গিয়ে?
তিনি লেখাপড়া জানা বিচক্ষণ মানুষ। সাহসীও বটে। আমাকে খুবই স্নেহ করেন। যাহোক একটা বুদ্ধি তাঁর কাছে পাওয়া যাবে।
শেষমেশ তিনি আবার আমাদের কাঁচকলা দেখাবেন না তো!
না, সে ভয় নেই। আর তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে গুপ্তধন উদ্ধার হলে আধাআধি বখরা।
তাহলে চলো।
চল।
২১-২৫. সুজনবাবু একটু উত্তেজিত
সব শুনে সুজনবাবু একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন, “সাতপয়সার হাট! গগনচাঁদের হাটই সাতপয়সার হাট! খবর ঠিক তো!”
পাগলু বলল, “যে আজ্ঞে। দিনুগুণ্ডা এদের দুজনকে বলেছে।”
“তার কথায় বিশ্বাস কী?”
“আজ্ঞে সেটা যে দিনুর মামার বাড়ি। দিনুর মামাই হল সাতকড়ি।”
“বটে।”
“যে আজ্ঞে। তার সাতানব্বই বছর বয়স।”
“তা হলে তো সবই মিলে গেছে দেখছি।”
“আজ্ঞে। এখন বাক্সটা নিয়েই সমস্যা।”
“হুম!”
সুজনবাবু একটু ভাবিত হলেন, ঘরের মধ্যেই কিছুক্ষণ পায়চারি করে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, “বাক্সটা যারা চুরি করেছে তারা যদি সাত পয়সার হাট আর সাতকড়ির সন্ধান পেয়ে যায়, তা হলেই হয়ে গেল।”
জগা হঠাৎ বলল, “অভয় দেন তো একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
“কী কথা?”
“বাক্সটা আসলে কার?”
“জানি না, অনেকবার হাত বদল হয়ে আমার হাতে এসেছিল।”
জগা একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “আজ্ঞে, সঠিক ওয়ারিশটা কে সেটা জানা দরকার।”
“কেন বলো তো?”
জগা বলল, “আজ্ঞে, আমরা তো দাগি চোর, আপনারা তো তা নন। বাক্সটা নিয়ে ভদ্রলোকেরা যা করছেন তাতে বড় ঘেন্না ধরে গেল মশাই। চোরে আর ভদ্রলোকে তফাত রইল না দেখছি।”
সুজনবাবু একথা শুনে একটু হাসলেন, তারপর ঠাণ্ডা গলাতেই বললেন, “কথাটা একেবারে খারাপ বলোনি। বাক্সটা কার তা আমাদের ভেবে দেখা উচিত ছিল। যতদূর শুনেছি, বাক্সটা বার-বার এর-ওর কাছ থেকে চুরি হয়েছে বা চুরি করানো হয়েছে। ওয়ারিশও এখন খুঁজে পাওয়া যাবে কি না তা বলা কঠিন।”
জগা অভিমানী গলায় বলে “খুঁজলে তো পাবেন! কেউ তো ভাল করে খোঁজই করল না।”
সুজনবাবু একটু থমকে গেলেও ভালমানুষের মতো বললেন, “কিন্তু এখন সেসব ভেবে লাভ নেই। এখন কাজ হল রহস্যটা ভেদ করা। এবং তা থেকে যদি কিছু টাকাকড়ি পাওয়া যায় তবে তা সৎ কাজে লাগানো।”
জগা ফস করে উঠল, “সৎ কাজটা কীরকম?”
সুজনবাবু এবারও একটু থতমত খেয়ে বললেন, “আমার একটা পরিকল্পনা হল–একটা ভাল গবেষণাগার তৈরি করা।”
“তা গাঁয়ের লোকের কী উপকার হবে সুজনবাবু?”
“গবেষণায় সকলেরই উপকার।”
“আমরা গরিব চোর-ছাচোড় মানুষ। আমাদের কাছে পেটের চিন্তার বড় চিন্তা নেই। গবেষণা-টবেষণা আমরা বুঝি না। আমাদের অর্ধেক হিস্যা দেবেন বলেছেন তো!”
