হাঁ হাঁ উ বাত তো ঠিক আছে রে জগুয়া লেকিন কুছ কানুন ভি তো আছে রে। এক ঘর মে দো চোর কভি ঘুষতা হ্যাঁয়? আশমানমে কি দোঠো চাঁদ হোয় রে পাগল, যৌন আগে ঘুসিয়েছে সেই সব লিবে।
জগার মাথাটা একটু গরম হয়েছিল, এবার আরও এক ডিগ্রি চড়ল। সে বলল, এঃ, আমাকে আইন শেখাতে এলেন! আইন আমিও কিন্তু কম জানি না। আমি এ গাঁয়ের চোর, আমার হক অনেক বেশি। তুমি তো বাইরের চোর গাঁয়ে ঢুকে অন্যায় করেছ।
তুকে কে বলল হামি বাহারের লোক আছি? তুহার উমর কতো রে বদমাশ? হামি বহৎ আগে ই গেরামে কত কাম কাজ করিয়েছি সো জানিস? জগাইবাবু নগেনবাবু জমিদারবাবু সব আমাকে চিনে, তু তো দো দিন কা ছোঁকরা।
আমি দু দিনের ছোঁকরা?
না তো কি আছিস? আভি তো তুহার হাত ভি তরুস্ত হোয়নি, ওইভাবে জানালা ভেঙে কেউ ঢোকে? এইসাব আওয়াজ কিয়া যে মালুম তুয়া চোর নেহি ডাকু গিরা।
এঃ আমাকে বিদ্যে শেখাচ্ছে! তা তুমি কী করে ঢুকলে?
হামি তুহার মতো থোড়াই আছি, আমি যখন কুনও বাড়িতে ঘুসব তো অ্যায়সা চুপচাপ ঘুসে যাবে যে কুত্তা ভি ডাকবে না।
জগা একটু দমে গেল, লোকটা হয়তো সত্যিই তার চেয়ে পাকা লোক, নামটাও তার চেনা-চেনা ঠেকছে। একটু দমে গিয়েও সে বলে ফেলল, মাপ করে দাও দাদা, ঢুকেই যখন গেছি তখন ভাইটিকে বঞ্চিত করবে কেন? আধাআধি বখরা হোক।
রামপ্রসাদ বলল, আই ব্যাপ! আধা হিস্যা? তু তো খুনিয়া আছিস রে জুগুয়া।
কেন প্রস্তাবটা কি খারাপ?
দো-পাঁচ রুপয়া লিয়ে ভেগে যা।
এবার সত্যিই ভারি রেগে গেল জগা। বেশ হেঁকে বলল কী বললে! দো প্যাঁচ রুপেয়া! হোঃ!
রামবিলাস বেশ ঠাঙা গলাতেই বলল, তো কত লিবি? বিশ রুপেয়া হোলে খুশ তো! তাই লিয়ে যা, উখানে জামাইদাদার ম্যানিব্যাগটা পড়িয়ে আছে টেবিলের টানার মধ্যে। পঁচিশ পেয়া আছে, হামি দেখে নিয়েছি, তু বিশ রুপেয়া গিনকে লিয়ে যা।
জগা ফ্যাচ করে উঠল, আর সোনার বোতাম, হাতঘড়ি স্যুটকেস? সেগুলো সব তুমি গায়ব করবে ভেবেছো? অত সোজা নয়। আমি তাহলে চোর-চোর বলে চেঁচাব।
জগাকে চেঁচাতে হল না, তাদের কথাবার্তা বে-খেয়ালে এত উঁচু গ্রামে উঠে গিয়েছিল যে জামাইবাবাজি উঠে পড়লেন ধড়মড় করে।
কে? কে রে ঘরের মধ্যে কথা কয়? অ্যাঁ! চোর নাকি? চোর নাকি হে? এ তো ভারি আস্পদা দেখছি হরিপুরের চোরদের! আমি হলুম হারু রায়, আমার ঘরে চোর ঢোকে কোন সাহসে শুনি? জানিস শ্বশুরবাড়ির গাঁ না হয়ে আমার গাঁ মল্লিকপুরে হলে এতক্ষণে তোদের থামে বেঁধে জলবিচুটি দেওয়াতাম?
রামপ্রসাদ চাপা গলায় বলল, সত্যনাস কিয়া রে জাগুয়া! হামার নাগরা জুতিজোড়া কুথা রাখিয়েছি ইয়াদে আসছে না।
ওঃ এই তো মুরোদ, চোর নিজের জুতো খুঁজে পায় না, সে আবার আমাকে চুরি শেখাতে আসেন!
