এখন পারেন?
না। পারি না।
ভূতের কথা তো মনে হয় বুঝতে পারছেন। ঐ ভূতটা কই?
সন্ধ্যার পর আসবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলে দেখতে পারবেন। ভালো ছেলে।
আবুল কালাম বললেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকব না। আমি এখনি বিদায় হব। আপনার কোনো আত্মীয়স্বজন আছে? যাদের খবর দিলে আপনাকে নিয়ে যাবে। দেখাশোনা করবে।
তেমন কেউ নাই। তার প্রয়োজনও নাই। ছেলে আছে। ছেলে আমাকে দেখছে।
ভূতটার কথা বলছেন?
জি।
আপনার অবস্থা দেখে খুবই মনে কষ্ট পেলাম। কিছু টাকা এনেছিলাম। দশ হাজার। টাকাটা রাখেন।
ইসলামুদ্দিন বললেন, ভিক্ষাবৃত্তি এখনো শুরু করি নাই। ছেলে চায়ও না আমি ভিক্ষা করি। সে সন্ধ্যাবেলা নদী থেকে মাছ ধরে আনে। আগুনে পুড়িয়ে লবণ মাখিয়ে দেয়। তাই খেয়ে শুয়ে পড়ি। সে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়।
টাকাটা রাখবেন না?
না।
আমি কি এখন চলে যাব?
আপনার ইচ্ছা।
আবুল কালাম সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে গেলেন। তিনি কিছুই দেখলেন না। তবে লক্ষ করলেন, ইসলামুদ্দিন অদৃশ্য কারো সঙ্গে বিড়বিড় করছেন। হাসছেন।
ইসলামুদ্দিন বললেন, বক্র জিজ্ঞেস করছে আপনি রাতে খাবেন কি-না। রাতে যদি খান তাহলে বড় একটা মাছ ধরে আনবে।
আবুল কালাম উঠে দাঁড়ালেন। একটা উন্মাদ মানুষের সামনে বসে থেকে তার কথা শোনার কোনো মানে হয় না।
আকাশে পৌষ মাসের চাঁদ উঠেছে। ইসলামুদ্দিন চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছেন। কাছেই কোথাও বক্ত আছে। রাতের খাবারের আয়োজন করছে। ভাবতেই ভালো লাগছে। মাছ পোড়াবার জন্যে আগুন তাকে জ্বালতে হবে। বক্র আগুন ভয় পায়।
ইসলামুদ্দিন ডাকলেন, বাবা বক্র!
হুঁ।
শুকনা লতাপাতা কিছু আন। আগুন করব। শীত লাগছে।
আচ্ছা।
আগুনে হাত মেলে ইসলামুউদ্দিন বসে আছেন। অনেকটা দূরে বসেছে বক্র। বক্র বলল, গল্প বলুন।
ইসলামুদ্দিন আগ্রহ নিয়ে গল্প শুরু করলেন, আমার স্ত্রী অর্থাৎ তোর মার নাম ছিল নীলিমা। নীলিমা নামের অর্থ নীল। নীলের ইংরেজি কী বল তো, দেখি মনে
আছে কি-না।
বুলু।
বুলু না। ব্লু। BLUE. বল ব্লু
ব্লু।
এই তো হয়েছে। আচ্ছা এখন শোন, তোর মাকে নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকলাম, মনটা একটু খারাপ। কারণ তোর মার দিকে তাকিয়ে দেখি সে কাঁদছে। আমার মনে হলো স্বামী পছন্দ হয় নাই এইজন্যে সে কাদছে। আমি বললাম, নীলিমা, কেঁদো না। বলার সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ করে সে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। এক জীবনে কত মানুষকে হাসতে দেখলাম, কিন্তু তোর মার মতো সুন্দর করে কাউকে হাসতে দেখলাম না।
ইসলামুদ্দিনের চোখে পানি এসে গেছে। বক্র একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। একসময় সে বলল, বাবা, কাঁদবা না। হাসো! হাসো।
ইসলামুদ্দিন চোখ মুছলেন। হাসলেন।
মিস মনোয়ারা
আচ্ছা শোন, আমার না রোজ বিকেলে গা ম্যাজম্যাজ করে। কী করা যায় বলো তো?
