‘কিন্তু–কী ধরনের সাহায্য, আপনি যদি–‘
‘কী ঘটবে না দেখা পর্যন্ত বলা মুশকিল। তবে আপনি শহরে পৌঁছুতে পারলে আর চিন্তা নেই। আপনি আপনার স্টেটমেন্ট নিয়ে হাইয়েস্ট অথরিটির সাথে দেখা করবেন। এফ.বি.আইতে ফোন করবেন। রজার প্রাইস বা বিল কেলারম্যান, যাকেই পান গল্পটা খুলে বলবেন। ওরা দু’জনেই আমার বন্ধু। আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে ওরা। নাম দুটো মনে থাকবে নাকি লিখে দেব?’
‘রজার প্রাইস বা বিল কেলারম্যান। মনে থাকবে। কিন্তু আমি শহরে যেতে পারব তো? আমি কী করে জানব আপনি ঘুম থেকে উঠে রশি মুক্ত হতে চাইবেন না?’
‘ওই কাজ করলে আপনি অবশ্যই জানতে পারবেন। আর যদি না করি তা হলে আপনি শটগান নিয়ে বারান্দায় নেমে পড়বেন। খেয়াল রাখবেন কেউ আপনাকে হামলা করতে আসে কি না। যদি না আসে তা হলে শহরে যাবার সুযোগ নেবেন। আচ্ছা, দাঁড়ান আরেকটা কাজও করতে পারেন। আপনাকে শহরে যাবার ঝুঁকিই নিতে হবে না। কাল সকালে তো শেরিফ আসবেনই। আমাকে ততক্ষণ স্রেফ বেঁধে রাখুন। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। পরিষ্কারভাবে কিছুই চিন্তা করতে পারছি না।’
‘ঠিক আছে, আপনাকে বেঁধে রাখাটাই ভাল।’
‘তা হলে রশি নিয়ে আসুন।’
রান্নাঘরে ঢুকল শিলা রশি আনতে। ড. আবরার লিভিংরুমে ফিরে এলেন। পকেট থেকে পিস্তল বের করে টেবিলে রাখলেন, শটগান থাকল সদর দরজার পাশে, দেয়ালে হেলানো।
‘এসব জিনিস যেন আমার হাতের নাগালে না আসে,’ শিলা কিচেন থেকে রশি নিয়ে ফেরার পর তিনি বললেন, ‘ছুরিটাও। আগে পিছমোড়া করে আমার হাত বাঁধুন, তারপর পা। আর শুনুন, যদি আমি পাগলের মত আচরণ করতে থাকি, কোনও সুযোগ আমাকে দেবেন না। পিস্তলের বাঁট দিয়ে মাথায় বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে ফেলবেন। তবে মেরে ফেলবেন না। আমাকে মেরে ফেললে আমার শত্রু নতুন হোস্টের ওপর ভর করবে। এমনকী হোস্ট হিসেবে সে আপনাকেও বেছে নিতে পারে। যদি শেরিফ কাল সকালে পৌছার আগেই আপনি ঘুমিয়ে পড়েন।
দ্রুত হাতে আবরারকে রশি দিয়ে বাঁধছে শিলা, জিজ্ঞেস করল, ‘শহরে যাবার চেষ্টা করার চেয়ে এটা কি বেশি বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে না?’
‘ঠিক বলতে পারছি না। তবে আপনি এতে বিপদমুক্ত থাকবেন। আর আমার জন্যও এটা আর বিপজ্জনক হয়ে উঠবে না।‘
‘ঠিক আছে। আপনি যা বলেন। বাঁধনটা বেশি টাইট হয়ে গেল?’
