কাজেই, ভিনগ্রহের খুনী অবাক হয়ে গিয়েছিল শিলাকে একা শটগান হাতে বেরিয়ে আসতে দেখে। মহিলাকে লক্ষ্য করে শকুনটাকে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করে সে, তবে শিলা দ্রুত ঘরে চলে যাওয়ায় টার্গেট মিস হয়ে যায়। শকুনটাকে মেরে ফেলে ভিনগ্রহের হন্তারক আবার ফিরে এসেছে ‘নিজের খোলসে।
সে খুবই অবাক হয়েছে তার চূড়ান্ত হোস্ট আবরারকে দড়ি বাঁধা অবস্থায় ঘুমাতে দেখে। ঘুমাচ্ছে ঠিক আছে। কিন্তু দড়ি বাঁধা অবস্থায় কেন? এখন আবরারের শরীরে ঢুকলেও লাভ হবে না কিছু। বাঁধন না খুলে আবরার কিছুই করতে পারবে না। তবে মেয়েটা নিশ্চয়ই সারা জীবন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে পারবে না। এক সময় দড়ি খুলতেই হবে। সে সিদ্ধান্ত – নিল আবরারের ভেতরে ঢুকবে। যেহেতু আবরার ঘুমাচ্ছে, সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারবে সে, আবরারের একান্ত গোপন ভাবনা এবং স্মৃতিগুলোর কথা জেনে নিতে পারবে ভিনগ্রহের হন্তারক। তারপর মাঝরাতের দিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে আবরারকে। ডক্টরকে দিয়ে এমন স্বাভাবিক আচরণ সে করাবে যাতে মেয়েটার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না জাগে এবং তার বাঁধন খুলে দেয়। তারপর-তারপর কী করবে সেটা পরে দেখা যাবে। আপাতত ডক্টর আবরারকে কব্জা করা যাক।
ভিনগ্রহের হন্তারক ঢুকে পড়ল আবরারের শরীরে।
শরীরের ভেতরে ঢোকার পরপরই কেমন অস্বস্তি হতে লাগল তার। এ পর্যন্ত যতগুলো প্রাণী বা মানুষের মনের ভেতর ঢুকেছে সে, প্রতিটি মন অন্তত এক মুহূর্তের জন্যে হলেও প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে। তবে ওটাকে কোন বাধাই মনে করেনি ভিনগ্রহের হত্যাকারী।
কিন্তু এবারের প্রতিরোধটা যেন অন্যরকম। কয়েক সেকেন্ড ধরে আবরারের মন তার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলল। সে পুরোপুরি দখল করতে পারছে না আবরারকে। হঠাৎ ঝাঁকি খেয়ে উঠে বসলেন আবরার, হাঁপিয়ে উঠে বললেন, ‘সিঁড়ির নীচে। জিনিসটা হলো-’
আর বলতে পারলেন না আবরার। কারণ হন্তারক তাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে।
.
ডক্টর আবরার আবার শুয়ে পড়লেন, বার দুয়েক দম নিলেন গভীর করে, তারপর চোখ মেলে তাকালেন। শিলার সাথে চোখাচোখি হলো তাঁর, কাউচের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সে। স্বাভাবিক গলায় আবরার বললেন; ‘মনে হচ্ছিল দুঃস্বপ্ন দেখছি, শিলা। অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণেই হয়তো। ঘুমের মধ্যে আমি কি কিছু বলেছি?’