ইমন হতাশ চোখে তাকাল। বিয়ের পর এই সমস্যা হয়েছে। শারমিন অদ্ভুত অদ্ভুত সমস্যা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। সমস্যার সমাধান তার জানা নেই। শারমিনের সমস্যা নিয়ে হাজির হবার সময়টাও খারাপ। অফিসে যাবার আগে আগে। যখন ইমন শার্ট খুঁজে পাচ্ছে না, বেল্ট খুঁজে পাচ্ছে না। মোজা দুটার একটা আছে, অন্যটা নেই।
এই, বলো না কী করি।
সমস্যাটা কি বিয়ের আগে ছিল না বিয়ের পর শুরু হয়েছে।
আগেও ছিল। এখন বেশি হচ্ছে। MMকে খবর দেব?
MMটা কে?
মিস মনোয়ারা। সংক্ষেপে MM.
উনি কী করবেন?
গা ম্যাসাজ করে দেবেন। বাসায় এসে একঘণ্টা ম্যাসাজ দেবেন। ঘণ্টায় পাঁচশ টাকা।
গা টেপাটেপি করে পাঁচশ টাকা?
শারমিন বিরক্ত গলায় বলল, এমন বিশ্রীভাবে কথা বলছ কেন? গা টেপাটেপি হবে কেন? MM প্রফেশনাল মহিলা। ব্যাংকক থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসেছেন।
ইমন বলল, গা টেপাটেপিতে PhD করা?
শারমিন বলল, তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছ কেন? আশ্চর্য! পাঁচশ টাকা তোমার কাছে বেশি মনে হচ্ছে? রোজ তো আমি ম্যাসাজ করাব না। সপ্তাহে একদিন। মাসে চারবার–দুহাজার টাকা যাবে। সেই টাকাও তোমাকে দিতে হবে না। আমি দেব।
ইমন চুপ করে গেল। বিয়ের সময় শারমিনের বাবা তাকে পাঁচ লাখ টাকা নগদ দিয়েছেন। টাকাটা FDR করা। প্রতি তিনমাস পর শারমিন ইন্টারেস্ট তোলে এবং মহানন্দে জিনিসপত্র কেনে। পাথরের কানের দুল, হাড়ের তৈরি সাবানদানি, টাওয়েল, স্যান্ডেল।
শারমিন বলল, কথা বলছ না কেন? খবর দেব? তোমার পকেট থেকে তো টাকা যাচ্ছে না।
ইমন বলল, পকেট থেকে টাকা যাওয়া-যাওয়ি না। জিনিসটা আমার পছন্দ না। নেংটা হয়ে পড়ে থাকবে, একজন ঘোড়ার মতো তোমাকে দলাই মলাই করবে।
শারমিন বলল, আমার সঙ্গে সাবধানে কথা বলবে। রিকশাওয়ালাদের মতো কথা বলবে না। আমার মেজখালা উনার কাছে প্রতি সপ্তাহে ম্যাসাজ নেন। মিস। মনোয়ারা ম্যাসাজের আগে কার্বলিক সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেন। বুঝেছ?
হুঁ। বুঝেছি। মিস মনোয়ারাকে আসতে বলো।
আমি ঠিক করেছি প্রতি বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ম্যাসাজ নেব। ম্যাসাজের পর গোসল করে লাঞ্চ করব, ঠিক আছে?
আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন ঠিক আছে কি-না! আমাকে নিশ্চয় অফিস বাদ দিয়ে সেই সময় উপস্থিত থাকতে হবে না?
তুমি এখনো রেগে রেগে কথা বলছ। রাগ কমিয়ে স্বাভাবিকভাবে এক মিনিট আমার সঙ্গে কথা বলবে, তারপর অফিসে যাবে। তুমি মুখ ভোতা করে থাকলে আজ আমি তোমাকে অফিসেই যেতে দেব না।