‘ইচ্ছে হলে রাখুন। কিন্তু কেন?’
‘কারণ আপনার মানে আমাদের শত্রু ইলেকট্রিসিটি বন্ধ করে দিয়েছে, যে কোনও সময় গ্যাস সাপ্লাইও বন্ধ করে দিতে পারে। আর কফি না খেয়ে আপনি জেগে থাকতে পারবেন না। সে ঠাণ্ডা-গরম, যাই হোক।’
‘মনে হয় এ কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ বুটেন ট্যাঙ্কের বালব্ খুলতে রেঞ্জ লাগবে। আর মানুষ ছাড়া কারও পক্ষে ওটা মোচড় দিয়ে খোলা সম্ভব নয়। সে এখানে মানুষ হোস্ট পাবে কোথায়? তবু সাবধানের মার নেই। আচ্ছা, কফি বানান।’
স্টোভে পানি ঢেলে শিলা ডক্টরের মুখোমুখি বসল।
‘পানি সাপ্লাইয়ের কী অবস্থা? ওটা বন্ধ করে দেয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে? তা হলে কয়েক কলসি পানি ভরে রেখে দিই।’
‘তার দরকার আছে বলে মনে হয় না,’ বললেন আবরার, ‘আমাদের শত্রু পানি তোলার পাম্প নষ্ট করে ফেললেও ক্ষতি নেই। কারণ ভারী ট্যাঙ্কির সে কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। আর ওটা ভরা আছে। দুশো গ্যালনের কম হবে না। আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট।’
কফি খেয়ে বাথরুমে ঢুকলেন আবরার ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে। এতে ঝিমুনির ভাব অনেকটাই কেটে গেল। এই ফাঁকে শিলা নীচ তলার জানালা দিয়ে বাইরের অবস্থা দেখে এল। হরিণটাকে ঘিরে আছে শকুনের দল। ষাঁড়ের কাছে যায়নি, সম্ভবত হরিণের মাংস তাদের কাছে বেশি সুস্বাদু মনে হয়েছে।
গোসল সেরে দু’জনে আবার নানা বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা শুরু করে দিলেন। ডক্টর বললেন, ‘খুব শীঘ্রি কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। এটা আসলে ধৈর্য পরীক্ষার খেলা। আমরা কেউ বেরুবার চেষ্টা করলেই সে হামলা চালাবে। তবে ঘরের ভেতর থেকে কোনও হামলা আসবে বলে মনে হয় না। তা হলে অনেক আগেই ঘটতে পারত। প্রকাণ্ডদেহী যে কোনও জানোয়ার দরজা বা জানালা ভেঙে ঢুকতে পারত।’
‘অবাক লাগছে ভেবে,’ বলল শিলা, ‘আপনার বিরুদ্ধে কোনও মানুষ হোস্ট পাঠায়নি কেন সে?’
‘কারণ আমাকে খুন করা তার উদ্দেশ্য নয়। তবে পাঠালেই ভাল হত। ধাবমান ষাঁড়কে হত্যা ছাড়া ঠ্যাং খোঁড়া করা বিপজ্জনক কাজ, মানুষকে নয়।’
‘ডক্টর, আমি যখন এলাম-আপনি কী করে বুঝলেন আমি আপনার শত্রু নই? আপনি সহজেই আমাকে গুলি করতে পারতেন।’
হেসে উঠলেন আবরার। ‘ওই চিন্তা মাথাতেই আসেনি আমার। যদি তাই হত, তা হলে ধরে নিতাম, শত্রু একবারে একাধিক মানুষ বা প্রাণীকে হোস্ট করার ক্ষমতা রাখে। উঠে দাঁড়ালেন তিনি, দু’দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাই তাড়াতে তাড়াতে বললেন, ‘গোসল করে ভালই হয়েছে। আমি একটু ওপরে গেলাম। এই ফাঁকে আপনি খেয়ে নিন।’
