দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডক্টর। ‘বেচারা ভিনগ্রহবাসী। স্রেফ নিজের গ্রহে ফিরে যেতে চেয়েছিল সে-কিন্তু পারল না। আমি কয়েক মুহূর্তের জন্যে ওর নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছিলাম বলে রক্ষা কয়েকটা শব্দও উচ্চারণ করার সুযোগ পেলাম। তোমাকে ধন্যবাদ কথাগুলো বুঝতে পারার জন্যে-স্মৃতি মনে পড়তে শিউরে উঠলেন তিনি-’আমিও ওর মনের মধ্যে ছিলাম। ও যা জানত সবই আমার জানা হয়ে গিয়েছিল। সে এক লম্বা গল্প। কীভাবে সে হোস্ট ব্যবহার করত, কী উদ্দেশে ইত্যাদি সব।’
‘কোত্থেকে এসেছিল ওটা-সৌরজগতের কোনও গ্রহ থেকে?’
‘না, বহু দূরের নক্ষত্রের এক গ্রহ থেকে। সেখানে পৌছুবার কথা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারব না। সে গ্রহের কথা তুমি শুনতে চাও, শিলা?’
শিলা রহমানের চেহারা দেখেই বোঝা গেল সে কত আগ্রহ নিয়ে আবরারের গল্প শুনছে, হ্যাঁ, বলার দরকার হলো না।
মৃদু গলায় বলে যেতে লাগলেন আবরার। ‘সে গ্রহের বিজ্ঞান আমাদের কাছে অচেনা। আমরা কল্পনাও করতে পারব না সেই বিজ্ঞান নিয়ে। তবে আমি দূর গ্রহে যাবার স্বপ্ন দেখি, শিলা। স্যাটেলাইট নিয়ে অনেক বড় বড় কাজ করতে চাই। সে সব কাজে তোমার মত একজন মানুষ বড় প্রয়োজন, শিলা, তুমি আসবে আমার সাথে? তোমাকে নিয়ে আমি অজানা গ্রহ আবিষ্কার করব। হয়তো যাব মঙ্গল বা শুক্রগ্রহে, হয়তো মনুষ্য বসবাসের গ্রহও আমরা খুঁজে পাব এক সময়। বলো তুমি যাবে আমার সঙ্গে?’
অভিভূতের মত মাথা দোলাল শিলা। ডক্টর আবরারকে সে বিশ্বাস করে, এরকম একজন মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে তার ভালই লাগবে। সে শুধু অস্ফুটে বলল, ‘যাব।’
হাসিতে উদ্ভাসিত হলো আবরারের চেহারা। ইতিমধ্যে তাঁর বাঁধন খুলে দেয়া হয়েছে। তিনি একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন শিলার দিকে, বললেন, ‘তা হলে ওই কথাই রইল, শিলা।’
আবরারের হাতটা নিজের নরম হাতে নিয়ে ছোট্ট করে মাথা দোলাল শিলা রহমান। মিষ্টি হেসে বলল, ‘জ্বী, ওই কথাই রইল।’
আর কিছু বললেন না মি. সি. আর. আবরার। হাত-পা টানটান করে শুয়ে পড়লেন। প্রায় সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লেন। ঠোঁটের কোনায় মৃদু হাসি।
***