কিছুক্ষণ চুপ করে রইল শিলা। তারপর খুব আস্তে বলল, ‘বলেছেন ডক্টর-সত্যি যদি আপনি ডক্টর আবরার হয়ে থাকেন। বলেছেন, ‘সিঁড়ির নীচে-জিনিসটা হলো-’ তারপর চুপ হয়ে গেছেন।
‘গুড লর্ড, শিলা, সব মনে নেই আমার। শুধু মনে পড়ছে একটা ষাঁড় আমাকে গুঁতো দিতে আসছে আর-ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আমি দৌড়াচ্ছিলাম। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলাম সামনের দরজায় সিঁড়ির নীচে-স্বপ্নে আমার হাতে কোনও বন্দুক ছিল না। এখন আমার ঘুম পাচ্ছে। তবে আশা করি এবার আর দুঃস্বপ্ন দেখতে হবে না।’ তিনি চোখ বুজলেন।
‘ড. আবরার, আপনি বলেছিলেন আপনার শত্রু কাছে পিঠেই আছে এবং ঘরের মধ্যে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে। সেটা সিঁড়ির নীচেও হতে, পারে। সামনের দরজায় তিন থাক সিঁড়ি নেমে মিশেছে বারান্দার সাথে। আরও তিন থাক সিঁড়ি রয়েছে পেছনের দরজায়। আমি পরীক্ষা করে দেখব
ওখানে কিছু আছে কিনা।
শিলা, ব্যাপারটা হাস্যকর হবে। স্রেফ একটা দুঃস্বপ্নের কথা শুনে—’
কিন্তু তাঁর কথা শিলার কানে গেল না, সে তক্ষণে সদর দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছে, হাতে শটগান আর পিস্তল। বাইরে আলো আছে। তবু ফ্লাশলাইট নিয়েছে শিলা, সিঁড়ির নীচেটা অন্ধকার হতে পারে।
চারপাশে সতর্ক নজর বোলাল শিলা রহমান। তার ওপর হামলা করার মত কিছু বা কাউকে চোখে পড়ল না। সামনের সিঁড়িতে ফ্লাশলাইটের আলো ফেলল। কিছুই দেখতে পেল না। ঠিক করল আরও খোঁজ চালাবে। বাড়ির পেছন দিকটায় প্রয়োজনে মাটি খুঁড়ে দেখবে। পেছনে চলে এল শিলা
প্রথম দেখায় মনে হলো এদিকের সিঁড়ির নীচে কিছু নেই। তারপর আলো নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে সদ্য বোজানো একটা গর্ত চোখে পড়ে গেল শিলার। ওখানকার মাটি খুঁড়ে আবার গর্তটা বুজিয়ে দিয়েছে কেউ। হ্যাঁ, মানুষের হাতের ছাপও ফুটে আছে নরম মাটিতে।
জামা-কাপড় ময়লা হয়ে যাবে, সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল শিলা, হাত বাড়িয়ে দিল সিঁড়ির নীচে। মাটি এখানে আলগা, সহজেই তোলা গেল। হাতে কী যেন একটা ঠেকল। কচ্ছপের খোলের মত লাগল-কিন্তু কচ্ছপ গর্ত করে না, শক্ত মাটিতে তো নয়ই। টান মেরে ওটাকে তুলে আনল শিলা। কচ্ছপের মত দেখতে জিনিসটা, তবে এটার হাত-পা লেজ কিছুই নেই-এক পলক দেখেই বুঝতে পারল শিলা-এটা ভিনগ্রহবাসী।
গা ঘিনঘিন করে উঠল শিলার, ছুঁড়ে ফেলে দিল জিনিসটা। তারপর খোলার মাঝখানে পিস্তলের নল ঠেকাল এবং গুলি করল।
ঠিক সেই সময়, ঘরের ভেতর যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলেন ড. আবরার। এক দৌড়ে সামনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকল শিলা, হাতে প্রস্তুত্ শটগান।
মেঝের ওপর পড়ে আছেন ডক্টর, তবে হাসছেন তিনি। প্রশান্ত, সুন্দর হাসি। শিলাকে দেখে বললেন, ‘তুমি পেরেছ, শিলা। ভিনগ্রহের হন্তারককে হত্যা করতে পেরেছ। তবে আমার বাঁধন এখনই খুলে দিতে হবে না। কারণ পুরোপুরি বিপদমুক্ত হতে পেরেছি কিনা এখনও জানি না।’