‘না, ঠিক আছে। ইচ্ছে করলেও এ বাঁধন খুলতে পারব না। আমি শুয়ে পড়লাম। যতক্ষণ পারি জেগে থাকার চেষ্টা করব।’
কিন্তু পারলেন না আবরার। তিনি শুয়েছেন, শিলা তাঁর পায়ে রশি বেঁধেছে, প্রায় সাথে সাথে গভীর ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলেন ডক্টর আবরার।
শিলা কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল তাঁর পাশে। তারপর শটগানটা নিয়ে দরজা খুলল, তাকাল ওপর পানে। বিশাল এবং কালো আকারের কী যেন ভয়ঙ্কর গতিতে ছুটে এল তার দিকে, আঁতকে উঠল সে, একলাফে পিছিয়ে এল, বন্ধ করে দিল দরজা। ঠিক তখন ভারী কিছু একটা সজোরে ধাক্কা দিতে শুরু করল বন্ধ দরজায়।
.
দরজায় ধাক্কা মারছে একটা শকুন। মরা হরিণটাকে খেতে ব্যস্ত এক দল শকুনের ওটা একটা, ভিনগ্রহের হন্তারক এ মুহূর্তে এই পাখিটাকে তার স্বার্থ হাসিলের জন্যে ব্যবহার করছে।
শিলার আগমনে বিরক্ত হয়েছে সে। তার ইচ্ছে ছিল ষাঁড়টাকে দিয়ে মেয়েটার গাড়িটাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে। কিন্তু আবরার তাকে গুলি করল, সে বুঝতে পারল ডক্টর ষাঁড়টাকে প্রাণে মারতে চাইছে না, পঙ্গু করে ফেলতে চাইছে। তখন নিজের জান বাঁচাতে আবরারের দিকে ছুটে যায় সে, আবরার মারমুখী ষাঁড়ের হাত থেকে বাঁচতে আবার গুলি করতে বাধ্য হয়।
ষাঁড়ের অপমৃত্যুর পরপর হন্তারক বাড়ির পেছন দিকের সিঁড়ির নীচে তার কচ্ছপের খোলে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মহিলা এবং পুরুষটার সমস্ত কথাই সে মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। গাড়িতে বা পায়ে হেঁটে শহরে যাওয়া যে তাদের জন্যে বিপজ্জনক এবং সে কারণে সে চেষ্টাও তারা করেনি বোঝার পর স্বস্তিবোধ করেছে ভিনগ্রহের প্রাণী, স্কুল শিক্ষিকার গাড়িটা আর নষ্ট করার প্রয়োজনবোধ করেনি।
শেরিফ কাল সকালে আসতে পারে শুনেও সে উদ্বিগ্ন হয়নি। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মত ক্ষমতা সে যথেষ্টই রাখে।’ যে-ই আসুক, সে প্রথম সুযোগেই গাড়ি ধ্বংস করে ফেলবে, হত্যা করবে গাড়ির মালিককে। কোনও সাহায্য সে আসতে দেবে না এ বাড়িতে।
সত্যি বাইরে থেকে কোনও সাহায্য আসছে কিনা দেখার জন্যে উড়ন্ত হোস্ট ব্যবহার করল হন্তারক। একটা চিকেন হককে এ কাজে লাগাল সে। রাস্তার ওপর চক্কর দিতে শুরু করল পাখিটা, তীক্ষ্ণ নজর রাখল বাড়ির ওপর। এতে অবশ্য একটা অসুবিধে হলো। উড়ন্ত হোস্টের সাথে ব্যস্ত থাকায় সে তার পারসেপটিভ সেন্স বাড়ির ভেতরে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলো। ফলে ভেতরে কী ঘটছে অনেক সময় জানা হলো না তার। আবরার যখন বলছেন তাঁর পক্ষে আর জেগে থাকা সম্ভব হবে না, ভিনগ্রহের ভয়ঙ্কর ওই সময় আরেকটি ‘ফ্লাইং হোস্ট ব্যবহার করল চারপাশে নজর বুলাতে। সে ধরে নিয়েছে এরপর আর কোনও উড়ন্ত হোস্টের তার প্রয়োজন হবে না, তাই শেষবারের মত রাস্তা-ঘাট চেক করে দেখছিল সে। ফলে আবরার আর শিলার মধ্যে সর্বশেষ কী কথা হলো জানতে পারল না সে, জানা হলো না আবরারকে বেঁধে রাখার ব্যাপারটিও।