্যাটাকে তো শুইয়ে ফেলেছিলাম। আজ যদি আরেকটু সময় দিতেন তাকে পুরোপুরি নক আউট করে দিতাম। বদমাইস।
নুরুল হক বললেন, আমার পেছনে পেছনে আসবেন না। প্লিজ।
নুরুল হক আজ অন্যদিনের চেয়ে সকালে বাড়ি ফিরলেন। বসার ঘরে ঢুকেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। প্রেসিডেন্ট বুশ এবং মেয়ের জামাইয়ের ছবি বাঁধানো অবস্থায় ঝুলছে। প্রেসিডেন্ট কেনেডির ছবিটাও নিশ্চয় আছে। অন্য কোনো ঘরে ঝুলানো হয়েছে।
নুরুল হকের ধারণা ভুল না। দ্বিতীয় ছবিটি তারই শোবার ঘরে। নায়লার মায়ের ছবির পাশে সাজানো। জামাইয়ের স্পর্ধা দেখে তিনি স্তম্ভিত হলেন। তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ডের মতো অপরাধ করেছে বলে তার ধারণা। পেনাল কোডে নতুন নতুন ধারা যুক্ত করার সময় হয়েছে। পৃথিবী বদলাচ্ছে, সময় বদলাচ্ছে, নতুন নতুন অপরাধ তৈরি হচ্ছে।
বাবা, কখন এসেছ?
নুরুল হক মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়ের মুখ হাসিহাসি। তার গায়ে অ্যাপ্রন, মনে হয় রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। নায়লা বলল, বাবা! আজ আমেরিকান ডিশ খাওয়াবো। বিফ রোস্ট।
নুরুল হক বললেন, ভাত কি রান্না হচ্ছে?
নায়লা বলল, বিফ লোস্ট ভাত দিয়ে কেউ খায় না বাবা। স্মেসড পটেটো করছি।
নুরুল হক বললেন, এইসব আবর্জনা আমি খাই না। ভাত ডাল করতে বল। ডিম ভাজতে বল।
এত কষ্ট করে রান্না করেছি।
তোরা দুইজন মিলে খা। আরেকটা কথা, তুই কোন অভিনেতাকে নিয়ে যে ছবিটা তুলেছিস সেটা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলবি। আজই ছিঁড়বি।
নায়লা বলল, বাবা ঐটা তো একটা Fake ছবি।
নুরুল হক বললেন, Fake আলামত তুচ্ছ করার বিষয় না। অনেক সময় Fake আলামত, Fake কথাবার্তায় ফাঁসি হয়ে যায়।
একটা ছবি তোলার জন্যে আমার ফাঁসি হয়ে যাবে?
গাধা বিয়ে করে তুই গাধি হয়ে যাচ্ছিস। এর বেশি আমি কিছু বলব না। তোর গাধা স্বামীকে জিজ্ঞেস কর সে কোন সাহসে তার মৃত শাশুড়ির ছবির পাশে তার এই ছবি টাঙিয়েছে?
নায়লা বলল, ঐ জায়গাটায় পেরেক পোতা ছিল বলে আমি নিজে টাঙিয়েছি।
নুরুল হক বললেন, তোর পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা হওয়া উচিত। অনাদায়ে আরো দুই বছর কারাদণ্ড ছবি নামিয়ে এক্ষুনি নর্দমায় ফেল।
দুপুরে আলু ভাজি, ডাল এবং ভাত খেয়ে নুরুল হক ঘুমুতে গেলেন। ঘুম ভালো হবে না তিনি জানেন। ফাঁসি হবার সম্ভাবনা আছে এসব মামলা যখন চলে, তখন তার ঘুম ভালো হয় না। বিকট সব দুঃস্বপ্ন দেখেন। দুঃস্বপ্নে যার ফাঁসি হবার কথা সে সবসময় উপস্থিত থাকে। কদর্য সব অঙ্গভঙ্গি করে। কদাকার চেহারা নিয়ে স্বপ্নে উপস্থিত হয়।
স্বপ্নগুলি বেশিরভাগ দেখেন রাত তিনটার দিকে। তারপর তার আর ঘুম হয়। তিনি জেগে বসে থাকেন। সূরা ইয়াসিন পাঠ করেন। যদি মন শান্ত হয়। মন শান্ত হয় না। একটা মানুষের জীবন মৃত্যু তার কলমে–ভাবতেই গা শিরশির করে। আলাউদ্দিনের কথাই ধরা যাক। বয়স চল্লিশ। তাকে এত বড় করার জন্যে পৃথিবীকে সূর্যের চারদিকে চল্লিশবার ঘুরতে হয়েছে। কলমের একটা লেখায় সে শেষ, অথচ পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতেই থাকবে। কোনো মানে হয়?