তিনি ইংরেজিতে প্রশ্ন করলেন, “তোমার নাম কী?”
“পানচো।”
“তুমি চি চেং-কে চেনো?”
“আমিই চি চেং।”
“তুমি ওয়াংকে চেনো?”
“ওয়াং আমার স্রষ্টা।” বাবুরামের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি হাসলেন। ঠাকুরের দয়ায় তিনি ওয়াং-এর সেই হারানো চি চেং-কে ফিরে পেলেন তা হলে! কী আশ্চর্য যোগায়োগ!
“গদাইবাবুর বাড়িতে যেসব অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছিল সেগুলো কে করত?”
“আমি করতাম।”
“কেন?”
“দুটো কারণে। ওসব করলে আমাকে নিয়ে হইচই হবে, পাবলিসিটি হবে এবং ডক্টর ওয়াং টের পাবেন আমি কোথায় আছি। দু’ নম্বর কারণ, ডক্টর ওয়াং সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে যদি ওরা তাঁকে খবর দেয় সেই জন্য হংকং টিভির প্রোগ্রাম ট্যাপ করেছিলাম। কিন্তু ও লোকগুলো বোকা। বুঝতে পারেনি।”
“তুমি এন বি সি’র প্রোগ্রামও ট্যাপ করেছ। কেন?”
“এন বি সি’তে বনির ছবি দেখানো হয়েছিল।”
বাবুরাম চমকে উঠে বলল, “তুমি বনির কথা জানো?”
“জানি। ডক্টর ওয়াং বনি সম্পর্কে আমার ভিতরে কিছু ইনফরমেশন রেকর্ড করে রেখেছিলেন।”
“এইসব প্রোগ্রাম তুমি কী উপায়ে ট্যাপ করো?”
“খুব সোজা। আমি উপগ্রহ থেকে প্রোগ্রাম চুরি করি। আমার ভিতরে অনেক শক্তি, অফুরন্ত শক্তি।”
“তুমি বনি সম্পর্কে কী জানো?”
“তুমি যতটুকু জানো তার বেশি নয়।”
“আমি যা জানি তা তুমি কী করে জানতে পারছ?”
“আমি তোমার মগজ থেকে সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছি।”
“সর্বনাশ।”
“ভয়ের কিছু নেই। আমি ভালমানুষ।”
“ধন্যবাদ। বনি সম্পর্কে তোমার সিদ্ধান্ত কী?”
“ওর কোনও চিকিৎসা করা উচিত নয়।”
“ওকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখব?”
“বনির মগজের মধ্যে একটা মাইক্রোচিপ রয়েছে। খুব ছোট।”
“ঠিক কোথায় মাইক্রোচিপটা রয়েছে?”
“মেডুলা ওবলংগাটায়। খুব সেনসিটিভ জায়গা।”
“অপারেশন করা কি সম্ভব?”
“না।”
“তা হলে?”
“বনিকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
বাবুরাম বনিকে নিয়ে এলেন। বাড়ির সবাইকে বললেন, “তিনি একটা জরুরি কাজ করছেন, কেউ যেন বিরক্ত না করে।
বনিকে চি চেং-এর সামনে একটা টেবিলে শুইয়ে দিলেন বাবুরাম। বনির চোখের মণি অত্যন্ত দ্রুত রং পালটাতে লাগল। কখনও লাল, কখনও নীল, কখনও সবুজ, কখনও গোলাপি।
চি চেং যেন দ্বিধায় পড়ে গেল। ডিসপ্লে স্ক্রিনে অনেকগুলো দুবোধ সংকেতবার্তা ফুটে উঠতে লাগল, যার অর্থ বাবুরাম জানেন না। তবে তাঁর কেন যেন মনে হচ্ছিল, ডিসপ্লে স্ক্রিনে দুটো বিরোধী কমপিউটারে একটা লড়াই ঘটে যাচ্ছে। প্রায় আধঘণ্টা এরকম চলল।
এর পর ডিসপ্লে বোর্ডে যে কথাটা ফুটে উঠল তা অবিশ্বাস্য। বাবুরাম সবিস্ময়ে হাঁ করে চেয়ে দেখলেন বোর্ডে একটা ছোট্ট বাক্য ফুটে উঠেছে, আমি বনি।
বাবুরাম বনির দিকে চেয়ে দেখলেন। বনি স্থির চোখে তাঁকে দেখছে। ঠোঁটে কি একটু হাসির ছোঁয়া?
