.
মনরোর হাতে বাদামী বোতল। তাকে হতবুদ্ধি লাগছে। রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে আছে ও। অথচ একটু আগেও একটি ঘরে ছিল মনরো। ধোঁয়া উড়তে দেখেছে। কিন্তু সত্যি কি ধোঁয়া দেখেছে ও? কুয়াশা পাক খাচ্ছে রাস্তায়। কুয়াশাকে ধোঁয়া ভাবেনি তো? আর বাড়িটাই বা গেল কোথায়? পুরোটাই যদি ওর অনুর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা হয়ে থাকে তা হলে হাতে ক্যাপসুলের এ বোতল এল কোত্থেকে? শ্রাগ করল মনরো, ঘুরল, বোতল নিয়ে ফিরে এল বোর্ডিং হাউজে।
নিজের ঘরে ঢুকল মনরো, মুঠোয় শক্ত করে ধরা বাদামী বোতল। সাবধানে আটকে দিল দরজা। কাপড় খুলতে লাগল। শার্ট খুলতেই শীতল বাতাস ঝাপটা দিয়ে গেল ওকে। নাকের ভেতরটা সুড়সুড় করে উঠল। হ্যাঁ- আ আ চ্চো! হাঁচি দিল মনরো। হাঁচির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল মাথা ব্যথা। বোতলের দিকে তাকাল মনরো। বোতলের গায়ে একটি লেবেল লাগানো। লেবেলে লেখা: এখুনি দুটো ক্যাপসুল খেয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ো।
বোতলের ক্যাপ খুলল মনরো, তালুতে ফেলল দুটো চকচকে ছোট ক্যাপসুল। এক ঢোক পানি দিয়ে পেটে চালান করে দিল ক্যাপসুল জোড়া, তারপর শুয়ে পড়ল বিছানায়। শুয়ে শুয়ে কল্পনা করল পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতা তার হাতে চলে এসেছে এবং সে ইচ্ছে করলেই যে কাউকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে মেরে ফেলতে পারছে এবং মেরিলিন মনরোর সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেছে। গত রাতটাও যার প্রায় বিনিদ্র কেটেছে, সেই মনরো আজ বালিশে মাথা ঠেকানোর ‘এক মিনিটের মধ্যে তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে।
পরদিন সকাল আটটায় ঘুম ভাঙল মনরোর। সাধারণত ঘুম ভাঙার পরই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সর্দিতে বোজা নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারে না বলে। তবে আজ কী আশ্চর্য! নিঃশ্বাস নিতে মোটেই কষ্ট হচ্ছে না তার। নাকে একটুও সর্দি নেই! মাথাটাও ঝিমঝিম করছে না। ড্রেসারের ওপরে রাখা বোতলে চোখ চলে গেল মনরোর। লেবেলটা আছে এখনও। তবে নতুন লেখা ফুটে আছে ওতে: দেখলে তো? আরও ক্যাপসুল প্রয়োজন হবার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করো।
বোতলটি উল্টেপাল্টে দেখল মনরো। বোতলের গায়ে কোথাও নির্মাতা বা প্রতিষ্ঠান কিংবা এতে কী ধরনের ওষুধ আছে তা সম্পর্কে কিছুই লেখা নেই।
গোসল সেরে নিল মনরো। কাপড় পরে নেমে এল নীচে, ডাইনিংরুমে নাস্তা খেতে। নাস্তায় সে শুধু দুটো শুকনো আলু বোখারা খায়। আর কিছু না। আলু বোখারা দুটো দ্রুত সাবাড় করে ফেলল মনরো। এমন সময় প্লেটে গরম বিস্কিট নিয়ে হাজির হলেন বাড়িউলি মিসেস হেঞ্চ। একটু ইতস্তত করে বাড়িউলির কাছে বিস্কিট খেতে চাইল মনরো।
‘কেন, মি. ফিদারস্টোনহাগ,’ বললেন মিসেস হেঞ্চ, বিস্কিট আপনার পেটে যে সহ্য হবে না তা তো জানেনই। জেনেশুনে বিষ পান করতে চাইছেন যে!’
