তাই তো দেখছি।
শুধু চোখগুলি প্রটেক্ট করতে হয়। চোখে রোদ লাগানো যায় না।
এই জন্যই সানগ্লাস?
ঠিক ধরেছেন।
মানুষের রক্ত আপনি কখন খান? দিনে না রতে? মানুষের রক্ত খান তো?
জি খাই। বাধ্য হয়ে খেতে হয়। ভ্যম্পায়ারদের জন্যে কিছু এসেনসিয়াল ভিটামিন মানুষের রক্ত ছাড়া পাওয়া যায় না।
ও আচ্ছা।
স্যার, আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
না। আপনি আমার ঘাড়ে দাত বসিয়ে রক্ত খেয়ে ফেলবেন এটা বিশ্বাস হচ্ছে।
সেভাবে রক্ত খাই না। ব্লাড ব্যাংক থেকে কিনে নিয়ে আসি। একটা প্যাকেটে এক সপ্তাহ দু সপ্তাহ চলে যায়। ব্লাড ব্যাংকগুলি থাকায় সুবিধা হয়েছে। পছন্দসই রক্ত কিনতে পারছি। সব রকম রক্ত সবার স্যুট করে না। আমায় পছন্দের রক্ত হল। বি নিগেটিভ।
শুনে ভাল লাগল।
আপনার রক্তের গ্রুপ কি স্যার?
জানি না রক্তের গ্রুপ কি। পরীক্ষা করাইনি।
পরীক্ষা করিয়ে রাখা ভাল। শহরে মানুষ যে হারে বাড়ছে–অ্যাকসিডেন্ট তো হামেশাই হচ্ছে। যে দিকে তাকাই শুধু মানুষ। মানুষের বৃদ্ধির হার খুবই আশংকাজনক।
ভ্যাম্পায়ারের সংখ্যা বাড়ছে না?
মানুষের তুলনায় কম। আগে আমরা মানুষের ঘাড়ে কামড় দিয়ে রক্ত খেতাম। তখন ভ্যাম্পায়ার বেশি ছিল। এখন ব্লাডব্যাংক থেকে আমরা রক্ত খাচ্ছি। কাজেই ভ্যাম্পায়ারের সংখ্যা বাড়ছে না। ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিচ্ছি।
কিছু মনে করবেন না। আমি ব্যাপারটা বোঝার কোন আগ্রহ বোধ করছি না।
শোনার পর আগ্রহবোধ করবেন। ভাত খেতে খেতে শুনুন। শুনতে তো ক্ষতি নেই। ভ্যাম্পায়ার আসলে ভাইরাসঘটিত এক ধরনের অসুখ।
ও, আচ্ছা।
ভাইরাসগুলি অতি দীর্ঘজীবী। এরা বিশেষ ধরনের মৃত্যুহীন ভাইরাস। মানুষের শরীরে একবার ঢুকতে পারলে তারা আর মরে না। এবং যার শরীরে তারা ঢুকেছে তাকে বাচিয়ে রাখে নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থে। মানুষ মরে গেলে তো তারাও মরে যাবে। ঠিক না?
ঠিক বলেই তো মনে হয়।
আমাদের যে রক্ত খেতে হয় তা ঐ ভাইরাসগুলির জন্যেই। রক্তটা ওদের জন্যেই দরকার।
ও।
একটা ভ্যাম্পায়ার যখন কোন মানুষের রক্ত খায় তখন ভাইরাস একজনের গায়ে থেকে অন্য জন্যের গায়ে ঢোকে। আজকাল আমরা ব্লাড ব্যাংকের রক্ত খাওয়া ধরেছি। তাই ভাইরাসজনিত সংক্রমণ অনেক কমে গেছে।
ভাল।
তবে একেবারে যে নেই তাও না। হঠাৎ হঠাৎ অনেকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। যারা আসলে ভ্যাম্পায়ার। যেমন আজ যখন আপনাকে লালবাগের কেল্লায়। দেখলাম তখন আপনাকে ভ্যাম্পায়ার ভেবেছিলাম।
নুরুজ্জামান হতভম্ব গলায় বললেন, আমাকে ভ্যাম্পায়ার ভেবেছিলেন?