বলে গদগদ হয়ে জগা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, জামাইবাবুর কাঁচা ঘুমটা ভাঙাতে হল–বড় দুঃখের কথা।
পট করে একটা জোরালো টর্চের আলো এসে মুখের ওপর পড়ল।
তুই কে?
আজ্ঞে আমরা পাড়া-পড়শির মধ্যেই পড়ি।
ঘরে ঢুকেছিস যে! হা!
মাথা নেড়ে জগা বলল, আজ্ঞে দায়ে পড়ে ঢুকেছি, বাইরে থেকে মেলা ডাকাডাকি করেছি। তা দেখলুম বাদলার রাতটিতে আপনার ঘুমটিও বেশ জমাটিই হচ্ছে। একেবারে ক্ষীরের মতো জমাট ঘুম। হওয়ারই কথা, শ্বশুরবাড়িতে ভালমন্দ পেটে পড়েছে তার ওপর লেপের ওম। ঘুমের আর দোষ কী?
জামাই হেঁকে উঠল, বাজে কথা রাখো। কী চাও?
জিব কেটে জগা বলল, আরে ছিঃ ছিঃ, চাইব কি? গরিব বটে, কিন্তু মাগুনে মানুষ নই। বুঝলেন!
বুঝলাম, তুমি মহাশয় লোক।
আজ্ঞে তা যা বলেন, তবে কিনা পাড়া-পড়শির বিপদে আপদে না এসে উপায়ই বা কী বলুন!
বিপদ! কিসের বিপদ হে?
আজ্ঞে সেই কথাটাই বলতে আসা। মাঝরাতে চেঁচামেচি শুনে বাদলা মাথায় করে ছুটে এসেছি। আমাদের শহিদখুডোর শরীরটা বড্ড খারাপ। এখন তখন অবস্থা, এই যাব কি সেই যাব, একেবারে ধড়ফড় করছেন।
বলো কী? কই কিছু টের পাইনি তো!
আজ্ঞে উঠোনের ওপাশের ঘরে মেলা লোক জড়ো হয়ে গেছে, আপনি জামাইমানুষ বলে শাশুড়িঠাকুরণ খবর দিতে লজ্জা পাচ্ছেন, তা আমি বললুম, সে কি কথা! জামাই হল আপনার জন্য। খবরটা কি তাকে না। দিয়ে পারা যায়? তা এসে দেখি আপনি বড্ড ঘুমোচ্ছেন। মেলা ডাকাডাকিতেও সাড়া পাওয়া গেল না, তাই অগত্যা জানালাটা খুলে ঢুকে পড়েছি।
জামাই ভারি ব্যস্ত হয়ে বউকে ডাকতে লাগল, ওগো, ওঠো, ওঠো, শ্বশুরমশাই যে চললেন।
অ্যাঁ! বলে শহিদলালের মেয়ে উঠে পড়ল, তারপর দুজন হুড়মুড় করে দরজা খুলে বেরিয়ে ঝড়জলেই উঠোন পেরিয়ে ছুটল।
রামপ্রসাদ জুলজুল করে চেয়েছিল জগার দিকে।
জগা তার দিকে চেয়ে বলল, এঃ, চুরি শেখাতে এয়েছেন, দিয়েছিলে তো কাজ ভণ্ডুল করে!
রামপ্রসাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ঠিক আছে রে জগুয়া, তুহার আধা হিস্যা।
১৬-২০. রামপ্রসাদ আর জগা
রামপ্রসাদ আর জগা চটপট মালপত্র হাতিয়ে নিয়ে বেরোতে যাবে। এমন সময় রামপ্রসাদ বলে উঠল, “আরে ভাই, হামারা জুতি কাঁহা গিয়া?”
জগা বলল, “তখন থেকে জুতো-জুতো করে চেঁচিয়ে মরছে দ্যাখো! কেমন চোর তুমি যে জুতো খুলে চুরি করতে ঢোকো? চুরি তো আর পুজো আচ্চা নয় যে জুতো খুলতে হবে!”
“তু দো দিনকা ছোঁকরা, তু কুছু জানিস না। হামারা নাগরা জুতির এইসান আওয়াজ হয় কি মুর্দা ভি উঠকে বৈঠেগা, তাই লিয়ে জুতি খুলকে ঢুকতে হয়।”