‘মিসেস হেঞ্চ,’ গলায় গাম্ভীর্য ফোটাল মনরো, ‘সারা দিন যে মানুষটিকে কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তার শুধু দুটো শুকনো আলুবোখারা খেলে চলে না।’ সে পরপর দুটো বিস্কিট খেল। তারপর একে একে পেটে চালান করল আপেল, কলা এবং এক জোড়া বেকন।
দিনটি কেটে যেতে লাগল দ্রুত। বেশ চমৎকার একটি দিন। জর্ডান অপটিকাল কোম্পানির প্রেসিডেন্ট মি. জর্ডান মনরোর কাজের গতির বেশ প্রশংসা করলেন। সে অত্যন্ত দ্রুত তৈরি করে ফেলল বুক কীপিং শিট মনরো লক্ষ করল মি. জর্ডানের সেক্রেটারি গ্লোরিয়া রিংগল, যে কিনা মনরোর দিকে ভুলেও তাকায় না, আজ বেশ কয়েকবার তাকে ফিরে দেখল।
ওই রাতে ঘুমাবার আগে বোতলের লেবেল পড়ল মনরো। লেবেলে লেখা: তুমি কি ক্লান্ত এবং তোমার কর্মক্ষমতা কি হ্রাস পেয়েছে? অন্যরা যখন সেরা চাকরি এবং সুন্দরী মেয়েগুলোকে বগলদাবা করে নিয়ে যাচ্ছে তুমি কি তখনও বোকার মত মাটিতে পায়ের নখ খুঁড়ছ? তোমাকে আর হতাশ হতে হবে না, মনরো। যাও। এখুনি দুটো ক্যাপসুল খেয়ে ফেলো।
মনরো দুটো ক্যাপসুল গিলল।
সকাল। রোদ চমকাচ্ছে সূর্য। মনরো লাফ মেরে নামল বিছানা থেকে। হাত পা টান টান করে ভরাট গলায় গান ধরল। শেভ করার সময় লক্ষ করল তার দাড়ি আগের চেয়ে ঘন হয়ে উঠেছে। ত্বকের রঙে সোনালি ছাপ। আর তার চোখ-আহ্! কী অন্তর্ভেদী চাউনি চোখে। সে কোথায় যেন পড়েছে ড্রাইভাররা কাঁচা গাজর খায় যাতে রাতের অন্ধকারে গাড়ি চালাতে সমস্যা না হয়। কাল রাতে মনরো লক্ষ করেছে সে অন্ধকারেও খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের বড় বড় লেখাগুলো পড়তে পারছে। সত্যি, দিন দিন দারুণ উন্নতি হচ্ছে মনরো ফিদারস্টোনহাগের।
সে নাস্তা সারল পাঁচটি বিস্কিট এবং তিনটি ডিম দিয়ে। লক্ষ করল কৌতূহল নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন মিসেস হেঞ্চ।
অফিসে মনরো অ্যাকাউন্টিং চার্টের কাজ সারল অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সাড়ে দশটা নাগাদ আবার খিদে পেয়ে গেল ওর। লাঞ্চ কাউন্টারে গিয়ে বসল এক গ্লাস দুধ খেতে। পাশের টুলটা দখল করল গ্লোরিয়া রিংগল। মিস রিংগলকে মনে মনে ভালবাসে মনরো। যদিও সাহস করে কথাটা প্রকাশ করা হয়নি।
মনরো মিস রিংগলের দিকে হাসি মুখে ফিরল। ‘গ্লোরিয়া, প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল সে, ‘আজ রাতে আমার সঙ্গে ডিনার করবে?’
‘কেন নয়, মি. ফিদারস্টোনহাগ,’ হাসি ফিরিয়ে দিল সুন্দরী গ্লোরিয়া। আপনার সঙ্গে ডিনার আমি উপভোগ করব। বলুন কোথায় যাবেন?’