ওরা পালাক্রমে ওপর আর নীচের জানালা দিয়ে বাইরের পরিস্থিতি পরীক্ষা করে দেখছে। তবে ডক্টর শিলাকে বিশ্রাম নিতে বলে একাই রাউন্ড দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। কারণ এটা ঘুম তাড়ানোর ওষুধ হিসেবে কাজ করবে।
সময় বয়ে চলল ধীর গতিতে। দু’জনে কত পরিকল্পনা করল এখান থেকে কেটে পড়ার।; কিন্তু কোনওটাই কারও মনঃপূত হলো না। অবাস্তব এবং বিপজ্জনক ঠেকল সবগুলো প্ল্যান। ইতিমধ্যে ডক্টর আরেকবার ঠাণ্ডা পানিতে গোসল সেরেছেন। তবে এবার গোসল করেও খুব একটা লাভ হলো না। বাথটাবের মধ্যে শুয়ে তিনি তো প্রায় ঘুমিয়েই পড়ছিলেন। তখন একটা বুদ্ধি বের করলেন ডক্টর। শিলাকে পানি ভরা গ্লাস দিয়ে বললেন, শিলা যখনই দেখবে ঘুমে ডক্টরের চক্ষু মুদে আসছে, সাথে সাথে সে পানির ছিটা দেবে।
পরবর্তী এক ঘণ্টায় দু’দু’বার পানির ছিটা দিতে হলো আবরারের মুখে। দু’বারই কথা বলার সময় মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়ছিলেন তিনি। সন্ধ্যা ছ’টার দিকে দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রাত হয়ে যাবে। সন্দেহ হলো অতক্ষণ জেগে থাকতে পারবেন কিনা।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে উঠে দাঁড়ালেন আবরার, বললেন, ‘শিলা, এতে কাজ হবে না। আমাকে পেরেক মারা চেয়ারের ওপর বসিয়ে দিলেও আমি ঘুমিয়ে পড়ব। বিপদ যেহেতু দুজনেরই কাজেই আপনাকে বলে দিচ্ছি কী করতে হবে।
‘এক-এখনও যেটুকু শক্তি আছে শরীরে, পায়ে হেঁটে শহরে পৌঁছুতে পারব আমি-নিদেন কাছের কোনও ফার্ম হাউজে যেখানে টেলিফোন আছে। আমি শটগান নিয়ে যাব, পিস্তলটা আপনার কাছে থাকবে। হয়তো কাজটা করতে পারব আমি। হয়তো বিপদটাকে আমরা বেশি বড় করে দেখছি, শত্রুর সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতাও হয়তো বড় করে দেখছি। যাই হোক, শহরে পৌঁছুতে পারলে আমি আপনাকে রক্ষার ব্যবস্থা করব। স্টেট পুলিশ আসবে শটগান আর টমিগানে সুসজ্জিত হয়ে। আর যদি যেতে না পারি-’
‘না,’ দৃঢ় গলায় বলল শিলা। ‘আপনি গেলে আমিও যাব আপনার সাথে। তবে গাড়িতে। আর আমি গাড়ি ড্রাইভ করব। আর পায়ে হেঁটে যে যেতে চান তাতে কী লাভ হবে?
‘আমি জেগে থাকতে পারব। তা ছাড়া আকাশের দিকে নজর রেখে চলাও সম্ভব হবে। আগেই বলেছি ওপর থেকে কোনও শক্তিশালী পাখি ডাইভ দিয়ে পড়লে আপনার হালকা গাড়ি তা সামাল দিতে পারবে না। আমাদের যে কেউ ওই হামলায় মারা যেতে পারি।’
আর দ্বিতীয় বিকল্প হলো-আমি যদি এ ঘরে বসে ঘুমিয়ে পড়ি আপনি আমাকে বেঁধে রাখবেন। আমি বাঁধা অবস্থায় থাকলে শত্রু আমার ওপর ভর করলেও কোনও ফায়দা করতে পারবে না। যেমন আমাকে দিয়ে আপনার ওপর হামলা করাতে পারবে না। আর আমাকে খুন করতে না পারলে তখন আরেক হোস্টের ওপর নির্ভর করতে সে বাধ্য হবে। এতে সুবিধে হবে আপনি গাড়ি নিয়ে শহরে গিয়ে সাহায্য নিয়ে আসতে পারবেন।