মনরো তিনটার সময় বেরুল অফিস থেকে। বাড়ি গিয়ে দেখবে বোতলের লেবেলে কী নির্দেশ আছে। মনরো দেখল ওতে লেখা: ওহ্, বয়, গ্লোরিয়ার সঙ্গে ডেট। তিনটে ক্যাপসুল খাও।
সন্ধেটা কাটল চমৎকার। মনরো এবং গ্লোরিয়ার যেন জন্মই হয়েছে একে অন্যের জন্য। ওদের রুচিবোধে কী অপূর্ব মিল! ওরা একই বিষয় নিয়ে হেসে কুটিপাটি হলো, অফিসের লোকজন সম্পর্কে দু’জনের ধারণায় কোনও ব্যবধান নেই, দু’জনেরই অপারেশন করে ফেলে দেয়া হয়েছে টনসিল | গ্লোরিয়া ক্ষুধার্ত মানুষ পছন্দ করে: আর মনরো তার খিদে মেটানোর জন্য সর্বোত্তম পুরুষ।
.
কিন্তু আজ রাতে উদ্বেগ বোধ করছে মনরো। লাঞ্চ ওয়াগনের লোকটার ঝাড়িতে মেজাজ বিগড়ে যায়নি ওর, বরং ভয় লাগছে। সবাই জানে ভিটামিন A চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করে। কিন্তু সবকিছুরই একটা সীমা আছে। মনরো অন্ধকারে হাঁটছে। রাস্তার নুড়ি পাথরে লাথি কষাচ্ছে। নুড়ি পাথর, কাগজের টুকরো ছোটখাট এ সব জিনিস আঁধারেও আশ্চর্য পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে সে। হঠাৎ ওর চোখের সামনে ধোঁয়া উড়তে লাগল। তারপর হাজির হয়ে গেল হুড়কোবিহীন একটি দরজা। খুলে গেল কপাট। ক্ষুদ্রকায় একটি মানুষের পরিচিত শারীরিক কাঠামো ফুটে উঠল। পিতলের একটি পাত্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। পাত্রের নীচে ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছে।
সরাসরি কাজের কথায় চলে এল মনরো। ‘দেখুন মি. …আ… আমি চাই না আপনি আমাকে অকৃতজ্ঞ ভাবুন। আমি জানি আপনি আপনার ইয়ে নিয়ে খুব ব্যস্ত আছেন…তবে হলো কী…’
‘আমি মোটেই ব্যস্ত নই,’ স্ফূর্তির গলায় বলল বেঁটে লোকটি। ‘তোমাকে সানন্দে সাহায্য করব। দেখতেই পাচ্ছ এটা একটা অসাধারণ নতুন প্রজেক্ট। জাদুবিদ্যায় রীতিমত বিপ্লব ঘটাতে চলেছি আমরা। গত পঞ্চাশ মিলিয়ন বছরেও ওরা কিছুই শিখতে পারেনি। এখনও থোড়-বড়ি-খাড়া এবং খাড়া- বড়ি থোড় টাইপের ম্যাজিকের জগতে পড়ে আছে। নাহ্, আমাদের সংস্কার- সাধন করতেই হবে। আর ভিটামিন দিয়ে আমি আমার গবেষণা শুরু করেছি। A. ভিটামিন দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য, B ভিটামিন নার্ভের শক্তি বাড়ায়, সি ভিটামিন ব্যবহারে সেরে যায় দাঁতের সমস্ত ক্ষত, D ভিটামিন মজবুত করে তোলে শরীরের হাড়-আর বাকিগুলোর কথা তো তুমি জানই। তুমি ভিটামিন নিতে এসেছ, নিয়ে যাও। একদিন বিশ্বের প্রতিটি স্কুল ছাত্র তোমাকে ভিটামিনের জাদুর অগ্রদূত হিসেবে জানবে।’
‘কিন্তু দেখুন,’ মরিয়া গলায় বলল মনরো, ‘আমি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি দেখতে পাচ্ছি। যে কারণে লোকজনের চোখে পড়ে যাচ্ছি। অন্ধকারেও সবকিছু দেখার খায়েশ আমার নেই। জাদুকর হওয়ার কোনও ইচ্ছেও আমার নেই। ভিটামিন A-টা আমার ওষুধের তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায় না?’