বাবুরাম টিভি স্ক্রিনের দিকে চেয়ে দেখলেন, নতুন বাক্য এল, আমি চি চেং-কে দখল করেছি।
বাবুরাম অতি কষ্টে নিজেকে সামলালেন। মাত্র ছ’মাস বয়সের বনি কী করে এইসব কাণ্ড ঘটাচ্ছে? গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে বাবুরাম বললেন, “বনি, আমি তোমার বাবা।”
“না। আমার বাবা নেই, মা নেই।”
“তবে তুমি কে?”
“আমি শুধু বনি।”
“তোমার স্রষ্টা কে?”
“ডক্টর লিভিংস্টোন।”
“সে তোমার কাছে কী চায়?”
“সে আমাকে চায়।”
“তুমি কি তার কাছে যাবে?”
“যাব। ভীষণ দরকার।”
“কী দরকার?”
“তার সঙ্গে দেখা হওয়া দরকার।”
“লিভিংস্টোন কীরকম লোক?”
“ছ’ ফুট লম্বা, ভাল স্বাস্থ্য, বয়স পঞ্চান্ন, দুরন্ত মাথা।”
“তুমি কি জানো বনি, লিভিংস্টোন একটা দাস সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চাইছে?”
“হতে পারে। হয়তো তাই।”
“কীভাবে তোমার মাথায় মাইক্রোচিপ ঢোকানো হয়েছিল তুমি জানো?”
“জটিল পদ্ধতিতে। নাভির ভিতর দিয়ে সরু ক্যাথেডর ঢুকিয়ে। মাইক্রোসার্জারি। অন্তত দু’ দিন সময় লাগে।”
“বুঝেছি বনি। তোমার বয়স খুব কম, কিন্তু তবু তুমি চমৎকার বয়স্ক মানুষের মতো তথ্য দিচ্ছ, এটা কী করে সম্ভব হচ্ছে?”
“আমার মগজের সব কোষ জাগ্রত।”
“তোমার শরীর অসাড় কেন?”
“চিপটা ঠিকমতো বসেনি।”
“আমরা চিপটা বের করতে চাই বনি। আমরা তোমাকে সন্তান হিসেবে ফিরে পেতে চাই।”
“সম্ভব নয়। মাইক্রোচিপটা আমার জৈবী সংস্থানের সঙ্গে মিশে গেছে।”
“যদি ওটা অকেজো করতে চাই তা হলে কী করতে হবে?”
“মাদার কমপিউটারকে ধ্বংস করা ছাড়া সম্ভব নয়। আমার মগজের মাইক্রোচিপ মাদার কমপিউটারের সঙ্গে স্থায়ীভাবে টিউন করা।”
“সেটা কোথায় আছে?”
“ক্লিনিকে। বেসমেন্টে।”
“ক্লিনিক মানে কি লিভিংস্টোনের ক্লিনিক?”
“হ্যাঁ। পোর্টল্যাণ্ডে।”
“এ-ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই?”
“না।”
“মাইক্রোচিপটা যদি অকেজো করে দেওয়া যায় তা হলে কী হবে? তোমাকে কি আমরা ফিরে পাব বনি?”
“বলা কঠিন।”
“তুমি মরে যাবে না তো?”
“যেতে পারি।”
“তোমাকে আমরা ভীষণ ভালবাসি বনি। তুমি কি সেটা জানো?”
“ভালবাসা! হতে পারে।”
“তোমাকে বাঁচতেই হবে বনি। তুমি ভাল করে ভেবে দ্যাখো, মাদার কমপিউটারকে ধ্বংস করলে তোমার কোনও ক্ষতি হবে কি না।”
“আমি ঠিক জানি না। তবে কাজটা বিপজ্জনক।”
“কমপিউটারে কতজন শিশুকে টিউন করা হয়েছে?”
“বত্রিশজন। তিন শো তেত্রিশজন এখনও মাতৃগর্ভে আছে।”
“তুমি এ-তথ্য কী করে জানলে?”
“প্রথম লটের সব মাইক্রোচিপই একরকম। আমি সংখ্যাটা জানি।”
“আমি তোমার সাহায্য চাই বনি। মাদার কমপিউটার ধ্বংস করতে হলে কী করতে হবে, তা আমি জানি না।”