“হ্যাঁ বলেছি।”
“এখন বলুন তো বাবু আমরা এই তিনজনে যদি টাকাপয়সা বা গুপ্তধন উদ্ধার করি, তা হলে আপনাকে অর্ধেক বখরা দেব কেন? আপনি কিসের হিস্যাদার?”
সুজনবাবু এবার চটলেন, ফরসা মুখোনা লাল টকটকে হয়ে গেল। প্রায় কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “তোমার এত বড় সাহস!”
জগা হাতজোড় করে বলল, “কিছু মনে করবেন না, এই পাগলুদাদাই আমাদের আপনার কাছে নিয়ে এসেছে, আপনি ভাল পরামর্শ দেবেন বলে, তা পরামর্শ আর কী দিলেন! শুনছি তো, কেবল বখরার কথা আর গবেষণাগার না কী যেন, বলি কাজটা কী করে উদ্ধার হবে তার কথা কিছু বলবেন? চাট্টি খেয়ে আমাদের তো রওনা হতে হবে। রাত হতে চলল, হাতে বিশেষ সময়ও নেই।”
সুজনবাবু রাগে আর উত্তেজনায় প্রথমটা কথাই বলতে পারলেন না কিছুক্ষণ। তারপর নিজেকে অতিকষ্টে সামলে নিয়ে পাগলুর দিকে চেয়ে বললেন, “যদি আমাকে ডিঙিয়ে তোমরা সম্পদ উদ্ধার করে গাপ করো তা হলে তার পরিণতি ভাল হবে না।”
পাগলু কিছু বলার আগেই জগা বলল, “কেন বাবু, আপনি কি আমাদের মারবেন নাকি?”
এতক্ষণ রামপ্রসাদ কথাটথা বলছিল না, এবার হঠাৎ বলে উঠল, “আপ ভি চোর আছেন, হামলোগ ভি চোর আছে, গুসসা করে কী হোবে? মগজমে কোই মতলব আসলে বলিয়ে ফেলুন, আপনার ভি দু-চার পইসা হেবে, হামার ভি দু-চার পইসা হোবে।”
সুজনবাবুকে খুবই চঞ্চল আর অস্থির দেখাচ্ছিল। তিনি ফের কিছুক্ষণ পায়চারি করে বললেন, “তোমরা এখন যাও। আমার ভাবতে কিছুক্ষণ সময় লাগবে। এক ঘণ্টা বাদে এসো।”
তিনজন নিঃশব্দে উঠে বেরিয়ে গেল।
সুজনবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনজন অন্ধকারে কিছুদূর হেঁটে এসে একটা গাছতলায় দাঁড়াল।
জগা বলল “পাগলুদাদা, সুজনবাবুর সঙ্গে তোমার সম্পর্কটা কী একটু বলবে?”
পাগলু হেসে বলল, “ওরে, উনি যে আমার মাসতুতো ভাই।”
“মাসতুতো ভাই?”
“চোরে-চোরে তো তাই সম্পর্ক। “তাই বলো, লোকটা কিন্তু সুবিধের নয়।”
“তা আর বলতে, লোক ভাল হলে আমাদের সঙ্গে গুজগুজ ফুসফুস করে?”
“তা লোকটা চায় কী?”
“মুফতে রোজগার করতে চায়। ভেবেছিলাম লোকটা কিছু কাজের কথা বলতে পারবে।”
হঠাৎ জগা বলল, “ওই দ্যাখ, সুজনবাবু কোথায় যাচ্ছে!”
বাস্তবিকই দেখা গেল সুজনবাবুর বাড়ির দিক থেকে একটা মোটরবাইক বেরিয়ে ঝড়ের বেগে কোথায় যেন চলে গেল।
“কোথায় যাচ্ছে বলো তো পাগলুদাদা?”
“কী করে বলব? তবে নিতাই পালের সঙ্গে সুজনবাবুর দোস্তি আছে।”
“তা হলে এখানেই চেপে বসে থাকি এসো। সুজনবাবু তো এক ঘণ্টা সময় দিয়েছে।”
“অগত্যা তাই।”
“তারা বসে-বসে নানা কথা কইতে লাগল।”
আধঘণ্টা বাদে দেখা গেল, মোটরবাইকটা ঝড়ের বেগে ফিরে আসছে। সামনে সুজনবাবু পেছনের ক্যারিয়ারের আর একটা লোক।