মনরোর মনে হলো লোকটা যেন রাগে তার খুদে মুঠো পাকিয়েছে ‘সেক্ষেত্রে,’ বলল বামন জাদুকর, ‘আমি ভিটামিন A বাদ দিয়ে অন্য ভিটামিনগুলোর ডোজ বাড়িয়ে দিচ্ছি। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। নতুন প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাও’- আবার শূন্য থেকে উদয় হলো বোতল, ‘—এবং সুখি মানুষ হও।
আবার রাস্তায় একা মনরো। ডানে-বামে তাকাল। খুদে মানুষ কিংবা বাড়ি কিছুই চোখে পড়ল না। ঘন হয়ে উঠছে কুয়াশা। মনরো দ্রুত পা চালাল। নিজের আস্তানায় ফিরে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল ওপরে, ঢুকল ঘরে। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। তবে তার আগে দুটো ক্যাপসুল খেয়ে নিতে ভুলল না।
ওই হপ্তার শেষের দিকে, ভিটামিন পিলের নিয়মিত ডায়েট চালিয়ে যাওয়ার পরে, মনরো সিদ্ধান্ত নিল গ্লোরিয়ার সঙ্গে তার এনগেজমেন্ট দ্রুত সেরে ফেলা দরকার। গ্লোরিয়া লোকজনকে বলে বেড়াতে লাগল প্রথম প্রথম মনরোকে সে পাত্তা না দিলেও আজকাল সে মনরো ছাড়া কিছুই বোঝে না। মনরোর সবকিছুই তার ভাল লাগে। তার আচার আচরণ, খিদে…সবকিছু।
শুক্রবারটা শুরু হলো বাজে ভাবে। মিসেস হেঞ্চ মনরোকে পরিষ্কার বলে দিলেন মনরো তাঁকে যে ভাড়া দেয় তা দিয়ে তার রাক্ষুসে ক্ষুধা মেটানো সম্ভব নয়। মনরোর জন্য খাবার কিনতে কিনতে তিনি নাকি ফতুর হয়ে যাচ্ছেন। হয় মনরোকে ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে নতুবা ছাড়তে হবে ঘর।
মনরো আশ্বাস দিল ব্যাপারটি ভেবে দেখবে।
সেদিন রিকেলে প্রচণ্ড খিদে পেতে লাগল মনরোর। সে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর লাঞ্চ কাউন্টারে গেল। গ্লোরিয়া তার দিকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে দেখেও না দেখার ভান করল। এমন খিদে জীবনেও লাগেনি তার
সন্ধ্যাবেলা একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকল মনরো পেটে খিদের আগুন নিয়ে। রেস্টুরেন্টের প্রায় সমস্ত খাবার সে একাই সাবাড় করল। গ্লোরিয়ার অন্ধকার মুখে আরও আঁধার ঘনাল। সে মনরোকে নিয়ে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরল। তবে পথে প্রেমিকের সঙ্গে একটি কথাও বলল না। ঘরে ঢুকেই কিচেনে ছুটল মনরো। চোখের পলকে এক বাক্স বিস্কিট শেষ করল সে, গিলল এক বোতল কেচাপ-কিন্তু এখনও অতৃপ্ত মনরো ফিরে এল লিভিংরুমে।
অপূর্ব সুন্দর একটি নীল পোশাক পরে আধশোয়া অবস্থায় কাউচে বসে আছে গ্লোরিয়া। খুবই সুন্দর লাগছে ওকে। এত সুন্দর, যে কেউ ওকে দেখলে খিদের কথা ভুলে যাবে। গ্লোরিয়ার দিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকাল মনরো।