জি। আশা করি আমার কথায় আহত হননি।
নুরুজ্জমান কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলেন। লোকটার গালে ঠাশ করে একটা চড় দিতে পারলে মনটা শান্ত হত। তিনি চড় দিলেন না, শুকনো গলায় বললেন–আমাকে আপনি ভ্যাম্পায়ার ভেবেছিলেন?
জি। আপনার চোখে সানগ্লাস ছিল। আপনি ভ্যাম্পায়ারের মত উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছিলেন। আমরা ভ্যাম্পায়াররা উদ্দেশ্যহীন ভাবেই ঘোরাফেরা করি। আমাদের তো কোন কাজ কাম নেই। অফিসে যেতে হয় না। হা হা হা।
নুরুজ্জামান সাহেবের খাওয়া শেষ হয়েছে। তিনি আরও বিরক্ত হয়ে হাত ধুয়ে নিজের জায়গায় ফিরে এলেন। লোকটার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া দরকার। লোকটা হয় বদ্ধ উন্মাদ কিংবা অন্য কোন বদ মতলব আছে। মতলবটা কি ধরা যাচ্ছে না।
স্যারের খাওয়া তো হয়েছে। এবার আমার কাছ থেকে একটা সিগারেট নিন।
না, সিগারেট খাই না।
সিগারেট অবশ্যই খান। না খেলে সঙ্গে দেয়াশলাই রাখতেন না। আপনার। পকেটে দেয়াশলাই দেখা যাচ্ছে। ভ্যাম্পায়ারের কাছ থেকে সিগারেট নিলে ক্ষতি নেই। ভ্যাম্পায়ার ভাইরাস আপনাকে ধরবে না। এই ভাইরাস শুধুমাত্র রক্তবাহিত।
নুরুজ্জামান সিগারেট নিলেন।
স্যার, পান খাবেন? চমন বাহার দিয়ে একটা মিষ্টি পান দিতে বলি। ভাত খাবার পর পান খেলে ভাল লাগবে।
না, পান খাব না।
লোকটা নুরুজ্জামান সাহেবের দিকে একটু ঝুঁকে এসে বলল, আপনাকে একটা গোপন কথা বলি। অনেকেই আছে, তারা নিজেরা বুঝতে পারে না যে তারা ভ্যাম্পায়ার। দিব্যি মানুষের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমরা যারা ভ্যাম্পায়ার তাদের দায়িত্ব হচ্ছে–ওদের জানানো। হয় কি জানেন, ব্লাড ট্রান্সফিউশান থেকে ভ্যাম্পায়ার ভাইরাস গায়ে ঢুকে গেল। এইডস ভাইরাসে ধুম করে লোক মরে যায়। ভ্যাম্পায়ার ভাইরাসে এ ধরনের আর মৃত্যু নেই। সেটাও এক যন্ত্রণা। দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে কি আর ভাল লাগে? জীবন বোরিং হয়ে যায়।
আপনি কতদিন ধরে বেঁচে আছেন?
প্রায় তিনশ বছর। লালবাগের কেল্লা এই নিয়ে পঁচাত্তর বার দেখলাম। ঠিক করেছি আরো পঁচিশ বার দেখে একশ পুরা করব। তারপর আর দেখব না।
ভ্যাম্পায়ারের লক্ষণ কি?
লক্ষণ খুব সহজ। ভ্যাম্পায়ারদের রোদে ছায়া পড়ে না।
কেন?
কেন সেটা জানি না। ছায়া পড়ে না এইটুকু জানি। স্যার, যাই, আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভাল লাগল।
ভয়
ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার কীভাবে পরিচয় হলো আগে বলে নিই। কেমিস্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার এগজামিনার হয়ে পাড়াগাঁ ধরনের এক শহরে গিয়েছি (শহর এবং কলেজের নাম বলার প্রয়েজন দেখছি না। মূল গল্পের সঙ্গে এদের সম্পর্ক নেই। নামগুলি প্রকাশ করতেও কিছু অসুবিধা আছে)। এই অঞ্চলে আমি কখনো আসিনি। পরিত্যক্ত এক রাজবাড়িতে কলেজ বানানো হয়েছে। গাছ-গাছড়ায় চারদিক আচ্ছন্ন। বিশাল কম্পাউণ্ড। কিন্তু লোকজন নেই, পরীক্ষার জন্যে কলেজ ছুটি হয়ে গেছে। খা খা করছে চারদিক। আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম।